• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

‘জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্র’ নিভৃত গ্রামের এক জ্ঞানমন্দির

কে. এম. সাখাওয়াতে হোসেন, নেত্রকোনা

  ২৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৫৯

একটি জাতির মন মানসিকতার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে গ্রন্থাগার (Library)। এতে বিকশিত হয় জাতির মেধার বিকাশ এবং গড়ে ওঠে সৃষ্টিশীল মন অর্থাৎ সৃজনশীল জাতি হিসাবে গড়ে ওঠার পিছনে গ্রন্থাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু লাইব্রেরি আজও মানুষের চিন্তালব্ধ জ্ঞান ও চেতনাকে সংরক্ষণ করে চলেছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। এক সময় ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে বা যেকোনো যানবাহনে দেখা যেত সময় অতিবাহিত করার সর্বোকৃষ্ট পন্থা ছিল বই পড়া। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক যুগে দেখা যায় ছেলে-মেয়েরা মোবাইল, ল্যাপটপ অর্থাৎ কেউ কেউ মোবাইল ফোনে কথা বলছে, গেইম খেলছে হয়তো বা কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করছে সময়। তরুণ প্রজন্মের কাছে বই পড়ার চর্চা যেন খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে, আধুনিক প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার খারাপ কিছু নয়।

১৯ অক্টোবর ২০১৮। দিনটি ছিল শুক্রবার। বন্ধু সরোজের অনুরোধে তার সঙ্গী হয়ে শহরের আবেষ্টনী পেরিয়ে বহুদূরে নেত্রকোনা জেলার পাহাড়বেষ্টিত সুসঙ্গ দুর্গাপুর উপজেলার গাভিনা গ্রামে এসে পৌঁছামাত্র দেখতে পেলাম জলসিঁড়ি পাঠ কেন্দ্র। পাঠদান কেন্দ্রের গ্রন্থাবলী, বৈচিত্র ও অনেক লোকের সমাহার অর্থাৎ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত অনেক গুণী শিল্পী, কলাকৌশলী, সংগঠক এবং স্থানীয় ও রাজনৈতিক বক্তিবর্গ উপস্থিতি দেখে বিস্মিত হলাম। কতটা ঐকান্তিক আগ্রহ এবং সাধনা থাকলে এইরূপ একটি বিরাট সংখ্যার একত্র সমন্বয় করা সম্ভব, সে শুধু কল্পনার বিষয়। আসন নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মাইক্রোফোনের আওয়াজ শুনে জানলাম এই সমাহারটি ছিল জলিসিঁড়ি পাঠ কেন্দ্রের ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রতিবারের ন্যায় বিভিন্ন গুণীজনকে সম্মাননা প্রদানের এক মহতি উদ্যোগ। দীর্ঘদিন যার ইচ্ছা, মেধা ও ঐকান্তিক শ্রমে এই পাঠদান কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন তার নাম দীপক সরকার। যিনি তার চাচার দেয়া ১৬ শতাংশ ভূমির উপর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় একতালা ছাদের নিচে পর্যায়ক্রমে গড়ে তুলেছেন এই পাঠদান কেন্দ্র। এখানে দীপক সরকারের অর্থের সংকট থাকলেও ইচ্ছা শক্তি ও মনোভাবের কোনও সংকট নেই। যা না হলে এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব হতো না।

বর্ষপূর্তি ও সম্মাননা অনুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় লোকগীতি ও সাধক কালিকা প্রসাদ ভট্টাচার্যকে। সভাপতিত্বে ছিলেন অ্যাডভোকেট মাহেশ সাহা-সভাপতি জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্র, উদ্বোধক হাসান আরিফ-বরেণ্য বাচিকশিল্পী ও সাধারণ সম্পাদক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

তিনি তার বক্তৃতায় কালিকা প্রসাদ সম্পর্কে বলেন আমরা যেন জি-বাংলার কালিকা প্রসাদকে না ভাবি, যিনি আসামে তথা বাংলায় একজন অসাধারণ শিল্প সাধক ছিলেন। পথ খুঁজতে থাকে কি করে লোকগীতি সর্বজনের হয়ে উঠতে পারে। যিনি পারিবারিক সঙ্গীত বিদ্যালয়ের তবলা বাজাতো এবং একসময় পশ্চিমবঙ্গে এসে কোলকাতা শহরে ঠাঁই হলো তার। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পড়াশুনা করার সুযোগ হলো এবং পড়াশুনার পাশাপাশি ভাবতে থাকলো সংগ্রহের থাকা গান কিভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। মূলত তারই সংগ্রহে থাকা লোকগীতি আজ জনপ্রিয়।

তিনি আরও বলেন আমাদেরও কালিকা প্রসাদ দরকার এবং বিশ্বাস করেন ১৬ বছরের অতিক্রম করে যে সংগঠন, কোলাহল থেকে অনেক দূরে, লোভ ও লোভ থেকে অনেক দূরে, সে সংগঠন মরে না বরং সেই সংগঠন অনেক সংগঠনকে বাঁচিয়ে দেবার মতো প্রাণ সঞ্চার করে একদিন এটাই প্রমাণিত হবে।

আরও আলোচক ছিলেন খন্দকার আফসানা আলমগীর দিঠি, লেখক ও গবেষক আলী আহাম্মদ খান আইয়োব, কবি সরোজ মোস্তফা, ইয়াজদানী কোরায়শী কাজল, ছড়াকার ও সংগঠক আলী ইউসুফ, জেলা পরিষদের সদস্য শফিকুল ইসলাম (শফিক),সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ হক।

যাদেরকে সম্মাননা প্রদান করা হয়, রত্নগর্ভা আফরোজা বেগম, রত্নগর্ভা নীলিমা রায়, কবি স্নিগ্ধা বাউল, কবি হোসনে আরা জাহান, কবি পহেলী দে, নাট্যজন ব্যক্তিত্ব সোনিয়া হাসান সুবর্ণা এবং কথাশিল্পী জয়শ্রীকর সরকার। অনুষ্ঠান শেষে জলসিঁড়ি পাঠকেন্দ্রে কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য উন্মোচন করেন ভাস্কর অখিল পাল।

আরও পড়ুন :

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh