পাহাড়ে জুম কাটার ধুম
বান্দরবানের পাহাড়ে চলছে জুমের পাকা ধান কাটার উৎসব। জেলার সাতটি উপজেলার দুর্গম পাহাড়গুলোতে চলতি মৌসুমে রোপিত জুমের পাহাড়ে পেকেছে ধান। খাবার উপযোগী হয়ে পড়েছে মারফাসহ হরেক রকম কৃষিপণ্য। এসব কৃষিপণ্য জুম ক্ষেত থেকে আহরণ করে ক্ষেত-খামার এবং ঘরে তুলতে শুরু করেছেন জুমচাষিরা। এবারও জেলার প্রায় আট হাজার নয়শ’ ৮৮ একর জমিতে জুম(পাহাড়ে চাষাবাদ) চাষ হয়।
ইতোমধ্যে চাষিরা জুম থেকে পাকা ধানসহ রকমারি ফসল কাটতে শুরু করেছে। জেলা শহর থেকে ওয়াইজংশন এবং চিম্বুক এলাকার পাহাড়ে নারী-পুরুষদের জুমের পাকা ধান কাটতে দেখা গেছে। একইসঙ্গে মারফা, বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়স, কাকরোল, কুমড়াসহ বিভিন্ন জুমের ফসল তোলার কাজও শুরু হয়েছে। আর এ বছর পাহাড়ে জুমের মোটামুটি ভালো ফলন হওয়ায় উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে জুমিয়া পরিবারগুলোর মধ্যে।
এদিকে জুমিয়া পরিবারগুলোর মতে, পাহাড়ে বন-জঙ্গল কেটে পুড়ানোর পর একসঙ্গে বহু ফসল চাষকেই বলে জুম চাষ। এটি এই অঞ্চলের পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রথা। সারা বছরে তাদের খাদ্য সংস্থান এই জুম চাষের মাধ্যমেই হয়ে থাকে। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী জুম চাষ করেই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। যে বছর জুমের ভালো ফলন হয় না তখন অনেককেই খাদ্য সংকটে ভুগতে হয়। আর জুম চাষ হচ্ছে ঢালু পাহাড়গুলোতে বিশেষ ধরনের চাষাবাদ।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : প্রতিবন্ধী শিশু ধর্ষণের দায়ে যুবকের যাবজ্জীবন
-------------------------------------------------------
চিম্বুক এলাকার জুমচাষি চিমরাই ম্রো, খামলিং ম্রো ও লারাই ম্রো জানান, এবার জুম ক্ষেতে ফলন ভালো হয়েছে। কারণ চলতি মৌসুমে আবহাওয়া ভালো এবং উৎপাদন পরিবেশ ভালোই ছিল। ধানের পাশাপাশি ছোট মরিচ, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, কুমড়া, তিল ও আদার ফলনও ভালো হয়েছে। তবে তিল ও আদা সংগ্রহ করা যাবে আরও কয়েক মাস পর।
জেলা সদর, লামা, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দুর্গম এলাকার পাহাড়গুলোতে একইভাবে জুমচাষ হয়েছে। এসব জুমেও ভালো ফলন হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, পাহাড়ের বেশির ভাগ মানুষ জুম চাষ নির্ভর। পাহাড়ি জমিতে ফলন কম হলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়। ওইসব অঞ্চলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে জুমের ফলন ভালো হবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এবার বান্দরবান জেলায় আট হাজার নয়শ’ ৮৮ হেক্টর জমিতে জুম চাষ হয়েছে। এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এবং আবহাওয়া ভালো থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গতবছরের চেয়েও বেশি হবে বলে ধারণা করেন তিনি। তবে ফলন ভালো হওয়ায় জুমিয়া পরিবারগুলোর সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
আরও পড়ুন :
জেবি
মন্তব্য করুন