লক্ষ্মীপুরে পল্লী বিদ্যুৎ এর মনগড়া বিলে ক্ষুব্ধ গ্রাহক
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মনগড়া বিলসহ নতুন সংযোগ ফি বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসাজশে গ্রাহক সংযোগের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ চলতি মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে দুই-তিন গুণ বেশি বিদ্যুৎ বিল আদায় করছেন। আবার বিল নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে গ্রাহকদের।
এ অবস্থায় সম্প্রতি জেলা সদর উপজেলা, রামগঞ্জ, রামগতি, কমলনগর উপজেলা ও রায়পুর পৌর শহরসহ প্রতিটি ইউনিয়নের মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।
রায়পুর উপজেলায় আবাসিক এলাকায় ৪৬ হাজার চারশ’ ৭০, বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে চার হাজার আটশ’ ২৬টি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একশ’ ৯১টি, মসজিদ-মন্দিরে আটশ’ ৭৩টি, সেবা কাজে ৬৭টি এবং ইন্ডাস্ট্রিজসহ ফ্যাক্টরিতে তিনটি। এজন্য তাদের অফিসের মাঠপর্যায়ে জনবল রয়েছে ২৬ জন। এরপরও অনেক মিটারের ইউনিট না দেখে কর্মকর্তারা মনগড়া ইউনিট বসিয়ে দেন। এভাবে একই মাসের বিল আদায়ের পর পরবর্তী মাসে নেওয়াসহ মিটার রিডিংয়ের চেয়ে বেশি বিল তৈরি করে বিল আদায়ে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
সম্প্রতি মিটার রিডিংয়ের চেয়ে বেশি বিল তৈরি করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাতেই রোষানলে পড়েন রায়পুর জোনাল অফিসের মিটার রিডার আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, বিল রিডিং বইয়ে উঠানো তার কাজ। কিন্তু গ্রাহক কপি তৈরি তার কাজ নয়। গ্রাহক কপিতে যে বেশি দেখানো হয়েছে তা কম্পিউটারের ভুলের জন্য হয়েছে।
-------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : বড়াইগ্রামে ১২টি ঘর পুড়ে ছাই, ৩৫ লাখ টাকার মতো ক্ষতি
-------------------------------------------------------
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রায়পুর জোনাল অফিসের ইসি সুলতান আহাম্মেদ জানান, কম্পিউটার অপারেটরকে সতর্ক করে নোটিশ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, গত কয়েক মাস ধরে চলছে রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশীর ইউনিয়নের দুই নম্বর ওয়ার্ড সিকদার কান্দি এলাকায় চলছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নতুন সংযোগ দেয়ার কাজ। এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি পৌঁছাতেই পল্লী বিদ্যুতের কয়েকজন কর্মকর্তা পরিদর্শনে যান। সেখানে তারা দ্রুত সংযোগ পেতে স্থানীয় গ্রাম পুলিশ গোলাম হোসেন লাতু ও তার ছেলে শাহাদাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গ্রামবাসীকে পরামর্শ দেন।
এরপর থেকে পল্লী বিদ্যুতের রায়পুর জোনাল শাখা ডিজিএমসহ কর্মকর্তা কর্মচারীর খরচ বাবত একশ’ ৭৩ জন নতুন গ্রাহকের কাছ থেকে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা তুলতে থাকেন লাতু ও তার ছেলে।
নতুন সংযোগে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকারও করেন গ্রাম পুলিশ সদস্য গোলাম হোসেন লাতু ও তার ছেলে শাহাদাত হোসেন।
তারা জানান, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় থাকায় গ্রামের মানুষকে নতুন সংযোগ পেতে সহযোগিতা করছেন তারা।
পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ পেতে আগ্রহী শামছুল সিকদার আরটিভি অনলাইনকে জানান, এ পর্যন্ত তিনি চার হাজার টাকা দিয়েছেন। আরও দুই হাজার টাকা দিতে হবে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
শিল্পী আকতার নামে আরেক গ্রাহক জানান, নতুন সংযোগের জন্য তিনি জমা দিয়েছেন তিন হাজার টাকা। একই কথা জানালেন আরও কয়েকজন। তারা প্রত্যেকেই দেড় থেকে তিন হাজার টাকা জমা দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রায়পুর জোনাল অফিসের ডিজিএম শেখ মানোয়ার মোরশেদ রায়পুরে যোগ দেওয়ার পর থেকে নতুন সংযোগ নিতে দালালের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে খুঁটি, সংযোগ ফি বাবদ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা আদায় করছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ মানোয়ার মোরশেদ। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে এলাকার বদনাম হবে উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ না করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান কবীর আরটিভি অনলাইনকে জানান, নতুন সংযোগের বিনিময়ে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি সমিতির নিয়ম অনুযায়ী তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের দেয়া বিনামূল্যের বিদ্যুৎ সংযোগের বিনিময়ে কেউ অর্থ নিলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। অতিরিক্ত বিল আদায়ের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন :
জেবি
মন্তব্য করুন