ভয়াবহ হুমকির মুখে হালদা
দেশের রুই জাতীয় মাছের একমাত্র প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। বর্তমানে ভরাট, দখল বিভিন্ন শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে এ নদী। কারখানার দূষিত বর্জ্যের কারণে গেলো বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত হালদা নদীর বিভিন্ন জায়গায় মাছ মরে ভেসে উঠেছে। এর মধ্যে ১৫ কেজি ওজনের একটি মা মৃগেলও মারা গেছে। পাশাপাশি চিংড়ী, রুই, কাতলাসহ বিভিন্ন মাছ মরে ভেসে উঠেছে।
তবে আশার কথা হচ্ছে, বৃষ্টিপাত এবং জোয়ার ভাটার কারণে হালদা নদীতে শনিবার ও রোববার কোনো মাছ মরা যায়নি বলে আরটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক মো. মনজুরুল কিবরিয়া।
রোববার থেকে হালদার পানিতে দূষণের পরিমাণ উন্নতি হয়েছে বলে আরটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের নগর অঞ্চলের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : শিবগঞ্জে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক বিক্রেতা নিহত
--------------------------------------------------------
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক মো. মনজুরুল কিবরিয়া আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অক্সিজেন কমার পাশাপাশি নদীর পানিতে অ্যামোনিয়া বহু গুন বেড়ে গেছে। যারা কারণে মাছ মারা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য হালদা পানিতে যে পরিমাণ অক্সিজেন থাকা প্রয়োজন, আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি দূষণের কারণে হালদার পানিতে এখন সেই পরিমাণ অক্সিজেন নেই।
অতিবৃষ্টির সঙ্গে শিল্পকারখানার বর্জ্য, পোলট্রির বর্জ্য এবং গৃহস্থালির বর্জ্য পড়ে হালদা দূষণ করছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিতারা মনে করছেন। নগরীর নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা, অক্সিজেন, বালুছড়া, এবং ফতেয়াবাদের বিভিন্ন শিল্পকারখানার বর্জ্যরে সঙ্গে হালদাপাড়েরর বিভিন্ন পোলট্রি খামারের বর্জ্য এ দূষণের জন্য দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির গবেষক মো. মনজুরুল কিবরিয়া আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আজিমেরঘাট থেকে কায়ারচর পর্যন্ত আমরা সবচেয়ে বেশি দূষণ পেয়েছি। জলজ প্রাণীর জন্য স্বাভাবিক মাত্রায় যেখানে ৫ ডিও থাকার কথা সেখানে নদীর কোনো কোনো এলাকায় তা নেমে দশমিক ৪৪ এ চলে এসেছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর অঞ্চলের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, হালদায় নদীদূষনের প্রমাণ মিলেছে। নদীতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। যার কারণে মাছ মারা যেতে দেখা যায়। বন্যার পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য গিয়ে নদীতে পড়ে এই দূষণ হচ্ছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি।
গেলো বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল হালদা নদীর ১০টি পয়েন্টের পানির নমুনা পরীক্ষা করেন। পরদিন শুক্রবার বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধি দল দূষণের শিকার হালদা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত শাখা খালগুলো পরিদর্শন করেন এবং হালদা নদীর পানির নমুনা পরীক্ষা করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে, নদীর পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা অনেক কমে গেছে। সাধারণত এই নদীর প্রতি লিটার পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে পাঁচ মিলিগ্রাম। কিন্তু হালদা নদীর পানির নমুনা পরীক্ষা শেষে বর্তমানে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কম পাওয়া গেছে। এছাড়া পানিতে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ড্রেজার দিয়ে বালি উত্তোলন, রাবার ড্যাম তৈরিসহ মোট পাঁচটি কারণে হালদা দূষিত হচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্যরে কারণে। বায়েজিদ-অক্সিজেন এলাকার আবাসিক বর্জ্য বামনশাহী খালের মাধ্যমে সরাসরি হালদায় পড়ছে।
এদিকে, হালদা নদী দূষণ ঘটনায় রোববার চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজীদ থানার অক্সিজেন এলাকার ম্যাক পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস বন্ধ করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই কাগজ কলটির বর্জ্য কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে দূষণ ঘটাচ্ছিল বলে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইটিপি না থাকা এবং নদী দূষণ ঘটানোর কারণে ম্যাক পেপার মিলস বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর কার্যালয়ের পরিচালক আজাদুর রহমান।
এছাড়া হালদা নদী এবং এর পাশাপাশি সংযুক্ত সাতটি খাল দূষণমুক্ত করার দাবিতে শনিবার মদুনাঘাটে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়।
উল্লেখ্য, এ বছর হালদা নদী থেকে এবার ২২ হাজার ৬৮০ কেজির বেশি রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশের তাজা ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন :
এসএস
মন্তব্য করুন