• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

প্রবল বর্ষণে প্লাবিত খাগড়াছড়ি, বিদ্যুতবিহীন পুরো শহর

স্টাফ রিপোর্টার, খাগড়াছড়ি

  ১২ জুন ২০১৮, ১৭:১৪

খাগড়াছড়িতে প্রবল বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে জেলা শহরের ৮টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ডুবে গেছে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের ৩ কিলোমিটার সড়কসহ ফসলি ক্ষেত। বন্ধ রয়েছে জেলা শহরের দোকানপাট। বিদ্যুতবিহীন রয়েছে শহরের অনেক এলাকা। ভোগান্তিতে পড়েছে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ।

এদিকে জেলার প্রধান নদীতে ১৫০ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। পানিবন্দিদের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ২০টি আশ্রয় কেন্দ্র।

গেলো রাত ১টা থেকে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের মুসলিমপাড়া, শব্দ মিয়াপাড়া, মাস্টারপাড়া, নারাণখাইয়া, খবং পুড়িয়া, গোলাবাড়ি, গঞ্জপাড়া, ইসলামপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্লাবিত এলাকার পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ২৫ হাজার পরিবার। ভোরে পানি বাড়তে থাকলে নতুন করে এলাকার পাশাপাশি ডুবতে থাকে শহরের কয়েকটি সড়ক ও গ্রাম। বন্ধ হয়ে যায় দূরপাল্লার এবং জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কের যান চলাচল। এতে চরম বিপাকে পড়েছে ঘরমুখী যাত্রীরা।

এছাড়া ইতোমধ্যে প্লাবিত এলাকাগুলোতে খুলে দেয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। অনেকেই সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।

পৌরসভার সচিব পারভীন খন্দকার জানান, পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডই পানিতে ডুবে আছে। সকাল থেকে তাদের উদ্ধারে কাজ করছে পৌরসভা। প্রতিটি এলাকায় খুলে দেয়া হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে এ পর্যন্ত প্রায় ৬ হাজার লোক আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে পৌরসভার পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী দিলীপ কুমার বিশ্বাস জানান, টানা বৃষ্টি ও পানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পৌর এলাকায় চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। ইতোমধ্যে প্রায় ৫-৭ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অতীশ চাকমা বলেন, এই এলাকায় ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে গত রাত থেকেই। ওয়ার্ডের সিঙ্গী নালা, লাতুপাড়া, নারাণখাইয়া, উত্তর খবং পুড়িয়া, দক্ষিণ খবং পুড়িয়া ও ফায়ার ব্রিগেড এলাকা এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। এলাকার পানিবন্দি লোকগুলো আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এলাকায় পৌরসভার চলমান কার্পেটিং রাস্তা ও গাইড ওয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. শাহ আলম বলেন, এই এলাকাটিতে ১০ হাজারেরও বেশি লোক পানিবন্দি। ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে বসবাসের অযোগ্য হয়ে গেছে। এলাকার লোকজনদের মুসলিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মিউনিসিপ্যাল স্কুল, আল আমিন এফ আর স্কুল, শব্দ মিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহাজনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এলাকার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনেক শিশু বৃদ্ধরা পানি বাড়ার কারণে ঘরে আটকা পড়লে রেডক্রিসেন্ট’র কর্মীরা তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়। এছাড়া পানিবন্দি লোকদের জন্য শুকনা খাবারের বিষয়ে পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড (মাস্টারপাড়া) জাফর আহমেদ জানান, টানা বৃষ্টি ও পানির কারণে এলাকার রাস্তা ডুবে গেছে। ধসে পড়েছে গাইড ওয়াল ও বাউন্ডারি ওয়াল। ডুবে গেছে এলাকায় অবস্থিত সড়ক বিভাগ কোয়ার্টার, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অফিসসহ ৪ নং ওয়ার্ডের ১০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মজিদ বলেন, এখানে অনেক পরিবারকে রাতেই রেঁনেসা ক্লাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাগড়াছড়ি আইডিয়াল স্কুলে ২০ পরিবারে বেশি লোক আশ্রয় নিয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, খাগড়াছড়িতে এটিই সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা। এর আগে বন্যা হলেও এতো ভয়াবহতা ছিল না। কেউ কেউ অবাক হয়েছেন জেলাজুড়ে এতো বৃষ্টি ও গ্রাম প্লাবিত হওয়ার ঘটনায়।

খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলম বলেন, রাত থেকেই সকাল পর্যন্ত সবকটি প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। টানা বৃষ্টিতে পৌর এলাকার দুই তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে স্কুল, কলেজ ও বিভিন্ন ক্লাবে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অনেক পরিবারকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। পৌর এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে থাকা লোকজনদের সরিয়ে নিতে পৌরসভার উদ্ধার টিম ও মাইকিং করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পৌরসভার সকল কাউন্সিলরদের সতর্কতার সাথে নিজ নিজ এলাকায় সজাগ থাকার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্লাবিতদের খাবার স্যালাইন, মোমবাতি, এক কেজি চিড়া, গুড় ও ৬ হাজার লোকের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও পানিবন্দি লোকজনদের খোঁজ খবর নিতে পরিদর্শনে বেরিয়েছেন সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এসএস/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পানছড়িতে রাতের আঁধারে করাত কলে আগুন
পাবলিক টয়লেটের সামনে পড়ে ছিলো নবজাতকের মরদেহ
খাগড়াছড়ির সব ব্যাংকে নিরাপত্তা জোরদার
খাগড়াছড়িতে ৪ চোরাই মোটরসাইকেলসহ আটক ২ 
X
Fresh