• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মরণে নয় দখলেই ভয় বেশি!

ইয়াছিন রানা সোহেল, রাঙামাটি

  ১১ জুন ২০১৮, ১৫:৪৭

গেলো বছর রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা এখনো সবাইকে কাদায়। সেসময় ওই দুর্ঘটনায় নিহত হন ১২০ জন। প্রায় দুই শতাধিক লোক আহত ও সহস্রাধিক লোক গৃহহীন হয়ে পরে সেসময়। তবুও এখনো মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের নিচে বসবাস করছে হাজারো মানুষ। তাদের কাছে মরণের থেকে দখলেই ভয় বেশি।

পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত এসব লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য বারবার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে। রোববার বিকেল থেকে ভারি বর্ষণ আর ঝড়ো হাওয়ার কারণে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও গাছ ভেঙে পড়ে। এতে তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধও ছিল। পরে প্রশাসন ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে তা সরিয়ে নেয়।

এদিকে পাহাড়ের ঝুঁকিতে রয়েছে এখনো শত শত লোকজন। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, পৌর এলাকায় ৬০৯টি পরিবার এবং রাঙামাটি জেলায় ৩ হাজার ৩৭৮টি পরিবার পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ আরটিভি অনলাইনকে জানান, জেলা প্রশাসনের জরিপ অনুযায়ী জেলায় ৩ হাজার ৩৭৮টি পরিবার পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে। লোকসংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। এসব লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার জন্য বারবার মাইকিং করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের কাছে ৩০০টি তাবু এসেছে, এসব তাঁবুর কিছু রূপনগরে টাঙানোর কাজ চলছে। সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা এসব তাবু টাঙানোর কাজ করছে। যারা ঝুঁকিতে বসবাস করছে তারা যেন দ্রুত সময়ে এসব তাবুতে আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়াও শহরে ২২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন টিম ঝুঁকি মোকাবেলায় কাজ করছে।

তবে জেলা প্রশাসনের বক্তব্য দ্বিমত পোষণ করে রাঙামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. জামাল উদ্দীন বলেন, শুধু পৌর এলাকার প্রায় দশ থেকে বিশ হাজারের মতো লোক ঝুঁকিতে বসবাস করছে। প্রশাসনের জরিপে তো সংখ্যাটা অত নয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, যখন জরিপ করা হয় তখন উচ্ছেদের ভয়ে লোকজন জরিপে তাদের নাম দিতে চায় না। পৌর এলাকার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিতে বসবাস করে লোকজন।

ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন পাহাড়ের নিচে তারা বসবাস করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশরই একই বক্তব্য, তারা সরে গেলে অন্য কেউ জায়গা দখল করে নিবে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছেন অনেক পরিবার।

গত বছর পাহাড়ধসে ছেলে লিটন দাশ (৩২), পুত্রবধূ চুমকি দাশ (২১) ও একমাত্র নাতি আয়ুশ দাশকে (২) হারিয়েছেন ভেদভেদি সনাতন পাড়ার বাসিন্দা বাসনা দাশ(৫৫)। ঘরটিও সম্পূর্ণ মাটির নিচে চাপা পড়ে। এর পরেও তিনি ফের পাহাড়ের নিচে বসবাস করছেন।

ঝুঁকিতে কেন বসবাস করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাসনা দাশ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমারতো সব হারিয়েছি, হারানোর আর কিছু নেই, এখানে না থাকলে যাব কোথায়? এখান থেকে সরে গেলেতো অন্য কেউ জায়গা দখল করে নিবে।

ভেদভেদীর নতুন পাড়ার জালাল মিয়াও গতবছর পাহাড়ধসে ছেলে আরিফ ও স্ত্রীকে হারান। সহায় সম্বলহীন জালাল মিয়ার অন্যত্র গিয়ে ঘর বাধার সামর্থ্য নেই। তাই জীবনের ঝুঁকি স্বত্বেও এখানে বসবাস করছেন তিনি।

জালাল মিয়া জানান, আবারো যেভাবে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এতে মনের ভেতরে ভয় কাজ করছে। রাতে ভয়-আতঙ্কে ঘুম আসে না। তবুও জীবনের ভয় নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। কোথায় যাব? নিজের ভিটামাটি ছেড়ে কী কেউ যেতে চায়?

দক্ষিণ মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা আজগর আলী। তার ছেলেও মারা গেছে পাহাড়ধসে। কিন্তু এখনো অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তিনি পাহাড়ের নিচেই বসবাস করছেন।

শিমুলতলী এলাকার আলেয়া বেগম, লোকমান হাকিম, নুর আলম, রাসেল, কামরুল হাছান, যুব উন্নয়ন এলাকার কিনামোহন চাকমা, কিনামনি পাড়ার সাধনা চাকমা ও প্রেমতলির জুয়েল চাকমার বাড়িঘরও পাহাড়ধসের ঘটনায় মাটি চাপা পড়েছিল। কিন্তু তাদের সবার একটিই কথা- আমাদেরতো আর সামর্থ্য নেই যে অন্যত্র জায়গা কিনে ঘর বেধে থাকবো। তাই বাধ্য হয়ে এখানেই থাকি। অন্যত্র গেলে জায়গা দখল হয়ে যেতে পারে।

এছাড়াও ঝুঁকিতে রয়েছে চম্পানির মার টিলা, চেঙ্গির মুখ, এসপি অফিস সংলগ্ন ঢাল, মাতৃমঙ্গল এলাকা, কিনারাম পাড়া, স্বর্ণটিলা, রাজমনি পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি, মুসলিম পাড়া, কিনা মোহন ঘোনা, নতুন পাড়া পাহাড়ের ঢাল, শিমুলতলী, রূপনগর এলাকা পাহাড়ের ঢাল, কাঁঠালতলী মসজিদ কলোনি, চম্পকনগর পাহাড়ের ঢাল, আমতাবাগ স্কুলের ঢাল ও জালালাবাদ কলোনি পাহাড়ের ঢাল এলাকা।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তাপপ্রবাহে ‘অতি উচ্চঝুঁকিতে’ বাংলাদেশের শিশুরা: ইউনিসেফ
জমি দখলের চেষ্টা চেয়ারম্যানের, বাবা-ছেলে জেলহাজতে
জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম : শেখ হাসিনা  
সেতু ভেঙে ভোগান্তি, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল  
X
Fresh