• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মেঘনার তীর কয়লায় কালো

মো. আলামিন টিটু, ভৈরব সংবাদদাতা

  ২৮ এপ্রিল ২০১৮, ০৯:৫৭

মেঘনা নদীর উপর দুটি সেতুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা ভৈরবের উদীয়মান পর্যটনশিল্প কয়লার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশন(ডিআরএস)।

প্রভাবশালী মহল সেতু দুটির নিচে, আশপাশের রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংরক্ষিত এলাকা দখল করে কয়লার স্তূপ জমা করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে। এর ফলে চারদিকের সুন্দর সবুজ পরিবেশ কালচে রং ধারণ করছে। সেতু এলাকায় মরে যাচ্ছে সড়কের ঘাসও। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোনো সাড়াশব্দ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : রাতে গ্রেপ্তার রাতেই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত
--------------------------------------------------------

বাংলাদেশ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ স্তূপ করে রাখা কয়লা সরিয়ে নেয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট কয়লা ব্যবসায়ীদের কয়েক দফা নোটিশ করলেও তারা স্থানীয় ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এতে কর্ণপাত করেননি।

স্থানীয়রা জানায়, ভৈরব ও আশুগঞ্জের মধ্যে ‘সৈয়দ নজরুল ইসলাম সেতু’ নির্মাণ হবার পর থেকে ভৈরবে পর্যটনকেন্দ্র বিকশিত হবার পথ সুগম হয়। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা দৃষ্টিনন্দন সেতুগুলো দেখার জন্য দেশের নানান প্রান্ত থেকে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসেন। এছাড়া এখানকার বৈশাখী মেলা সবাইকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে।

ফলে দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও এখানে ভ্রমণ করার জন্য আসেন। স্থানীয়রাও একটা সময় ব্যায়াম করার জন্য সকালে-বিকেলে এখানে আসতেন। ফলে এ স্থানটি সারাবছরই থাকতো কোলাহলময়। এভাবে এ স্থানটি একটি আদর্শ পর্যটনকেন্দ্রের রূপ নিয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে সেই চেনা দৃশ্যটি ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে।

কয়লা একটি উচ্চমাত্রার দাহ্য পদার্থ হওয়ার কারণে যেকোনো সময় তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশনে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এখন আর আগের মতো পর্যটক কিংবা দর্শনার্থীদের ভিড় নেই। সবকিছু কেমন কালচে হয়ে গেছে। আগের সবুজ শ্যামল দৃশ্যের পরিবর্তে চারদিকে শুধু কয়লা আর কয়লার স্তূপ।

বাতাসে ছড়াচ্ছে উৎকট গন্ধ। কয়লার উত্তাপে সবুজ গাছপালাগুলো মরে যাচ্ছে। এরইমধ্যে রেলের বড় দুটি আমগাছ, দুটি কাঁঠালগাছসহ অনেকগুলো গাছ মরে গেছে। কর্তৃপক্ষের শক্তিশালী ভূমিকা না থাকা ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় প্রভাবশালী চক্রটি সড়ক সেতুর লৌহজালের বেষ্টনী ভেঙেও এর ভেতরে প্রবেশ করে কয়লা রাখছে।

ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশন (ডিআরএস)। স্থানীয়দের ধারণা কয়লার উত্তাপের কারণে যেকোনো সময় তিতাস গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউশন রেগুলেটিং স্টেশনে বিস্ফোরণ হতে পারে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও সচেতন মহলের দাবি, দ্রুত সময়ের মধ্যে রেল ও সড়ক সেতু সংলগ্ন সংরক্ষিত এলাকা ও এর আশপাশের সরকারি জমি প্রভাবশালী মহলের দখলদারিত্বের হাত থেকে উদ্ধার করে যেন কয়লার স্তূপ অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়।

এ বিষয়ে ভৈরব পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট ফখরুল আলম আক্কাছ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, শহরের একমাত্র বিনোদন স্পট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মেঘনা নদীর পারের ত্রি-সেতু এলাকাটি। এখানকার দৃশ্য দর্শনার্থী ও পর্যটকদের মুহূর্তেই নজর কাড়ে। কিন্তু কতিপয় কয়লা ব্যবসায়ীদের কারণে এলাকাটি সৌন্দর্য হারাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলের লোকজনসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কাজী ফয়সাল আরটিভি অনলাইনকে জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। যদিও সময়ের ব্যাপার, তারপরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তাছাড়া স্থানটি উদ্ধারে আমরা এরইমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি।

নরসিংদী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান মুঠোফোনে আরটিভি অনলাইনকে বলেন, আমাদের নিয়ন্ত্রিত সংরক্ষিত এলাকাটিতে প্রভাবশালী মহলের কিছু লোকজন কয়লার ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আমরা এরইমধ্যে সংরক্ষিত এলাকাটি উদ্ধার ও কয়লা ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন :

জেবি/এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চোরাই কয়লা আনতে গিয়ে পাথরচাপায় ২ শ্রমিক নিহত
দিনাজপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় কয়লা খনির প্রকৌশলী নিহত
X
Fresh