দুর্ভোগের আরেক নাম বেইলি ব্রিজ
দুর্ভোগের আরেক নাম বেইলি ব্রিজ। আরিচা-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ১২টি বেইলি ব্রিজ। এইসব বেইলি ব্রিজ মাঝে মধ্যেই ভেঙে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর যাত্রীসাধারণ।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আঞ্চলিক মহাসড়কের মানিকগঞ্জ জেলার আরিচা-দৌলতপুর অংশের মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বে আছে মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগ এবং টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর-টাঙ্গাইল এলাকার মেইনটেন্যান্সের দায়িত্বে আছে টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগ।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন : শেকৃবিতে ছাত্রলীগ নেতার হাতে আন্দোলনরত ছাত্রী লাঞ্ছিত
--------------------------------------------------------
মোট ৬০ কিলোমিটার মহাসড়কের ১৯ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ১২টি বেইলি ব্রিজ। টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সাত কিলোমিটার এলাকায় আছে আটটি বেইলি ব্রিজ। টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ৬ কিলোমিটার এলাকায় আছে দুটি এবং মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর ও ঘিওর উপজেলার ৬ কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে দুটি বেইলি ব্রিজ।
গেলো বৃহস্পতিবার (৫ এপ্রিল) এই মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় স্থাপিত বেইলি ব্রিজ এলাকা পরিদর্শন করে এবং ওই এলাকার সাধারণ মানুষ ও গাড়িচালকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন এইসব বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের পাথরবোঝাই ভারী ট্রাক এবং রাতের বেলায় ঢাকাগামী যাত্রীবাহী বাস এই আঞ্চলিক মহাসড়ক ব্যবহার করার ফলে মাঝে মধ্যেই বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং এই মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এছাড়া বেইলি ব্রিজগুলো সরু থাকায় একসঙ্গে দুটি গাড়ি ব্রিজের ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে পারে না। ফলে ব্রিজের ওপর দিয়ে গাড়ি অতিক্রম করার সময় মাঝে মধেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘসময় বেইলি ব্রিজের উভয়পাশে গাড়িগুলোকে আটকে থাকতে হয়।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার তালুকনগর এলাকার ঘোড়ার গাড়ির চালক আক্কাস আলী এবং ইনছান আলী শেখ বলেন, ওই মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশে ১০০টি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু বর্তমানে বড় বড় বাস ও ভারী ট্রাক চলাচল করায় এই মহাসড়কের বেইলি ব্রিজগুলো ভেঙে যাচ্ছে। ঘোড়ার গাড়ির চাকা ওইসব ভাঙা অংশে আটকে পড়ে। ফলে তাদের ঘোড়ার গাড়ি চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার চাষাভাদ্রা গ্রামের কৃষক আতোয়ার আলী আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বেইলি ব্রিজ সরু থাকায় এর ওপর দিয়ে একসঙ্গে দুটি গাড়ি পাশাপাশি চলতে পারে না। ফলে বেইলি ব্রিজ এলাকায় গাড়িগুলোকে ব্রিজ অতিক্রম করতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয় এবং যানজটের সৃষ্টি হয়।
ওই গ্রামের রাজমিস্ত্রী মিন্টু মিয়া ও সুভাষ মোল্লা জানান, বেইলি ব্রিজে মাঝে মাঝে গাড়ি উল্টে যায়। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেকে আহত হয়।
একই উপজেলার টেংড়িপাড়া গ্রামের পিকআপভ্যান চালক আব্দুল হক বলেন, যানজট থাকার কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর অনেক যাত্রীরা ঢাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে টাঙ্গাইল-ঢাকা মহাসড়ক ব্যবহার না করে আরিচা-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল আঞ্চলিক মহাসড়কটি ব্যবহার করছেন। বেইলি ব্রিজ এই লোড নিতে পারছে না।
ওই এলাকার গাড়িচালক শাকিল খান বলেন, বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে লালমনিরহাট জেলার বুড়িমারী থেকে পাথরবোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে বেইলি ব্রিজ ভেঙে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ কারণে মাঝে মধ্যেই ব্রিজ মেরামতের জন্য দীর্ঘ সময়ের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
তারা বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো সড়িয়ে দ্রুত পাকা ব্রিজ স্থাপন করা গেলে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে নির্বিঘ্নে যাত্রীসাধারণ ও পণ্যবোঝাই যানবাহন চলাচল সহজ হবে এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অনেকটা কমে যাবে।
মানিকগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিবুল হক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এই মহাসড়কের মানিকগঞ্জ অংশের ঘিওরের বেইলি ব্রিজ সড়িয়ে পাশেই পাকা ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বেইলি ব্রিজগুলো সাধারণত আপদকালীন সময়ে স্থাপন করা হয়। এটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয়।
টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কেএম নুর-ই-আলম বলেন, এই আঞ্চলিক মহাসড়কে তার অংশে ১০টি বেইলি ব্রিজ রয়েছে। সম্প্রতি নাগরপুর উপজেলার টেংরিপাড়া এলাকার বেইলি ব্রিজটির কয়েকটি স্থানে ডেকিং ভেঙে গেছে। এ কারণে ওই ব্রিজের ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারছেন না।
এই ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজ মেরামতের জন্য আঞ্চলিক সড়কে গেলো ছয় এপ্রিল (শুক্রবার) সকাল ৬টা থেকে সকাল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। সকল যানবাহনকে আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই সড়ক ব্যবহার না করে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, এই মহাসড়ক থেকে বেইলি ব্রিজগুলো সরিয়ে সেখানে পাকা ব্রিজ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অচিরেই পাকা ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
আরও পড়ুন :
জেবি/পি
মন্তব্য করুন