অতিরিক্ত টোল আদায়, প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হয় যাত্রীরা
সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পটুয়াখালীর গলাচিপার উপজেলার আমখোলা খেয়া ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি নির্ধারিত জনপ্রতি ৬ টাকা টোলের পরিবর্তে আদায় করা হচ্ছে দশ টাকা করে। শুধু তাই নয় রাত হলে দু’পাড়ের মানুষকে জিম্মি করে ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা আদায় করে ইজারাদার।
খেয়াঘাটে টোল আদায়ের চার্ট টানানোর নিয়ম থাকলেও কোথাও নেই চার্ট টানানো। প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের পেটোয়া বাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয় সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অনিয়ম করে আসলেও দেখার যেন কেউ নেই।
জানা গেছে, বাংলা ১৪২৪ সালের জন্য আমখোলা ও ইচাদী পারাপারের জন্য জুয়েল আহমেদ ৪ লাখ ৪১ হাজার টাকায় আমখোলা খেয়ার ইজারা নেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী জনপ্রতি ৬ টাকা, মোটরসাইকেল ১৫ টাকা ও বাইসাইকেল ৫ টাকা করে পারাপারের কথা রয়েছে। আর এ টোল চার্ট প্রতিটি খেয়াঘাটের দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু গলাচিপার আমখোলা খেয়াঘাটে টোল চার্ট টানানো নেই।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সাজসজ্জা ঝড়ে লণ্ডভণ্ড
--------------------------------------------------------
প্রতিদিনই এ খেয়া দিয়ে গলাচিপা-দশমিনা উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ যাতায়াত করে। আমখোলার জুয়েল ঘাট ইজারা নেয়ার পরই সরকারি এ নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জনপ্রতি ছয় টাকার পরিবর্তে দশ টাকা করে টোল আদায় করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর বিশেষ দিবস, মেলা ও ঈদে সময় জনপ্রতি ২০ টাকা করে আদায় করে। মটরসাইকেল পারাপারে ১৫ টাকার কথা থাকলেও আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা করে। আর বাইসাইকেল ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা করে আদায় করা হয়। হাতের মালামালেও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।
ইচাদীর ব্যবসায়ী রুহুল আমিন আরটিভি অনলাইনকে জানান, আমখোলা খেয়া ঘাট জুয়েল ইজারা নেয়ার পরই খেয়া ঘাটের পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, টোল আদায়ের জন্য বেশির ভাগ সময় বসেন জুয়েলের ভাই জাফর। অতিরিক্ত টোল আদায়ের ব্যাপারে কেউ প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত হতে হয় জুয়েল-জাফরের পেটোয়া ভাইয়া বাহিনীর হাতে। উভয় পারের মানুষকে জিম্মি করে টোল আদায় করছে।
ইচাদীর রহিমা বেগম বলেন, কোনো রোগী নিয়ে আসলে খেয়া দিয়ে তাড়াতাড়ি পার হওয়া যায় না। ৪০ জন লোক না হলে খেয়া ছাড়ে না। আর ছাড়তে বললে বলে ৪০ জনের ৪শ’ টাকা দিলে খেয়া ছাড়া হবে। অনেকে রোগীর অবস্থা বিবেচনা করে বাধ্য হয়েই তিন/চার শত টাকা দিয়ে পারাপার হয়।
আমখোলার ইসমাইল হোসেন জানান, তিন বছর আগে ভাড়ার মোটরসাইকেল চালানো বাদ দিয়ে আমখোলা খেয়াঘাটের ইজারা নেয় জুয়েল। ইজারা নেয়ার পর থেকেই প্রকাশ্যে প্রতিদিন হাজারো মানুষের কাছ থেকে খেয়ার টোলের নামে চাঁদাবাজি করছে।
শিক্ষক সোবহান মিয়া জানান, খেয়াঘাটে এদের হাতে প্রতিদিনই দু’একজন যাত্রী লাঞ্ছিত হচ্ছে। তাই ভদ্রলোকরা এই ভয়ে ওদের নৈরাজ্যের প্রতিবাদ করে না। তিনি ক্ষোভ করে বলেন, এগুলো দেখার যেন কেউ নেই। বছরের পর বছর অনিয়ম করে যাচ্ছে কিন্তু কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
ইচাদীর নেছার উদ্দিন জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করলে চাঁদা দাবির মামলা দেয়ার হুমকি দেয় জুয়েল। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছে। এজন্য এখন আর মানুষ প্রতিবাদ করে না।
পানখালীর সাবেক এক সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক লোক অতিরিক্ত টাকা নেয়ার প্রতিবাদ করলে জুয়েল ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা আমার সামনে তাকে অপমান করে। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমার সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। পরে চাঁদাবাজির মামলা করার হুমকি দেয়।
এ ব্যাপারে আমখোলা খেয়াঘাটের টোল আদায়কারী জাফর বলেন, বেশি টাকায় ইজারা নিয়েছি। এছাড়া প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় নেতাদের ম্যানেজ করতে হয় তাই অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছি। সবাই জানে আমরা বেশি টাকা নেই এর কম নিলে লোকসান হবে। আর দৃশ্যমান স্থানে টোল চার্ট টানানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। কত টাকা দিতে হবে তাতো মুখেই বলছি-টানাতে হবে কেনো।
এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলার নির্বাহী অফিসার তৌসিফ আহমেদ আরটিভি অনলাইনকে জানান, গলাচিপার প্রায় সব খেয়াঘাটেই অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।
আরও পড়ুন:
এসএস
মন্তব্য করুন