• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জীবনযুদ্ধে পরাজিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান

পটুয়াখালী প্রতিনিধি

  ২৬ মার্চ ২০১৮, ১৪:০৫

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আবদুল মান্নানের বাড়ি জেলার দশমিনা উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদপুরা গ্রামে।

জেলা সদর থেকে অন্তত ৪৫ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে খাল-বিল, নদী-নালা পেরিয়ে যেতে হয় একাত্তরের রণাঙ্গনের সাহসী যোদ্ধা হাবিলদার আবদুল মান্নানের বাড়িতে।

আবদুল মান্নান মুক্তিযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে দি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নায়েক (বর্তমানে করপোরাল) পদে চাকরি করতেন এবং ওই সময় তিনি কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে।

২৫ মার্চ কালরাতে পাকবাহিনী তাদেরকে ঘেরাও করে রাখে এবং রাত একটার দিকে বাঙালি সৈনিকদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। বাঙালি সৈনিকরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। একসময় তারা (বাঙালি সৈনিক) পাশের আমবাগানে ঢুকে পড়ে এবং পরে সেখানে এসে যোগ দেয় ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্যরা। ওই আমবাগানে সেনাবাহিনী ও ইপিআর বাঙালি সৈনিকরা নিহত বাঙালি সৈনিকদের মরদেহ নিয়ে শপথ নেয় বাঙালির এ রক্তের প্রতিশোধ আমরা নেবই।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: কেউ খোঁজ রাখেনি মুক্তিযোদ্ধা আব্বাস আলীর
--------------------------------------------------------

এ শপথ নিয়ে বাঙালি সৈনিকরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং চট্টগ্রামের হালিশহরে একটানা ৪-৫ দিন যুদ্ধ চলে। এরপর চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ চালানো হয় এবং সীতাকুণ্ডের ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে তিনশ পাকসেনাকে খতম করা হয়। মার্চের শেষ দিকে পাক সেনাদের মর্টারশেল এসে হাবিলদার আবদুল মান্নানের বাম পা ও বাম হাতে লাগে। এতে তিনি মারাত্মক জখম হন এবং একপর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রথমে একটি মাদরাসায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায় চিকিৎসা শেষে একটু সুস্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার আবদুল মান্নান নিজ বাড়ি পটুয়াখালীর দশমিনায় এসে শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন। এরপর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে আবার যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। আট ডিসেম্বর পটুয়াখালীকে হানাদারমুক্ত করেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার কারণে এই সেনা সদস্য হাবিলদার আবদুল মান্নানের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছিল পাকবাহিনী ও এদেশের দালাল রাজাকার-আলবদররা। যুদ্ধ শেষে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে ফিরে যান এবং নায়েক থেকে হাবিলদার (বর্তমানে সার্জন) পদে পদোন্নতি পান। ১৯৮৮ সালের পাঁচ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরে যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান।

সেনাবাহিনীর চাকরি থেকে অবসরের পর তাকে মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে একেবারে দেউলিয়া হয়ে পড়েন একাত্তরের এই বীরযোদ্ধা। তার স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে ছয়জনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নানকে।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, পাকসেনাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারলেও জীবনযুদ্ধে হেরে গেছি।

আব্দুল মান্নানের সহধর্মীনী মোসাম্মদ নয়ন নেছা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও আমার মেয়ে কোনো সরকারি চাকরি পায়নি।

দশমিনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সাখাওয়াত হোসেন শওকত আরটিভি অনলাইনকে বলেন, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

আরও পড়ুন:

জেবি/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
অভিনেতা অলিউল হক রুমি আর নেই
ভাগনের লাঠির আঘাতে মামার মৃত্যু
বিমানবন্দরের বাউন্ডারি ভেঙে বাসচাপায় প্রকৌশলী নিহত, চালক গ্রেপ্তার 
দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে মোটরসাইকেলের ধাক্কা, নিহত ২
X
Fresh