• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

একযুগ ধরে শিকলবদ্ধ তিনি

রাজিউর রহমান রাজু

  ০৬ মার্চ ২০১৮, ২১:৪৭

একযুগ ধরে শিকলবদ্ধ জীবনযাপন করছেন বাসন্তী রানী। বাড়ির পাশের একটি কাঁঠাল গাছের সঙ্গে তার পা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। ১২ বছর আগের তরুণী বাসন্তী চেহারা এখন ভাঙা কাচের মতো বিধ্বস্ত।

যাকেই সামনে পান তাকেই পায়ের শিকল খুলে দিতে বলেন ৩২ বছর বয়সী এই নারী। মাঝে মাঝে ওষুধ খাওয়ার জন্য টাকা-পয়সাও চান অনেকের কাছে। তবে তাতে কোনো লাভ হয় না তার। ছোট একটা কাঠের চৌকিতে সারাদিন কাটে তার। সন্ধ্যা হলে তাকে নেয়া হয় ঘরের ভেতরে।

মঙ্গলবার সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার দেবীডুবা ইউনিয়নের লক্ষীরহাট-ডাঙ্গাপাড়ায় সরেজমিনে গিয়ে এমন বেদনাবিধুর দৃশ্য দেখা যায়।

দেখা যায়, মানসিক রোগী হিসেবে অনেকদিন ধরে শিকলবদ্ধ রাখায় নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বাসন্তী। স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন তিনি। সুন্দর করে নিজের নাম-ঠিকানা লিখতেও পারেন তিনি।

পরিবারের দাবি, তাকে ছেড়ে দিলে অন্যের জিনিসপত্র চুরি করে এবং অন্যের কিছু হারালে চুরি না করেও অপবাদ সইতে হয় তাদের।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় ১৩ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করলো বিজিবি
--------------------------------------------------------

তবে বাসন্তীর দাবি, তিনি পাগল নন। প্রতিদিন সকালে বাড়ির কাজ করে দেন তিনি এবং তারপর তাকে শিকলবদ্ধ করা হয়। সন্ধ্যায় শিকলমুক্ত করে বাড়িতে নেয়া হয় তাকে দিয়ে সন্ধ্যার কাজ করানোর জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধ হরিপদ কর্মকারের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বাসন্তী দ্বিতীয়। নিজেদের বসতবাড়ি ৮ শতক জমি ছাড়া কিছু নেই তাদের। কামারের কাজ করে অনেক কষ্টে চলে তাদের সংসার।

বাসন্তী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বড়বোন গীতা রানীকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করার পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন অষ্টাদশী বাসন্তী।

২০০৩ সালে ব্র্যাকের কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংক্রান্ত একটি প্রকল্পে চাকরি নেন তিনি। চাকরির শুরুতে এক মাসের ট্রেনিংয়ে রাজশাহীতে যেতে হয় তাকে।

ট্রেনিং থেকে ফেরার পর মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন বাসন্তী। মাঝে মাঝে তার মৃগী রোগ দেখা দিত। মানুষের বাড়িতে চুরি করার অপবাদ দিয়ে ২০০৬ সাল থেকে তাকে দিনের বেলায় তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হচ্ছে।

দশ বছর আগে মারা যান বাসন্তীর মা। বেঁচে থাকলেও ঠিকমতো চোখে দেখেন না তার বৃদ্ধ বাবা। সংসার চালান ছোট ভাই রতন কর্মকার।

তিনি জানান, মাঝে মাঝে পাগলামি করত বলে ২০০৪ সালে বাসন্তীকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে ডাক্তার তাকে একটি তলাবিহীন বালতিতে পানি আনতে বলেন। বাসন্তী বলেন এই বালতিতে কীভাবে পানি আনবো? পরে তিনি পাগল নন বলে ডাক্তার আমাদের ফিরিয়ে দেন।

তিনি আরও জানান, বাড়িতে নিয়ে আসার পর বাসন্তী ঠিকমতো বাড়িতে থাকতেন না। অন্যের জিনিসপত্রের ক্ষতি করতেন। তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

এই বিষয়ে প্রতিবেশী শাহাজান আলী জানান, তিনি শুনেছেন যে বাসন্তী নাকি এক জনের জিনিসপত্র চুরি করে আরেক জনের বাড়িতে রেখে আসতেন। তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় গৃহবধূ শিউলি আক্তার জানান, বাসন্তী এখানে সারাদিন শিকলবদ্ধ থাকেন। কোনো মানুষকে পাশ দিয়ে যেতে দেখলে ডাকেন এবং তাকে শিকলমুক্ত করতে বলেন। কারও কারও কাছে ওষুধ খাওয়ার টাকাও চান।

বাসন্তীর বাবা হরিপদ কর্মকার বলেন, বাসন্তীকে শিকলমুক্ত করলে কোথায় না কোথায় চলে যায়, খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রামের কারও জিনিসপত্র হারালে আমাদের ওপর চাপ দেয়। তাই তাকে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছি।

দেবীডুবা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাসন্তীকে বেঁধে রাখা এবং তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়াটা খুবই দুঃখজনক। তার পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলে তাকে শিকলমুক্ত করার ব্যবস্থা করব।

তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

কে/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পঞ্চগড়ে ট্রাক-ট্রাক্টরের সংঘর্ষ, নিহত ২
পঞ্চগড়ে গাছের ডালের আঘাতে শ্রমিকের মৃত্যু
পঞ্চগড়ে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪
মা-বাবার সঙ্গে পুণ্যস্নানে গিয়ে সন্তানের মৃত্যু
X
Fresh