বাবার দেওয়া নামটিই একমাত্র অবলম্বন মাসুমার
রাজশাহী বিশ্ববিদালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য আবদুল্লাহ আল মাসুদ গত ৩ সেপ্টম্বর ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন । সেই দিনেই হাসপাতালে স্বজনদের আলোচনা করে নিজের নামের সাথে মিল রেখে মেয়ের নাম রেখেছিলেন মাসুমা আখতার। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর কন্যার আকিকা দিয়ে সেই নাম অনুষ্ঠানিক ভাবে জানানোর কথা ছিলো। বাবার মৃত্যুর পর বাবার দেয়া নামই যেন এখন একমাত্র অবলম্বল মাসুমার।
গত শনিবার রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে মাসুদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। পরে রাতেই তার মৃত্যু হয়। মাসুদের গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর খাসের হাট এলাকায়।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে শোকাবহ পরিবেশ। এলাকার অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না মাসুদের ওপর ঘটে যাওয়া এ নির্মমতা। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চান ও দোষিদের শাস্তি চান।
স্বামীকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা। বললেন স্বামীর রেখে যাওয়া এক মাত্র অবলম্বন মেয়েকে বড় করবেন, তার পাশে যেন সবাই দাঁড়ায়, এটায় তার চাওয়া। কোন রাজনৈতিক দল কিংবা কোন রাজনৈতিক নেতা সহযোগিতার বিষয়ে যোগাযোগ করছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনো সরকারি বা রাজনৈতিক কোন নেতা কেউ যোগাযোগ করেনি। তবে অনেকে ফেসবুকে নাম্বার পেয়ে, ফোন দিয়ে সান্তনা দিচ্ছেন, পাশে থাকার কথা বলছেন। তবে তাদের পরিচয় আমি জানি না।’
যেদিন মাসুদের উপর হামলা হয়, সেদিন মাসুদ ঔষধ কেনার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিলো। সর্বশেষ স্বামীর সাথে মোবাইলে সন্ধ্যা সাতটার দিকে কথা হয় বিউটির। এসময় মাসুদ তাকে বলছিলো তিনি চা খাচ্ছেন ঔষদ নিয়ে ১০ মিনিটের মধ্যেই বাড়ি ফিরবেন। এর ঘন্টাখানের পর আবারো যখন মাসুদের মোবাইলে ফোন দেন বিউটি তখন ফোন বন্ধ পান। এরপর একাধিকবার ফোন করেছিলেন, পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ পান।
মামলা করা নিয়েও খুব বেশি আগ্রহ নেই মাসুদের পরিবারে। মাসুদের স্ত্রী বিউটি আরা বলেন, ‘থানা থেকে তাকে ফোন দেওয়া হয়েছিলো, তিনি বলেছেন মাসুদের বড় ভাই আছেন, তার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। যদিও মাসুদের বড় ভাই আয়েতুল্লাহ বেহেস্তী বলেন, ‘মামলা করে যে বিচার পাব, সেই পরিস্থিতিও নাই। রাজশাহী যে যাব, খুব বেশি ভরসা পাচ্ছি না। দেখি কি করি।’
ছেলের হত্যার বিচার চান মাসুদের মা তাসেনুর বেগম। তিনি জানান, তার ছেলে ১৪ সাল থেকে পঙ্গু, তিনি প্রশ্ন করেন কিভাবে একটা মৃত মানুষকে আবারও মারে, আমি এর সুষ্ঠ বিচার চাই। তিনি বলেন তার সংসার চালাত মাসুদই। এখন সংসার কিভাবে চলবে। ১০ টাকা হলেও মাসুদই দিয়ে সংসারটা চালাত, এখন কে আমার সংসারটা চালাবে। ফুটফুটে নাতনি হয়েছিলো একটা সু-সংবাদ পাওয়ার পর পরই এত নির্মম, মানুষের শরিরে কি একটুকু রক্ত-মাংস নাই।
মন্তব্য করুন