‘আমার গুলিডা বাইর কর, আমি বাঁচবাম’, চলে গেলেন সেই মাজেদুল
‘হাসপাতালে খালি কইছে, ও আম্মা, আমার গুলিডা বাইর কর, আমি বাঁচবাম। ওই ভাইজান, আমারে বাঁচাও; ও আব্বা আমারে বাঁচাও। পইলা দিন গুলিডা বাইর করলে আমার পুত মরলো না অইলে। ডাক্তরেই আমার ছেড়ারে মারছে।’
আহাজারি করতে করতে এভাবেই কথাগুলো বলেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার গামারিতলা ইউনিয়নের পূর্ব গামারিতলা দড়িয়াপাড়া গ্রামে মাজেদুল ইসলামের মা রেজিয়া খাতুন।
তিনি বলেন, ‘আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম, কিন্তু হুজুররা নিয়ে গেছে। সেদিন (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দিয়ে এলাকার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল মাজেদুল। আমাদের এলাকা শান্ত জানাইছিলাম। তখন বলেছিলাম, বাবা তুমি আন্দোলনে যাইও না, ঘরে থাইকো। হুজুরদের সঙ্গে ঘরে বসে থাকতে বলেছিলাম। বেলা আড়াইটার দিকেও কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিকেলে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই।’
জানা গেছে, মাজেদুল ইসলাম গাজীপুরের মাওনা ওভারব্রিজের কাছে আলহাজ আলাউদ্দিন জামিয়া কোরানিয়া আহাদিয়া মাদরাসার কিতাব বিভাগের ছাত্র ছিলেন। গত ৫ আগস্ট কোটা বিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিজের মাদরাসার কাছেই সেদিন বিকেল চারটার দিকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নাভির নিচে একটি গুলি ও পায়ে ক্ষত হয়। গুলিবিদ্ধ মাজেদুলকে ওই দিন সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাজেদুলের পায়ের ক্ষতের চিকিৎসা করে পরদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়। কিন্তু তার পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। গত ৭ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যায় মাজেদুলের পেটের ভেতরে একটি গুলি আটকে আছে। ওই দিন আবারও তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত ১০ আগস্ট বিকেলে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। জ্ঞান না ফেরায় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মাজেদুলের বাবা আবদুল মান্নান বলেন, ‘আশা ছিল, ছেলে আমার জানাজা পড়বে, কিন্তু ভাগ্যে মিলল না। ছেলের জানাজা আমাকেই পড়তে হলো। আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু লাশ হইয়া ফিরল। ছেলে যে মারা গেল, বিচার চাই। বিচার চাইলে, কেইস করতে হয়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, কোনো কেইস করি নাই।’
মন্তব্য করুন