• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পাহাড়ে পাহাড়ে জুম কাটার ধুম

ইয়াছিন রানা সোহেল, রাঙামাটি

  ২৫ অক্টোবর ২০১৭, ১৩:১১

আকাশে তখনও ঠিকমতো সূর্য উঠেনি। কেবল আভা ছড়িয়েছে মাত্র। এরই মধ্যে সরগরম হয়ে পড়েছে পাহাড়ি পল্লিগুলো। পাহাড়ি নারীরা মাথার সঙ্গে বেঁধে অথবা পিঠে ঝুলিয়ে ‘হাল্লোং’ (চাকমা ভাষায় হাল্লোং মানে ঝুড়ি) নিয়ে ছুটছে উঁচু উঁচু পাহাড়ের দিকে। এ সময়টা পাহাড়ে পাহাড়ে চলে জুম কাটার উৎসব। পাহাড়ি নারী-পুরুষ সবাই মিলে ধান কেটে রাখছেন হাল্লোংএ। এরপর আঁকাবাঁকা পাহাড় বেয়ে চলেছে বাড়ির দিকে।

এরই মধ্যে অনেকের ফসল কাটা শেষ হয়েছে। বছরের এ সময়টা পার্বত্য জেলাগুলোর সবুজ পাহাড়ের ঢালে চলে ধান কাটার উৎসব। এ বছর জুনে পাহাড় ধসের কারণে জুম চাষের জায়গা কমে গেছে। তবে যেটুকুতে করেছেন তাতে ফলন ভালো হয়েছে বলে জানান চাষিরা। জুমিয়াদের ঘরে উঠছে সোনালি ফসল। একইসঙ্গে পাহাড়ে বাম্পার ফলন হয়েছে মারফা, বেগুন, মরিচ, ঢেঁড়স, কাকরোল, আদা, পেঁপে ও কুমড়াসহ নানা ফসলের। জুমের বাম্পার ফলন হওয়ায় খুশি জুমিয়া পরিবারগুলো।

রাঙামাটির কাপ্তাই এলাকার জুমিয়া অনিল চাকমা বলেন, ‘পাহাড় ধসের ফলে জুম চাষের জায়গা কমে গেছে। তারপরও যেটুকু জায়গাতে আমার চাষ করেছি তাতে ফলন গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে।’

তার অভিযোগ, ‘জুম চাষের সমস্যা হলেও কৃষি কর্মকর্তারা কোনো খবর নেয়নি। জুমে যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায় তাতে কয়েক মাস চলে। কৃষি বিভাগ যদি এমন কোনো জাতের ধান আমাদের দিত যা চাষ করলে ফলন ২-৩ গুণ বেশি হবে তাহলে জুমের ধান দিয়ে আমরা সারাবছর চলতে পারতাম’।

একই এলাকার জুমচাষি চম্পা চাকমা বলেন, ‘গেলো বছর জুমে ২০ কেজি ধান রোপণ করে ৪-৫ বস্তা ধান হয়েছিল। এবার ১৫-২০ বস্তা হতে পারে। গেলো বছরের তুলনায় এবারে জুমে ফলন ভালো হয়েছে।’

ধান কেটে মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত জুমচাষি মঙ্গল চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমাদের জুমের সব ধান কাটা শেষ। সবজিগুলো এখনও আছে। পাহাড় ধসের কারণে অনেকে জুম চাষ করেনি। যারা করেছে তারা ভালো ফলন পেয়েছে।’

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা যায়, জুমচাষিরা পৌষ-মাঘ মাসে পাহাড়ের ঢালের জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করে। ফাগুন-চৈত্র মাসে আগুনে পুড়িয়ে পাহাড় জুম চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। বৈশাখ মাসে পোড়া জুমের মাটিতে একসঙ্গে ধান, মারফা, মিষ্টি কুমড়া, তুলা, তিল, ভুট্টাসহ বিভিন্ন রকম বীজ রোপণ করে। এরই মধ্যে এখন ধান কাটা হচ্ছে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে জুম ধান আবাদের। তবে আবাদ হয়েছে পাঁচ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৯১০ হেক্টর কম জমিতে জুম চাষ হয়েছে। আশা করছি এ জমি থেকে এবার ৫ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন ধান পাওয়া যাবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নতুন কিছু প্রজাতির ধান আগামী বছর থেকে জুমিয়াদের দিতে পারবো। সেগুলো প্রায় প্রতি হেক্টরে তিন টন করে ধান উৎপাদন হবে।’

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh