• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

কুড়িগ্রামে দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট, কুড়িগ্রাম

  ১৩ আগস্ট ২০১৭, ১৪:১৭

কুড়িগ্রামে ১৬টি নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। জেলার চিলমারীর সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়নের কালুয়ারচরে বাঁধ ভেঙে মহিলা ও শিশু নিখোঁজ রয়েছে। এদিকে বন্যার পানি সড়কে ওঠায় রংপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে, কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ সোনাহাট স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পানির তীব্র স্রোতে সদরের আরডিআরএস বাজারে ৩০ মিটার ও ফুলবাড়ী উপজেলার গোড়কমন্ডলে ১৫ মিটার বাঁধ ভেঙে নতুন করে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষজন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার পানি উঠায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেলার দু’শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

প্লাবিত হয়ে পড়েছে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম সদর, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও উলিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০ ইউনিয়নের দু’শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকায় কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যেকোনো মুহূর্তে জেলা শহরের সঙ্গে নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার গ্রামীণ হাট-বাজারগুলো।

সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকার নছিয়ত আলী (৭০) বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে ধরলার পানি প্রবল বেগে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। বাড়িতে থাকতে না পেরে ছেলে-মেয়ে, গরু-ছাগলসহ মাদরাসায় আশ্রয় নিয়েছি। মাদরাসার মাঠও তলিয়ে গেছে। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে মনে হয় এখানেও আর থাকা যাবে না।’

একই এলাকার মঞ্জুরী বেগম বলেন, ‘বাড়িতে একবুক পানি। সকাল থেকে চৌকি উঁচু করে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বসে ছিলাম। আর থাকা যাচ্ছিল না, এজন্য নৌকা করে ছেলে-মেয়ে ও ছাগল-ভেড়া নিয়ে বাপের বাড়িতে যাচ্ছি।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াৎ মো. রহমতুল্ল্যা জানান, নাগেশ্বরী পৌরসভার একাংশসহ ১০টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহম্মদ ফেরদৌস খান আরটিভি অনলাইনকে জানান, শুক্রবার থেকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের পানিবন্দি মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। যেখানে যা প্রয়োজন তা দেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার আলাউদ্দিন আল আজাদ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জেলায় ২৫টি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী জানান, বন্যার কারণে জেলার ৪৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

এদিকে ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল গ্রামের গোরকমন্ডল বেড়িবাঁধের ২০ ফুট অংশ ভেঙে যাওয়ায় প্রায় ৬টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আমি নিজেই ওই এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। এ পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ১৫-২০ ফুট অংশ ভেঙে গেছে। পানির স্রোতে বাঁধের আরো অংশ ভেঙে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

অপরদিকে বাঁধ ভেঙে বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করায় ওই গ্রামগুলোর লোকজন আতঙ্কে শিশু সন্তান ও গৃহপালিত পশুসহ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছেন। বন্যার পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে কয়েকটি মৎস্য ঘেরের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাছ। সেইসঙ্গে ডুবেছে কয়েক শ’ হেক্টর জমির ফসল।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও আরটিভি অনলাইনকে জানান, গোটা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। আমরা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রেখেছি যাতে বন্যা কবলিতরা আশ্রয় নিতে পারে। এছাড়াও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গেলো ২৪ ঘণ্টায় ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৮৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৮ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ১৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তাসহ অন্যান্য ১৩টি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

জেবি/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাছ ধরতে গিয়ে পুকুরে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু 
মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় স্কুলছাত্রের আত্মহত্যা
কুড়িগ্রামে নদীতে গোসল করতে নেমে কিশোরের মৃত্যু
গরুর মাংসের কেজি ৫৯৫ টাকা, ক্রেতাদের ভিড়
X
Fresh