৩০০ বছরের পুরনো ‘সারিন্দা’ নিয়ে রেজাউল করিমের প্রদর্শনী

আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবস উপলক্ষে ময়মনসিংহে ‘শতবর্ষী সারিন্দা প্রদর্শনী’ আয়োজন করেছে এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম।

নতুন ও পুরাতন বাদ্যযন্ত্র ও লোকজ সংস্কৃতির সংগ্রাহ রেজাউল করিম আসলাম সংগৃহীত সতেরো শতাব্দী থেকে উনিশ শতাব্দীর ১২টি দুর্লভ সারিন্দা এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- রংপুরের কুড়িগ্রাম থেকে সংগ্রহ করা ৩৬৫ বছরের পুরনো সারিন্দা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার নাও ভাঙার চরের মোক্তার হোসেন ফকিরের কাছ থেকে সংগ্রহ করা চার প্রজন্মের ব্যবহৃত ২০০ বছরের পুরানো সারিন্দা।

রেজাউল করিম আসলামের সংগ্রহে রয়েছে ৬০০ বাদ্যযন্ত্র। বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ ধরেই এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত আসলামের পরিবার। ময়মনসিংহ শহরের বড় বাজারে রয়েছে ‘নবাব এন্ড কোং’ নামে তার একটি বাদ্যযন্ত্রের শোরুম আছে।

১৯৪৪ সালে আসলামের দাদা নবাব আলী বাদ্যযন্ত্রের ব্যবসা শুরু করেন। দাদার পর তার বাবা জালাল উদ্দিন এই ব্যবসার হাল ধরেন। ছোটবেলা থেকেই লোকজ বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় রেজাউল করিম আসলামের। পরে ২০০৬ সাল থেকে শুরু করেন বিরল বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহ। সংগ্রহের পাশাপাশি তিনি এসব নিয়ে গবেষণাও করছেন।

যে যন্ত্রগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, কারিগরদের দিয়ে ওই যন্ত্রগুলোর আদলে নতুন করে আবার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার কাজও করছেন তিনি।

প্রর্দশনীর বিষয়ে আসলাম বলেন, তৈরি কারক, বাদক, উপকরণ সবই হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় সারিন্দা ছিলো খুবই মূল্যবান, যারা বাজাতো তারাও ছিলেন মরমী লোক। এগুলো হারানোর বা নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই উদ্যোগ। এই সারিন্দা কারও রান্নাঘর, কারও গোয়ালঘর, কারও উগার বা সিলিং থেকে পাওয়া গেছে।

যাদের কাছে থেকে পাওয়া গেছে তারা জানে না এর ঐতিহাসিক বা ঐতিহ্যগত মূল্য কত। অনেক সারিন্দা চুলার লাকড়ী বা মাটিতে মিশে ফসিল হয়ে গেছে। এই প্রদর্শনী থেকে যদি কেউ জানতে পারে তাহলে আমাদের পুরাতন সারিন্দাগুলো বিলুপ্ত হবে না। আর নতুন প্রজন্মের কাছে এই দেশীয় বাদ্যযন্ত্রটি নিয়ে আগ্রহের সৃষ্টি হবে।

প্রদর্শনী সম্পর্কে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালার উপ-কীপার মুকুল দত্ত বলেন, এই ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া উচিৎ। এই আয়োজনের খবর সকলের কাছে পৌঁছালে আমাদের লোকজ সম্পদ ও লোকজ ঐতিহ্য রক্ষা পাবে।

সারিন্দা নিয়ে প্রবাদ রয়েছে -‘আমি কই কি, আমার সারিন্দা বাজায় কি’ প্রবাদটির অর্থ হলো -কথায় ও সঙ্গতে মিল নেই। অর্থাৎ আমরা যা বলি তার সাথে কাজের মিল নেই। প্রবাদটি সকলের কাছে পরিচিত হলেও ‘সারিন্দা’ যন্ত্রটি সকলের কাছে অপরিচিত। কালের বিবর্তনে এটি হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম। এর প্রধান কারণ প্রথমত তৈরি কারকের অভাব দ্বিতীয়ত বাদকের অভাব।

নগরীর ঈদগাহ মাঠের বিপরীতে কাঁচিঝুলি রোডস্থ ব্যাপ্টিস্ট চার্চ গির্জার নিচতলায় ‘এশিয়ান মিউজিক মিউজিয়াম’ গ্যালারি হলে ১৮ মে থেকে ২০ মে তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনের সাথে রয়েছে পুঁথি পাঠ, বাউল বৈঠক, শিশুদের সংগীত ও যন্ত্রসংগীত।

আয়োজনটির সাথে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করছেন তার দুই কন্যা জয়িতা অর্পা ও জাওয়াতা আফনান। আন্তর্জাতিক জাদুঘর দিবসের এই আয়োজনের সহোযোগিতায় রয়েছে নোভিস ফাউন্ডেশন ও ময়মনসিংহ বাউল সমিতি। প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী সকলের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।