স্কুল ছুটি দিয়ে মাঠে আ.লীগের সম্মেলন
নরসিংদীর পলাশে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে ক্লাস বন্ধ রেখে একটি বিদ্যালয়ের মাঠে উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (১৬ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পলাশ থানা সদর মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।
দীর্ঘ আট বছর পর অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলিপকে পুনরায় সভাপতি ও জিনারদী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম গাজীকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ১০টায়। এর আগে সকাল ৯টা থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অসংখ্য নেতাকর্মী মাঠে সমবেত হন। বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ছুটি দিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের এই ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
তবে বিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে আগের দিনই শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, প্রতিদিন সকাল ১০টায় ক্লাস শুরু হলেও আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কারণে সোমবার ক্লাস শুরু হবে সকাল পৌনে ৮টায়। অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী যথাসময়ে ক্লাসে আসলেও পরবর্তীতে সময় কমিয়ে ও কয়েকটি ক্লাস বাদ দিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
অভিভাবকরা বলেন, অন্য কোনো মিলনায়তন বা খোলা স্থানে সম্মেলনের আয়োজন করা হলে ভালো হতো। এতে স্কুলের শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়ার প্রয়োজন হতো না। শিক্ষার্থীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। বিদ্যালয়ের মাঠে রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের কারণে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সমস্যা হয়।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, নবনির্মিত নতুন ভবনটি হস্তান্তর না হওয়ায় বিদ্যালয়ে দুই ভাগে ক্লাস হচ্ছে। এই সম্মেলনের আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির কাছ থেকে মৌখিকভাবে অনুমতি নিয়েছেন। সম্মেলনের কারণে সকালের পালার শিক্ষার্থীদের ১০টার পরিবর্তে পৌনে ৮টায় ক্লাস শুরু হয়। পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আজকের জন্য ৩০ মিনিট করে মোট ৪টি ক্লাস হয়েছে তাদের।
আবার দুপুর ২টা থেকে পরের ক্লাসগুলো ঠিকঠাক হয়েছে। মাঝের ওই সময়টাতে শিক্ষকরা মিলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান উন্নয়নে মিটিং করা হয়েছে।
স্কুলের মাঠে সম্মেলন কতটুকু যৌক্তিক জানতে চাইলে পলাশ থানা সদর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বরুণ চন্দ্র দাস জানান, কত কারণেই তো আমরা স্কুল এক দিন দুই দিন বন্ধ দিই। সম্মানিত লোকজন আসবেন, স্থানীয় এমপি থাকবেন তাই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো পরিস্থিতির কারণে অনেক কিছুই করতে হয়।
তিনি আরও বলেন, প্রধান শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ তিন দিনের ঐচ্ছিক ছুটি থাকলেও আমরা সেই সুযোগ নিইনি। সম্মেলনের কারণে আমরা কিন্তু ক্লাস বন্ধ রাখিনি। সময় এগিয়ে এনে চারটি ক্লাস হওয়ার পর সম্মেলনের কারণে শিক্ষার্থীদের ছুটি দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে পলাশের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম মিত্র জানান, বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এমন সম্মেলনের আয়োজন করা যেতে পারে। তবে আমি যতদূর জেনেছি, দুই শিফটের শিক্ষার্থীদের ক্লাসের মধ্যবর্তী সময়ে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার কথা দিয়েছে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য করুন