• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

সাহস দেখাতে বললেন মাইক্রোসফটে চাকরি পাওয়া রাজিব

সাফায়িত সিফাত, কুবি প্রতিনিধি

  ০৬ মে ২০২২, ১৮:৪৬
সাহস দেখাতে বললেন মাইক্রোসফটে চাকরি পাওয়া রাজিব
রাজিব পাল

মাইক্রোসফট-গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পাওয়া অনেক তরুণেরই স্বপ্ন থাকে। ক্যাম্পাস জীবনে বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সময় এমন স্বপ্ন বুনেছিলেন রাজিব পালও। তবে তার ক্ষেত্রে সেটা আর অন্যদের মতো স্বপ্নে সীমাবদ্ধ থাকেনি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফটের আমন্ত্রণে আগামী ১৫ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটির আয়ারল্যান্ড অফিসে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজিব চন্দ্র পালের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার গোহট গ্রামে। পরিবারে তিন-ভাইবোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ।

মাইক্রোসফটে সুযোগ পাওয়ার পেছনের গল্প থেকে শুরু করে তার ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে জানতে রাজিব চন্দ্র পালের সঙ্গে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাফায়িত সিফাত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষার্থী হিসেবে মাইক্রোসফটের মতো টেক জায়ান্টে যোগ দিতে যাচ্ছেন। কেমন লাগছে?

রাজিব পাল : সত্যিই অসাধারণ। আমি বিশ্বাস করি আমার মতো এমন আরও অনেকেই আছেন, যারা গুগল, মাইক্রোসফট ও অ্যামাজনে কাজ করার সামর্থ্য রাখেন। তবে প্রথম হিসেবে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এই আনন্দ প্রকাশ করার মতো না।

স্বপ্ন দেখার শুরুটা কীভাবে হলো?

রাজিব পাল : মূলত, স্বপ্নটা শুরু হয় কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হওয়ার পর। যখন আমরা নানান প্রোগ্রামিং কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে থাকি, তখন থেকেই টেক জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর নাম শুনি। বলতে গেলে আমার কনটেস্টে অংশগ্রহণের সময় থেকেই এমন স্বপ্নের সূচনা।

বিভিন্ন প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ব্যাপারে বিভাগে আপনার বেশ পরিচিতি আছে। এ সম্পর্কে আরও জানতে চাই

রাজিব পাল : আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে প্রতিটি কনটেস্টেই অংশগ্রহণ করতাম। অন্যদেরও অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করতাম। ছোট কিংবা বড়, কোনো কিছুই বাদ দিতাম না। এটা অনেকটা নেশার মতো কাজ করত। আমার মতে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট, প্রব্লেম সল্ভিং এবং এই ধরনের সফলতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

প্রতিটি সাফল্যের পেছনে সংগ্রাম কিংবা ত্যাগের গল্প লুকিয়ে থাকে। আপনার সাফল্যের পেছনের গল্পটা জানতে চাই।

রাজিব পাল : বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদুল হাসান রাজু স্যার আমাদেরকে দিনের পর দিন কনটেস্টের উপকারিতা বুঝিয়ে গেছেন। এরপর আমি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটা বড় সময় শুধু এ কাজেই ব্যয় করি। অনেক রাতজাগা, পরীক্ষার আগের দিনও অন্য কোথাও গিয়ে কনটেস্টে অংশগ্রহণ করা, এসব আমি আনন্দ নিয়ে করতাম। তবে আমার বিভাগের সব স্যারই আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। আমার সাফল্যের পেছনে আমার বিভাগকেই দেখি।

নিয়োগ প্রক্রিয়াটা কেমন ছিল?

রাজিব পাল : লিংকডইনে আমি মাইক্রোসফটের একটা জব পোস্ট দেখি। তারপর সরাসরি আবেদন করে ফেলি। দুই-তিন দিন পর একটা ই-মেইল পাই। এতে একটা কোডিং টেস্টের কথা বলা থাকে এবং তার জন্য একটা মিনিমাম সময় বেঁধে দেওয়া হয়। আমি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোডিং টেস্ট সম্পন্ন করি। তারপর সপ্তাহখানেক পর চারটা অনলাইন ইন্টারভিউয়ের ই-মেইল পাই। ইন্টারভিউতে সিস্টেম ডিজাইন, লো লেভেল ডিজাইন এবং আরেকটা কোডিং টেস্ট থাকে। সর্বশেষ ইন্টারভিউ দিই মাইন্ড সেট এবং কোলেবোরেশানের ওপরে। তারপর তিন-চার সপ্তাহ পর আমাকে অফার লেটার দেওয়া হয়।

অনেকেরই এমন সুযোগ পাওয়ার স্বপ্ন থাকে। আপনি সেটা ইতোমধ্যে পেয়েছেন। তারপর নিজেকে কোথায় দেখতে চান, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

রাজিব পাল : সম্প্রতি কোনো কিছুতে লিড দেওয়ার একটা প্রবণতা আমার ভেতর তৈরি হয়েছে। আপাতত একজন লিডার হিসেবেই নিজেকে দেখার ইচ্ছা।

স্বাভাবিকভাবে এখন দেশের চেনাজানা গণ্ডি পেরিয়ে আয়ারল্যান্ডে স্থায়ী হতে হবে। কিন্তু সেখানেও পরোক্ষভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন বলা যায়। এ বিষয়গুলো কীভাবে দেখছেন?

রাজিব পাল : অনেক বাংলাদেশি সেখানে আছে। সমাজ, সম্প্রীতি এবং দেশের মান বজায় রেখে চলা ছাড়া আর তেমন কিছুই দেখছি না।

মাইক্রোসফট-গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের তুলনায় ভারত বা পার্শ্ববর্তী বেশকিছু দেশের লোকবল তুলনামূলকভাবে বেশি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পিছিয়ে থাকার পেছনে কারণ বা মূল চ্যালেঞ্জটা কী বলে আপনি মনে করেন? সঠিক লক্ষ্য ঠিক করতে না পারা, দক্ষতার অভাব নাকি অন্য কিছু?

রাজিব পাল : আজকাল অনেক ছেলে-মেয়ে বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যা বিবেচনা করলে আমরা ভালোই এগিয়ে আছি। তবে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। দক্ষতার অভাব আছে বলে আমি মনে করি না। শুধু সাহস করে ইন্টারভিউটা ফেইস করাটাই দরকার।

বর্তমানে সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচুর সময় ব্যয় করে। কিন্তু আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন না বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় নন। এর পেছনে কি সময়ের অপচয় রোধ বা কিংবা মূল কাজে ফোকাস করার মতো বিশেষ কোনো কারণ আছে?

রাজিব পাল : একটা সময় আমি অনেক সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সক্রিয় ছিলাম। কিন্তু সময় এবং ফোকাস নষ্ট হওয়ার কারণে আমি সবকিছু থেকেই বিরত থাকি। বিশেষ করে গত কয়টা মাস আমাকে একেবারে কেউই খুঁজে পায় নাই। যদিও এটা ঠিক না, কিন্তু এমন একটা স্বপ্নের জন্য আমি তা করতে বাধ্য হই।

মাইক্রোসফটে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেন। বহির্বিশ্বে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে উপস্থাপন করতে কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

রাজিব পাল : আমার জুনিয়র ভাই ও বন্ধুদের সবাইকে আমি উৎসাহিত করি। আমি আমার জার্নি এবং পরিকল্পনা তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করব। আমি চাই আমার মতো তাদেরও সাফল্য আসুক। তাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমি তাদের সঙ্গে থাকব।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিভাগের বিশেষ কোনো স্মৃতি...

রাজিব পাল : বিভাগের প্রতিটা সময়ই আমার কাছে বিশেষ ছিল। তবে ২০১৭ সালে আমরা একটা কনটেস্ট আয়োজন করি। এই কনটেস্টের প্রতিটি সময়ই আমার কাছে অন্য রকম ছিল।

অনুজদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

রাজিব পাল : ভয় ব্যাপারটা দূর করতে হবে। অধ্যয়নরত যারা আছে, তাদের বলব অলগোরিদম ডাটা স্ট্রাকচার নলেজ বাড়াতে হবে। একাডেমিক পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে হবে। ভালো প্র্যাকটিস, প্রবলেম সলভিং দক্ষতা, অ্যাকাডেমিক কিছু নলেজ এবং ভয় কাটানোর ক্ষমতা থাকলে অবশ্যই এই ধরনের টেক জায়ান্টে কাজ করা যে কারও পক্ষে সম্ভব।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদরাসায়
পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে নওগাঁয় শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
ফরিদপুরে স্কুলশিক্ষার্থী অন্তর হত্যায় ৩ জনের ফাঁসি
রাবিতে জিয়াউর রহমান হল ডিবেটিং সোসাইটির যাত্রা শুরু
X
Fresh