• ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
logo

পালিয়ে বিয়ে করায় যুবককে হত্যা, ৫ পুলিশ প্রত্যাহার

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা

  ০৪ জুন ২০১৭, ২১:৫৯

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে পালিয়ে বিয়ে করায় পরিকল্পিতভাবে প্রেমিককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করায় সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত ওই প্রেমিকের নাম রিপন চন্দ্র দাশ (২২)।

তিনি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামের জেলেপাড়ার বাবলু চন্দ্র দাশের ছেলে।

এদিকে শুক্রবার এ ঘটনায় প্রেমিকার বাবা সুরেশ চন্দ্র দাশের বসতবাড়ি ও দোকান ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করেছে নিহত রিপন চন্দ্র দাশের পরিবারের লোকজন ও বিক্ষুব্ধ জনতা।

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ময়নুল হককে আহবায়ক করে রোববার ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অপরদিকে দায়িত্বে অবহেলার কারণে শনিবার সুন্দরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহম্মেদসহ ৫ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিয়া জেলেপাড়া গ্রামের সুরেশের মেয়ের চম্পা রানীর সাথে প্রতিবেশী রিপনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ঘটনাটি অনেক দুর পর্যন্ত গড়ালে সুরেশ চন্দ্র মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নেন। চম্পা রানীর ও রিপন চন্দ্র বিষয়টি জানতে পেরে গেল ২৯ মে কাউকে না জানিয়ে কাহালু পৌরশহরের কাইট পাড়ার এক বাড়িতে যান। সেখানে এফিডেভিট মূলে ও মন্দিরে পুরোহিতের কাছে শাখা, সিধুঁর এবং মালা বদলের মাধ্যমে বিয়ে করেন রিপন চন্দ্র ও চম্পা রানী।

এদিকে মেয়ে চম্পা রানী পালিয়ে বিয়ে করায় বাবা সুরেশ চন্দ্র সুন্দরগঞ্জ থানায় জামাতা রিপন চন্দ্রের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করেন।

এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ আতিয়ার রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, সুরেশ চন্দ্রের অভিযোগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ১ জুন বগুড়ার কাহালু উপজেলা শহরের একটি বাসা থেকে চম্পা ও রিপনকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কাহালু থেকে নব দম্পতি চম্পা রানী ও রিপনকে মাইক্রোবাসে করে সুন্দরগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হচ্ছিল।

তিনি বলেন, পথে রিপন টয়লেট যাবার কথা বলে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পলাশবাড়ী উপজেলার জুনদহ এলাকায় রাস্তার পাশে পুলিশ পাহারায় হাতকড়া পড়া অবস্থায় নামে। এ সময় রিপন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে দ্রুতগামী একটি ট্রাক তাকে চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়।

জানা গেছে, রিপন ও চম্পাকে বহনকারী ওই মাইক্রোবাসে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ চম্পা রানীর বাবা সুরেশ ও তার স্বজনরা ছিলেন। রিপনের বাবা বাবলু চন্দ্র দাশ অভিযোগ করে বলেন, আমি আমার ছেলের মরদেহ দেখেছি। আমার ছেলের মাথায় ব্যান্ডেজ ছাড়া শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

তিনি আরো বলেন, সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ চম্পা রানী ও রিপন চন্দ্রকে জীবিত উদ্ধার করলেও পুলিশ ও চম্পার বাবা সুরেশ চন্দ্র পরিকল্পিতভাবে রিপনকে হত্যা করে তার লাশ সুন্দরগঞ্জে নিয়ে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করে ট্রাকচাপায় নিহত হওয়ার অপপ্রচার চালিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এলাকাবাসি ও নিহত রিপনের পরিবারের দাবি পুলিশ পরিকল্পিতভাবে রিপনকে হত্যা করেছে। তারা রিপনের মরদেহ পুনঃরায় ময়না তদন্ত করে হত্যার রহস্য উৎঘাটন করে দোষি ব্যক্তিদের ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।


এর আগে শুক্রবার গাইবান্ধা জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবু সোলায়মান সরকার, ধোপাডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান রাজু, থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আতিয়ার রহমানের হস্তক্ষেপে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরে রিপনের অপমৃত্যুর কারণে তার মরদেহ ধর্মীয় শাস্ত্রমতে শনিবার মাটিচাপা দেয়া হয়।

এদিকে রিপন চন্দ্রের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দেয়। শুক্রবার দুপুরে রিপনের পরিবার ও এলাকার লোকজন উত্তেজিত হয়ে চম্পার বাবা সুরেশ চন্দ্রের বাড়িঘর ভাঙচুর ও তার ভগ্নিপতির দোকানে অগ্নিসংযোগ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছেন।

এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে শনিবার সুন্দরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহম্মেদ, কনন্সেটবল শাহানুর রহমান, মোস্তাফিজুর রহমান ও নারী কনন্সটেবল নার্গিস বেগমকে ক্লোজ করে গাইবান্ধা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ময়নুল হককে আহবায়ক, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার(সি-সার্কেল) রেজিনুর রহমান ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি মাসুদুর রহমাকে সদস্য করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তবে অপহরণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রাজু মিয়াকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh