• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ছেলের ফ্ল্যাটে স্থান হয়নি আ.লীগ নেত্রী মায়ের, থাকেন ছাপড়ায়

সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ

  ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:২৬
ঠিকাদার ছেলের ফ্ল্যাটে স্থান হয়নি মায়ের, সাবেক আ. লীগ নেত্রী থাকেন খোলা ছাপড়ায়
মা মোরশেদা খানম পিংকুল

একমাত্র ছেলে সুহাদ হোসেন খান (৩৫) হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদার। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাকেন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায়। অন্ধ ও পঙ্গু গর্ভধারিণী বৃদ্ধা মা মোরশেদা খানম পিংকুলের (৬০) খোঁজ নেয় না ৮ বছর ধরে।

এ বিষয়ে খাসকাউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হযরত আলী মাস্টার বলেন, আমি একটানা ২৭ বছর ও পরে ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত মোট ৩০ বছর চৌহালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলাম। সে সময়ে সহযোদ্ধা চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়ন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন মোরশেদা খানম পিংকুল। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে টানা ১০ বছর এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি তিনি চৌহালী উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগেরও দায়িত্বে ছিলেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কাণ্ডারি মোরশেদা খানম পিংকুল আওয়ামী লীগের সব আন্দোলন সংগ্রামের সম্মুখ সারির সহযোদ্ধা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন চৌহালী উপজেলা আনসার ও ভিডিপির দলপতি ছিলেন। শত শত অসহায় অনাহারী নারীদের তিনি সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তাদের মুখে আহার তুলে দিতে তিনি অফিসে অফিসে ঘুরে বিধবা ভাতা কার্ড, বয়স্ক ভাতার কার্ড, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতার কার্ড, ভিজিডি ও ভিজিপি কার্ড করে দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি রিলিফ ও ত্রাণ পাইয়ে দিয়েছেন বহু অসহায় মানুষকে। গর্ভবতী মা ও দুস্থ রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন।

আজ তার এ অসহায় অবস্থায় তার বিত্তবান একমাত্র ছেলে তার পাশে নেই। সে প্রায় ৮ বছর ধরে তার মায়ের কোনো খোঁজখবর নেয় না।

রাক্ষুসী যমুনায় বাড়িঘর হারিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের মৃত মুনা খানের বাড়ির আঙ্গিনায় খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে থাকেন। কেউ খেতে দিলে একবেলা খেতে পান, না দিলে রাত কাটে অনাহারে। এ ভাবেই চলছে তার জীবন। চলতি মাসে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেলে তার কষ্টও বেড়ে যায়। এতে তিনি চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন। ফলে কয়েক দিন আগে এলাকাবাসীর দানের টাকায় তাকে টিনের একটি ঘর তুলে দেওয়া হয়। সেটার তিন দিকে বেড়া থাকলেও সামনের অংশে বেড়া ও দরজা নেই। ফলে সেখান দিয়ে হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। তাই পলিথিন দিয়ে বাতাস ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চারদিকের বড় বড় ফাঁকফোকর দিয়ে হু হু করে ঠাণ্ডা বাতাস ঢোকায় বাস করা দুরূহ হলেও সেখানেই খেয়ে না খেয়ে রাতদিন পড়ে থাকেন তিনি। তার আরেক দিনমজুর ছেলের সংসারে পাঁচ সদস্য। তাদেরই ঠিকমতো দিন চলে না। তার ওপরে এই অন্ধ ও পঙ্গু বৃদ্ধার বোঝা তার কষ্ট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে হতদরিদ্র লাইলী খানম, রেহানা বানু ও মাসুদ খান আরটিভি নিউজকে বলেন, টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার মামুননগর ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রামের আওলাদ হোসেনের সঙ্গে চৌহালীর খান পরিবারের মোরশেদা খানম পিংকুলের বিয়ে হয়। এক সময়ের খরস্রোতা যমুনার শাখা নদীর ভাঙনে ঘরবাড়ি জমিজমা নিয়ে গেলে চৌহালী উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের চর জাজুরিয়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এরপর স্বামী ও বড় ছেলের মৃত্যুতে তিনি খুবই অসহায় হয়ে পড়েন। নিজে খেয়ে না খেয়ে ও আনসার ভিডিপির চাকরি ও বিভিন্ন এনজিওর কাজ করে ছোট ছেলে সুহাদ হোসেন খানকে মানুষ করেন। সে লেখাপড়া তেমন না করে ২৫ বছর বয়সে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে হাউজিং কোম্পনিতে ইলেকট্রিক কাজ করে তিনি বেশ টাকা-পয়সার মালিক হন। এরপর নিজেই হাউজিং ইলেকট্রিক ঠিকাদারের কাজ করেন।

বিয়ে করে এখন ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় ফ্ল্যাট বাসায় স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ আট বছর ধরে মায়ের কোনো খোঁজ ও ভরণপোষণ দেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন কাজ হয়নি। তিনি কোনো পরিচয় ও বাসার ঠিকানা দেন না। ফলে স্বামী-সন্তানের শোকে কাঁদতে কাঁদতে তিনি অন্ধ ও অসুস্থ হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে চিকিৎসা না করতে পেরে তার দুই পা পঙ্গু হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে চৌহালী আওয়ামী লীগের সভাপতি তাজউদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এ বিষয়ে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, তার পক্ষ থেকে নিকট আত্মীয়দের কেউ আবেদন করলে ঘরের জন্য টিন ও বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ ছাড়া তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

এমআই/টিআই

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ফার্মগেট থেকে বাণিজ্য মেলা পর্যন্ত বাস চলবে
X
Fresh