• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ওরা স্কুলে যায় সাইকেলে (ভিডিও)

সুজয় কুমার বকসী, নড়াইল

  ২৮ মে ২০১৭, ১৪:৪৫

নড়াইল সদর উপজেলার গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী এখন ছেলেদের মতোই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করে। তারা দেখিয়েছে মেয়েরাও সব কিছু করতে পারে। এখন আর তাদের ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করে সময় নষ্ট করতে হয় না। বাবা-মায়ের কাছ থেকেও বাড়তি টাকাও নিতে হয় না। বখাটেরাও রাস্তা থেকে আগের মতো উত্যক্ত করার সুযোগ পায় না।

সাইকেল চালিয়ে যাতায়াত করায় প্রথমদিকে অনেকইে নানা রকম মন্তব্য করেছে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে ওরা এখন নিয়মিত ও সময়মত স্কুল উপস্থিত হতে পারছে। বিদ্যালয়ের ফলাফলও ভালো হচ্ছে।

জানা গেছে, নড়াইল শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩শ'। এই বিদ্যালয়টিতে নড়াইল সদর ও যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। দু'টি উপজেলার মালিয়াট, বাকলি, হাতিয়াড়া, গুয়াখোলা, হাতিয়াড়া, বেনাহাটি, কমলাপুরসহ এগারোটি গ্রামের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে।

দুই জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় এই এলাকাটি অনেকটা অবহেলিত এবং অধিকাংশ রাস্তাঘাট কাচা। ৫/৭ কিলোমিটার দূরের শিক্ষার্থীরাও এই বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। ৪/৫ বছর আগে ছেলেরা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করলেও মেয়েদের ভ্যানে ও পায়ে হেটে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হতো। দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের যৌথ চেষ্টায় মেয়েদের সাইকেল কিনে দেয়া হয়।

৪ বছর আগে হাতে গোনা কয়েকজন ছাত্রী সাইকেল নিয়ে স্কুলে যাতায়াত শুরু করে। এরপর এর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। বর্তমানে শতাধিক ছাত্রী নিয়মিত সাইকেলে নিয়ে যাতায়াত করে। এসব ছাত্রীরা তাদের বান্ধবীদেরকেও সাইকেলের পেছনে বসিয়ে স্কুলে নিয়ে আসে যায়।

মালিয়াট গ্রামের সেজুতি রায় বলেন, আমি ৫ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসি। কিন্তু স্কুলে সাইকেল গ্যারেজ না থাকায় কিছুদিন আগে আমাদের বান্ধবীদের দুটি সাইকেল চুরি হয়ে যায়। স্কুলে একটি সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের দরকার।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী দীপ্তি পাঠক বলেন, আগে ভ্যানে করে স্কুলে আসতে হতো। তখন বাবা মায়ের অনেক টাকা খরচ হতো। ভ্যান না পাওয়ায় অনেক সময় হেটে স্কুল আসতে হতো। এখন আর সমস্যা হয় না।

দীপ্তি আরো জানায়, এখন আমরা নিয়মিত ক্লাস করতে পারি এবং পড়াশোনাও ভালো হচ্ছে। তবে সাইকেলে চালিয়ে যাতায়াতের সময় রাস্তার অন্যান্য যানবাহন সাইড দিতে চায় না। অনেকে ব্যঙ্গ করে। কয়েকদিন আগে মোটর সাইকেলের ধাক্কায় আমাদের দুজন ছাত্রী গুরুতর আহত হয়।

ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী শান্তনা গুপ্ত বলে, আমার বাড়ি বাকলি গ্রামে। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এক সময়ে ভ্যানে ও পায়ে হেটে স্কুলে চলাচল করতাম। তখন ঠিক সময়ে ক্লাসে যেতে পারতাম না। বাবা-মার ভ্যান ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত টাকা দিতেও অসুবিধা হতো। তখন আমরা কয়েকজন ছাত্রীরা মনে করলাম ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসতে পারে তাহলে আমরা পারবো না কেন? তখন থেকে স্যার ও আমাদের বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে সাইকেল কেনার সিদ্ধান্ত নেই। বাড়িতে ও গ্রামের ফাঁকা জায়গায় সাইকেল চালানো শিখে আমরা কয়েকজন স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করি।

দশম শ্রেণীর ছাত্রী খুশি সিকদার জানায়, এই স্কুলে ১১টি গ্রামের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। ছেলেদের মতো মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। প্রথমদিকে সাইকেল চালাতে লজ্জা পেতাম। এখন আর লজ্জা পাই না।

একই স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র সোহাগ গুপ্ত বলে, আমাদের স্কুলের ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সাইকেল চালিয়ে আসে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে বখাটেরা তাদের উত্যক্ত করার চেষ্টা করলে আমরা ছেলেরা প্রতিহত করি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল বলেন, গুয়াখোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। এই স্কুলে প্রায় ৩শ' ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ১৪৩ জন ছাত্রী রয়েছে। এই স্কুলের মেয়েরা ৫/৭ কিলোমিটার দূর থেকে স্কুলে আসে। তাদের হেটে আসতে অনেক সময় লাগে এবং ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে লেখা পড়ায় সমস্যা হচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা ও অভিভাবকরা চিন্তু ভাবনা করে মেয়েদের সাইকেল চালনায় অনুপ্রেরণা দিয়েছি। তাদেরকে বলেছি ছেলেরা যদি সাইকেল চালিয়ে আসতে পারে, তাহলে তোমরাও পারবে। পরে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সাইকেল কিনে দেন। এখন ওরা নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাতায়াত করছে।

সাইকেল নিয়ে স্কুলে আসতে এখন সময় কম লাগছে উল্লেখ করে এ শিক্ষক আরো জানান, অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে এবং নিয়মিত ও সময়মত স্কুলে উপস্থিত হতে পারছে শিক্ষার্থীরা। যার কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও বেড়েছে। এ বছর এই বিদ্যালয় থেকে সব ছাত্র-ছাত্রীরাই বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষা দিয়ে শতভাগ পাশ করেছে।

এসজে/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh