• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ওরা যদি আমার ছেলেকে গুলি করে মারত তাহলে ওর এত কষ্ট হতো না : আবরারের মা

স্টাফ রিপোর্টার,  কুষ্টিয়া

  ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৮:৩৯
ওরা যদি আমার ছেলেকে গুলি করে মারত, তাহলে ওর এতো কষ্ট হতো না: আবরারের মা
ফাইল ছবি

আগামীকাল রোববার নিহত বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে। আগামীকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে। ইতোমধ্যে মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

দেশে-বিদেশে আলোচিত এই হত্যার আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি আশা করেছে তার পরিবার। হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এভাবে হত্যা বন্ধ হবে এমনটাই বললেন আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন।

তিনি বলেন, ওরা যদি আমার ছেলেকে গুলি করে মারতে পারতো, তাহলে ওর এতো কষ্ট হতো না। ওরা খুব কষ্ট দিয়ে মেরেছে।

শনিবার কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কে আবরারের বাসায় গেলে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন রোকেয়া খাতুন। রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকবেন- আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। দুপুরে বাসযোগে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন তারা। তবে খুনিদের দেখতে চান না বলে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন যাননি।

তিনি বলেন, ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গিয়েছে, কাল আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না হয়।

মামলায় আরও আসামি হওয়া দরকার ছিল বলে উল্লেখ করে আবরারের মা বলেন, আশপাশের রুম থেকে ফাহাদের নির্যাতনের খবর জেনেও বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। বিষয়টি জানালে ফাহাদের এই নির্মম মৃত্যু হয়তো হতো না।

আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি লেখেন 'আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আশা করছি। ভাইয়ের রায় ঘোষণা শুনতে আব্বার সঙ্গে আমিও ঢাকায় যাবো। আমাদের সঙ্গে আমাদের পরিবারের আরও অনেকে যাবে।'

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।

ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু।

পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। গ্রেপ্তার ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত। মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামের পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিনজন আসামি।

তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না। চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।

এরপর ১৮ মার্চ ওই আদালতে মামলাটি বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। করোনায় প্রথম দফা ছুটি শেষে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এরপর মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

গত ১৪ মার্চ এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ ২৮ নভেম্বর এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা হয়।

এসএস/এসকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ইসরায়েলে ইরানের হামলা : প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ
আহত আ.লীগ নেতাকে চিকিৎসা দিতে দেরি করায় ডাক্তারকে মারধর
এবার ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাল লেবানন
নরসিংদীতে বালু ব্যবসা নিয়ে সংঘর্ষ, নিহত ১ 
X
Fresh