• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

'গরমে চাম চুলি গ্যেয়অই'

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

  ২৪ মে ২০১৭, ১৬:২৮

পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলেই কুশল বিনিময় হওয়াটা স্বাভাবিক। কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের ভাল মন্দ জানার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে খবর নেয়া হয়। সব পেশার মানুষেরা পেশাগত কাজের ফাঁকে সহকর্মীর খোজ খবর নেন। স্বাভাবিকভাবেই কেমন আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই ভাল আছেন জবাব পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তার শারীরিক কিংবা পেশাগত ও সাংসারিক সুবিধা অসুবিধার কথা জানানো হয়।

তবে কুশল বিনিময়ের প্রথম প্রশ্ন ‘কেমন আছেন’ ঠিক থাকলেও। এই প্রশ্নের উত্তরের ধরণ পাল্টে গেছে বর্তমান সময়ে। এখন কেমন প্রশ্নের উওরে মানুষ বলে ‘গরমে অবস্থা কাহিল’ বা ‘এই গরমে জীবন শেষ’। কিছু দিন ধরে দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অসহ্য গরমে রিক্সা শ্রমিক, ঠেলাগাড়ি শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক থেকে শুরু করে প্রচণ্ড গরমে কাজ করতে গিয়ে কাহিল হচ্ছে দরিদ্র মানুষ।

দরিদ্র মানুষগুলো একটু সুযোগ পেলেই গাছের ছায়া কিংবা ভবনের নিচে ছায়ায় আশ্রয় নেয় এক দণ্ড শান্তির আশায়। কেবল খেটে খাওয়া মানুষ বলে নয় সাধারণ মানুষ প্রচণ্ড গরমে ঘরে থাকতে পারছে না। একেই তো গরম তার ওপর বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং যেন মরার ওপর খড়ার ঘা হয়ে ধরা দিয়েছে জনজীবনে।

চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়ায় কাতার প্রবাসী ফরিদুল আলম দেশে এসেছেন ১০ দিন আগে। তার সঙ্গে দেখা হয়েছে প্রতিবেশি ইব্রাহীমের। প্রতিবেশি ইব্রাহীম প্রবাসী ফরিদুল আলমকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কেন আচন বদ্দা? হত্তে আইস্য? ( কেমন আছেন বড় ভাই? কখন আসলেন?) উত্তরে ফরিদুল আলম জানালেন, 'কেন আচন হদ্দে না? গরমে চাম চুলি গ্যায়ে।' (কেমন আছেন জিজ্ঞেস করছো? গরমে প্রাণ চলে যাচ্ছে)। কেবল বাকলিয়ায় নয়, চট্টগ্রামের সব জায়গায় কুশল বিনিময়ের বাক্যের ধরণ পাল্টে গেছে প্রচণ্ড গরমের কারণে।

চল্লিশোর্ধ্ব রিকশা চালক গুরু মিয়া রাস্তার ধারে বিক্রি করা বরফ দেয়া শরবত খেতে খেতে আরটিভি অনলাইনকে জানান, এমন গরম মনে হয়ে আমার জীবনে আর দেখি নাই। সূর্যের তাপ চামড়া ছিঁড়ে মাংসের ভিতর ঢুকে যাচ্ছে। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভাড়া নিয়ে গেলে জিহ্বা শুকায়ে যায়। পানির তেষ্টা মেটাতে ৫ টাকা দিয়ে এক গ্লাস বরফের শরবত কিনে খাচ্ছি। শুধু গুরু মিয়া নয় শরবত গ্লাসে দেখা গেল আগ্রাবাদ টিএন্ডটি স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে। রোদের গরমে ঘামে ভিজে গেছে তার শার্ট।

কাপাসগোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নাজমা বেগম আরটিভি অনলাইনকে জানান গরমে ঘরেও থাকা যাচ্ছে না। ফ্যানের বাতাসগুলোও গরম হয়ে গেছে। এ বছর প্রচণ্ড গরম পড়ছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে ঘর আগুনের ঘরে পরিণত হয়। তাছাড়া শিশুরাও জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারছে না জ্বরের কারণে।

এদিকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা ওয়ারিসুন্নবী আরটিভি অনলাইনকে জানান, এই ধরণের গরম আরো দুই একদিন থাকবে। সোমবার চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে জুনের দিকে আস্তে আস্তে উচ্চ তাপমাত্রা কমে আসবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকি আরটিভি অনলাইনকে জানান, এই গরমে প্রথম কাজ হচ্ছে ঢিলেঢালা কাপড় পরা। সাদা কাপড় পরলে বেশি ভাল হয়। তৈলাক্ত খাবার পরিহার করে ফল খেতে হবে। হোটেলের খাবার খাওয়ার ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম পটাশিয়াম বের হয়ে যাওয়ায় ডাবের পানি, স্যালাইন খেতে হবে বেশি।

তিনি আরো বলেন, রাস্তার ধারে বিক্রি হওয়া বরফের সরবত খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এসব শরবত খেয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছে বেশি।

এই গরমে অভিভাবকদেরকে শিশুদের প্রতি বেশি নজর দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, শিশুদেরকে ফ্যানের নিচে খালি গায়ে শোয়ানো যাবে না। কমপক্ষে বুকের উপর একটি কাপড় দিয়ে রাখতে হবে। অন্যথায় বুকে কফ লেগে নিউমোনিয়াসহ নানা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

তিনি আরো বলেন, যারা এসি ব্যবহার করেন তাদেরকে কমপক্ষে ২ ঘণ্টা পরপর এসি থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ৫/৬ মিনিট থেকে ফের এসি রুমে যেতে হবে। রোদ থেকে এসে গোসল না করা এবং ঠাণ্ডা পানি না খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেন তিনি।

রোদের প্রখরতা থেকে বাঁচতে দৈনিক ২ বার গোসল করা প্রয়োজন জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, গোসল ২/৩ বার করলেও সাবান একবারের চেয়ে বেশি লাগানো যাবে না।

আর/এসএস/এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh