• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গোয়েন্দা নজরদারিতে আরো ১শ' বিলাসবহুল গাড়ি

শাহীনুজ্জামান, চট্টগ্রাম

  ২১ মে ২০১৭, ১৫:৪০

যে কারনেট-ডি-প্যাসেজ আইনের সুবিধা দেখিয়ে বছরের পর বছর শুল্কমুক্ত সুবিধায় দেশে গাড়ি আমাদানির সুযোগ দেয়া হয়েছে সেই কারনেট আইনটিই রেটিফাই বা অনুমোদন করেনি বাংলাদেশ। আর এই কারনেট সুবিধার অপব্যবহার করে অনেকেই এসব বিলাসবহুল গাড়ি এনে বিক্রিও করে দিয়েছেন। যার কোনো রকম শুল্ক পরিশোধ করা হয়নি। এরকম ১১৯টি গাড়ির বিরুদ্ধে জোরেসোরে অভিযানে নেমেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি গাড়ি জব্দও করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারনেট-ডি-প্যাসেজ আইনটি অনুমোদন না হওয়ার বিষয়টি আরটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। পরে কাস্টস হাউস চট্টগ্রামে যোগাযোগ করলে সেখানকার এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তাও কারনেট আইনটি অনুমোদন না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, 'কারনেট সুবিধায় বিভিন্ন দেশে শুল্কমুক্ত সুবিধায় বিভিন্ন গাড়ি আমদানির সুযোগ দেয়া হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী আমাদের দেশেও এ সুবিধা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারনেট-ডি-প্যাসেজ আইনটি যে বাংলাদেশ অনুমোদন করেনি সেটা আসলে এতদিন কেউই খেয়াল করেনি। তবে অবশেষে বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। তাই কারনেট সুবিধায় আর কোনো গাড়ি বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবেনা।'

এদিকে বাংলাদেশ কাস্টমস জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইটেও কারনেট আইনটিতে বাংলাদেশ যে স্বাক্ষর করেনি তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘কারনেট ডি প্যাসেজ হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা বা ডকুমেন্ট যা ব্যবহার করে একজন পর্যটক বা ভ্রমণকারী নিজ গাড়ি চালিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে পারেন। উক্ত ব্যবস্থায় গাড়িটি সাময়িক আমদানি সুবিধার আওতায় কোনো প্রকার শুল্ক-কর পরিশোধ ছাড়াই চলাচল করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘নিজ দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে ভ্রমণকারী/পর্যটককে কারনেট সংগ্রহ করে তা নিয়ে ভ্রমণ করতে হবে। 'ইউনাইটেড নেশনস জিআই কাস্টমস কনভেনশন অন দ্য টেমপোরারি ইমপোরটেশন অব প্রাইভেট রোড ভেহিকলস- ১৯৫৪' এর আওতায় এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশ এখনো ওই কনভেনশন স্বাক্ষর করেনি।’

চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, মূলত ডিউটি ফ্রি বা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা পায় বিদেশি কূটনীতিক এবং বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা। তবে এটি কারনেট-ডি-প্যাসেজ সুবিধার মধ্যে পড়েনা।

কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে যারা এই কারনেট শুল্কমুক্ত এই সুবিধা ব্যবহার করে এসব গাড়ি এনেছেন তাদের বেশির ভাগই প্রবাসী বাংলাদেশি, যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাদের অনেকেই এসব গাড়ি কারনেট সুবিধায় এনে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে এই বিলাসবহুল গাড়িগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।

এদিকে কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের রেজিস্টার ও স্টাফ শাখা কারনেট-ডি-প্যাসেজ এর এ রক্ষিত নথি অনুযায়ী, এই আইনের সুবিধা দেখিয়ে এখন পর্যন্ত কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য স্টেশন হতে ২৪৯টি গাড়ি খালাস করা হয়েছে। এর মধ্যে পুন:রপ্তানি হয়েছে ১২৯টি গাড়ি। পুন:রপ্তানি হয়নি এমন গাড়ির সংখ্যা ১২০টি। তবে এর মধ্যে শুল্ককর পরিশোধ করেছে মাত্র ১টি গাড়ি। আর বাকি ১১৯টি গাড়ি দেশে অবৈধভাবে কোন রকম শুল্ক পরিশোধ করা ছাড়াই চলছে। যারা এসব গাড়ি ব্যবহার করছেন তাদের অনেকেই আবার ভুঁয়া কাগজপত্রও তৈরি করে নিয়েছেন। তাই এসব অবৈধ গাড়ি আটক করার জন্য অভিযান চালাচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

চট্টগ্রামের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি অবৈধ গাড়ি আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩ মে চট্টগ্রামের মুরাদপুরের কার কোল্ড অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার থেকে দু'টি মার্সিডিজ এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের প্রধান ছাত্রাবাসের মেইন গেইট থেকে একটি মিৎসুবিসি পাজেরো গাড়ি জব্দ করা হয়। এছাড়া গেল বছর নগরীর পূর্ব নাছিরাবাদ থেকে ১টি মিৎসুবিসি শোগান, পাহাড়তলীর ডিটি রোড থেকে ১টি পোরশে এবং মেহেদিবাগ থেকে ১টি রেঞ্জ রোভার ল্যান্ড রোভার গাড়ি জব্দ করা হয়।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর আরো জানিয়েছে, শুল্ক ফাঁকি দেয়া এসব অবৈধ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাদের কাছে আরো বেশ কয়েকটি গাড়ির ব্যাপারে তথ্য আছে যেগুলো তারা নজরদারিতে রেখেছেন। যাচাই বাছাই করে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া গেলে খুব শীঘ্রই এসব অবৈধ বিলাসবহুল গাড়িগুলো জব্দ করা হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh