অবহেলিত মা শয্যাশায়ী থাকায় বিচারক বাসায় গিয়ে মামলা নিলেন
বরিশালে চিকিৎসার অভাবে শয্যাশায়ী ৭৫ বয়সি এক বৃদ্ধা দুই সন্তানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। বৃদ্ধা সশরীরে আদালতে উপস্থিত হতে না পারায় বিচারক নিজে ওই বৃদ্ধার বাসায় গিয়ে মামলা গ্রহণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টায় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ নগরীর বৈদ্যপাড়ার জোড়াপুকুর এলাকার জাহানুর বেগমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারকে বিবাদী করে মামলাটি গ্রহণ করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, খুলনায় জাহানুর বেগম স্বামীর ঘরে থাকতেন। তিনি চিকিৎসার জন্য খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলে ক্রেতা বরিশালে এলে তাদের সঙ্গে কথা বলে যায়। ২২ অক্টোবর আসামিরা বরিশালে এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধা দেয় এবং তার ভরণপোষণ ও চিকিৎসার খরচ দিতে চান না। এরপর ছেলেমেয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে চলে যায় এবং এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ নেয়নি।
তার স্বামী ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মারা যাওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হন। সর্বশেষ ব্রেইন স্ট্রোকের ফলে মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিস হয়ে যায়। মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও ভরণপোষণের আবেদন করা হয়।
বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩ এর ৫ ধারা মোতাবেক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে ওকালতনামাসহ নালিশি দরখাস্ত বাহক মারফত আদালতে প্রেরণ করেন জাহানুর বেগম। বাদী পক্ষের আইনজীবী ও নালিশী দরখাস্তের বাহককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিচারক জানতে পারেন বাদী নিজেই শয্যাশায়ী, যার কারণে তিনি আদালতে আসতে পারেননি। বিচারক এজলাসের কার্যক্রম শেষে আমাকে সঙ্গে নিয়ে নালিশি দরখাস্তের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য বাদীর বাসায় যান। বৃদ্ধার আইনজীবী ও আমার উপস্থিতিতে বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। বাদীর অভিযোগ সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় বিচারক মাসুম বিল্লাহ বিবাদীদের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে সমন জারির পাশাপাশি ১ নভেম্বরের মধ্যে আসামিদের আদালতে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।
জাহানুর বেগম বর্তমানে তার ছোট মেয়ে সাহিদার সঙ্গে বসবাস করছেন।
এমআই/টিআই
মন্তব্য করুন