• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

করোনাকালে কোটালীপাড়ায় বেড়েছে বাল্যবিয়ে

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭:১৪
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমারী রেখা রানী গার্লস হাইস্কুল
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমারী রেখা রানী গার্লস হাইস্কুল, ছবি: প্রতিনিধি

দেড় বছর আগে যাদের কাঁধে ছিল স্কুলব্যাগ। বান্ধবীদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় ও লেখাপড়া করে যাদের সময় কাটতো; তাদের এখন সময় কাটে সংসারের ঘানি টেনে। কিশোরী বয়সেই কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসার জীবনের বোঝা।

সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমারী রেখা রানী গার্লস হাইস্কুল থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছে ৯ ছাত্রী। এই ৯ ছাত্রীর মধ্যে ৫ জনেরই করোনাকালে বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারের কাজকর্ম করে এদের এখন সময় কাটে।

অপরদিকে উপজেলার পিঞ্জুরি ইউনিয়নের দিঘিরপাড় গ্রামের নির্মল সেন স্কুল এন্ড মহিলা কলেজের ৯ জন এসএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬ জনেরই বিয়ে হয়েছে করোনাকালে। বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থীই বর্তমানে স্কুলে আসছে না।

দারিদ্র্যতা ও সন্তানদের লেখাপড়ার অনিশ্চিত জীবনের কথা চিন্তা করে বাবা-মা তাদের বিয়ে দিয়েছেন বলে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করা সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন। এদিকে বাবা-মায়ের ইচ্ছাই এ সকল ছাত্রীরা বাল্যবিয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন এ সকল শিক্ষার্থীরা।

উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের কুমারী রেখা রানী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় বাড়ৈ আরটিভি নিউজকে বলেন, এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের বিদ্যালয়ের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অনেক ছাত্রীই বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বিশেষ করে এসএসসি পরীক্ষার্থী ৯ ছাত্রীর মধ্যে ৫ জনকে তাদের অভিভাবকরা বিয়ে দিয়েছেন। শুধু আমাদের বিদ্যালয়ই নয়, উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোর একই অবস্থা।

এর জন্য বিদ্যালয় খোলার অনিশ্চয়তা ও দারিদ্র্যতাকে দায়ী করেছেন এই শিক্ষক।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে ওই বিদ্যালয়ের বাল্যবিয়ের শিকার এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাবা-মা যেটি ভালো মনে করেছেন তারা সেটিই করেছেন। বাবা-মায়ের ইচ্ছাই আমি বিয়েতে বসতে রাজি হয়েছি। এখানে আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোন বিষয় নেই। তবে আমার স্বামীর বাড়ি থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করবো।

এক অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আগে আমি ফেরি করে সংসার চালাতাম। করোনার দেড় বছরে কোন কাজকর্ম নেই। এরই মাঝে মেয়ে বড় হয়ে গেছে। হঠাৎ করে ভালো একটি ছেলে পেয়েছি। তাই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি।

ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কোটালীপাড়া এপির ম্যানেজার সিলভিয়া ডেইজি বলেন, করোনাকালে অনেক অভিভাবকই অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছেন। যার ফলে এসব অভিভাবকদের মাঝে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক অভিভাবকই তাদের শিশু কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন। তবে এটা তাদের ঠিক হয়নি।

তিনি আরও বলেন, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে বিভিন্ন এনজিওর পাশাপাশি সমাজের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বেশী করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এছাড়া আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে বাল্যবিয়ে অনেক অংশেই কমে যাবে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শ্রীময়ী বাগচী আরটিভি নিউজকে বলেন, করোনার আগে এ উপজেলায় বাল্যবিয়ের সংখ্যা খুব কম ছিল। করোনার মাঝে হঠাৎ করে এ সংখ্যা বেড়ে গেছে। আমরা প্রতিনিয়ত বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করছি খুব শিগগিরই এ সংখ্যা কমে যাবে।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গোপালগঞ্জে প্রসূতির মৃত্যু, চিকিৎসকসহ গ্রেপ্তার ৩
নিরাপত্তা, দারিদ্র্যের কারণে বেড়েই চলেছে বাল্যবিবাহ
ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১০
X
Fresh