• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
logo

একটি সরকারি ঘর পেলে অন্ধ বাউলের কষ্ট দূর হবে

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৬ জুলাই ২০২১, ১৫:০১
একটি সরকারি ঘর পেলে অন্ধ বাউলের কষ্ট দূর হতো
ছবি: আরটিভি নিউজ

সুনামগঞ্জে রয়েছে শত শত বাউল শিল্পী। তাদেরই একজন অন্ধ বাউল গোলাপ মিয়া। সুরমা নদীর ফেরি-নৌকায় গান গেয়ে তার সংসার চলে। মহামারির এ কালে কষ্টেসৃষ্টে খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করলেও নেই থাকার জায়গা। জরাজীর্ণ বসতঘরটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে থাকায় মাথা গোঁজার ঠায় মিলেছে অন্যের বাড়িতে।

জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা দরিদ্র ও ভূমিহীন ৪১৬টি পরিবারকে বাড়িসহ মোট ৪১৬টি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বাউল গোলাপ মিয়া দরিদ্র হলেও তিনি ভূমিহীন না হওয়ায় সরকারি ঘর পাননি।

বাড়ি আছে কিন্তু ঘর নেই এমন দরিদ্র পরিবারের জন্য এখনও সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেয়া শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরান শাহরিয়ার।

অন্ধ বাউল গোলাপ মিয়ার বয়স ৬৮ বছর। সদর উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কাইয়ারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৬ বয়সে গোলাবারুদের ধোয়ায় তার দুই চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়। এরপর বেঁচে থাকার তাগিদে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক রশিদ মিয়ার কাছ থেকে তিনি শুনে শুনে গান গাওয়া শেখেন।

পরে ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজানো আয়ত্ত করেন। প্রায় তিন যুগ ধরে সুনামগঞ্জের রাস্তাঘাট, ফেরি নৌকায় বেহালা ও সরোজ বাজিয়ে গান গেয়ে চলেছেন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হিসেবে সরকারি ভাতা পান তিনি। তার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে। বড় মেয়েকে গ্রামে বিয়ে দিয়েছেন। অন্য ছেলে মেয়েদের মধ্যে এক ছেলে ও দুই মেয়ে লেখাপড়া করছে। গান শুনিয়ে শ্রোতাদের কাছ থেকে ৫-১০ টাকা করে যা পান তা দিয়ে সংসার চলছে। তবে করোনাকালে আগের-মতো গান গাইতে না পারা ও মাথা গোজার বসতঘরটি জরাজীর্ণ হয়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ায় পড়েছেন চরম সংকটে। নিজের বসতঘরে থাকতে না পেরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ৬ মাস ধরে থাকছেন বড় মেয়ের বাড়িতে।

জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম মানিক আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি অন্ধ বাউল গোলাপ মিয়া বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাটে ও নৌকায় গান গাইছেন। গান গেয়েই তিনি সংসার চালাচ্ছেন। একটি সরকারি ঘর পাওয়া তার প্রাপ্য ছিল।’

বাউল গোলাপ মিয়া ও তার স্ত্রী হোসনে আরা আরটিভি নিউজ বলেন, ‘আমাদের নিজেদের ছোট্ট একটি বাড়ি ও দুই চালা বসতঘর আছে। কিন্তু ঘরের ভাঙা চালা দিয়ে পানি পড়ে। কয়েকটি বাঁশের খুঁটি দিয়ে আটকে রাখছি। যেকোন সময় ঘরটি ভেঙে পড়তে পারে। ছেলে-মেয়েসহ সবাইকে নিয়ে ৬ মাস যাবত মেয়ের বাড়িতে থাকছি। একটা ঘর পেলে কষ্ট দূর হতো।’

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে অন্ধ বাউল শিল্পী গোলাপ মিয়াকে নগদ ১০ হাজার টাকা ও চাল-ডাল, চিনিসহ খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। শুনেছি তার ঘরটি জরাজীর্ণ। মুজিব বর্ষের ঘর দেয়া আপাতত শেষ। নতুন ঘরের বরাদ্দ এলে তাকে একটি ঘর দেয়া হবে। এছাড়াও লকডাউন শেষে তাকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হবে। ’

এসজে/জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh