• ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যমুনার বাঁকে বাঁকে ভাঙছে ঘরবাড়ি

টাঙ্গাইল (দক্ষিণ) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৫ জুলাই ২০২১, ১১:৫৬
যমুনার বাঁকে বাঁকে ভাঙছে ঘরবাড়ি
যমুনার বাঁকে বাঁকে ভাঙছে ঘরবাড়ি

অসময়ে পানি কমতে থাকায় যমুনা নদীর বাঁকে বাঁকে ভাঙন শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় এবারের বর্ষার শুরুতে ইতোমধ্যে দুই শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে গেছে। ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে যমুনার স্রোতের বেগ কমানোর চেষ্টা করছে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলায় বর্ষার শুরুতেই যমুনার ভাঙন শুরু হয়। যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় গত ৫ জুলাই (সোমবার) থেকে ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে ৯ জুলাই (শুক্রবার) পর্যন্ত শতাধিক বাড়িঘর, তাঁত ফ্যাক্টরি, স’মিল ও হাট যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গত ১২ জুলাই থেকে সোমবার (১৯ জুলাই) দুপুরে পর্যন্ত যমুনার পানি কিছুটা কমেছিলো। যমুনায় পানি কমার সময়ও টাঙ্গাইলের চার উপজেলায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদ, মাদরাসা ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

যমুনা তীরবর্তী বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যমুনার পশ্চিম পাড় তথা নদীর ডান তীরে সিরাজগঞ্জের অংশে ‘চায়না বাঁধ’ নির্মাণ করায় পানির স্রোত বাঁধে বাধা পেয়ে পূর্বপাড় অর্থাৎ নদীর বাম তীরে এসে আছড়ে পড়ছে। ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী ও নাগরপুর উপজেলার অংশে যমুনার বাঁকে বাঁকে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এছাড়া ভূঞাপুর অংশেও ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে।

সরজমিনে জানা যায়, সদর উপজেলার উত্তর চরপৌলী, দশখাদা, হাটখোলা, পানিকোড়া, মাকরকোল, কেশবমাইঝাইল, তিতুলিয়া, নয়াপাড়া, কুকুরিয়া, বারবাড়িয়া, দেওরগাছা, রশিদপুর, ইছাপাশা, খোশালিয়া, চানপাশা, মসপুর, বারবেলা, চকগোপাল; কালিহাতী উপজেলার আলীপুর, ভৈরববাড়ী, নাগরপুর উপজেলার পাইকশা মাইঝাইল, খাস ঘুণিপাড়া, খাস তেবাড়িয়া, চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়, শাহজানি, ভারড়া, পাঁচতারা, আগদিঘলীয়া এবং ভূঞাপুর উপজেলার ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেশি।

পানি কমতে থাকায় কালিহাতী উপজেলার আলীপুর মাদরাসার অর্ধাংশ, আলীপুর জামে মসজিদের ওজুখানাসহ কিয়দংশ, আলীপুর হাটের দুই তৃতীয়াংশ গত তিন দিনের ভাঙনে যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আলীপুরের এসব স্থাপনা ভাঙনরোধে পাউবো ২৫০ মিটার এলাকায় জরুরিভাবে তিন দফায় প্রায় ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছে। যমুনার ঘূর্ণাবর্ত তীব্র স্রোতে জিও ব্যাগের সাময়িক বাঁধ ভেঙে স্থাপনা, বাড়িঘর ও ফসলি জমিতে আঘাত হানছে।

যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় সদর উপজেলার চরপৌলী হাটখোলা সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড হাটখোলাটি রক্ষার জন্য জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে। জিও ব্যাগগুলোও যমুনার তীব্র ঘূর্ণাবর্ত স্রোতে তলিয়ে যায়। পাউবো বার বার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করলেও তেমন ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ওই সময় টাঙ্গাইল সদর ও কালিহাতী উপজেলার সীমান্ত এলাকা উত্তর চরপৌলী ও আলীপুর গ্রামের অংশে অসমাপ্ত শেখ হাসিনা সড়কের (নর্দান প্রজেক্ট) প্রায় ৬০০ মিটার নদীগর্ভে চলে গেছে।

নদীতীরের বাসিন্দারা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছে, শ’ শ’ একর ফসলি জমি, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই তাদের বাড়িঘর, গাছপালাসহ গবাদি পশু অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ক্ষেতের ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। তার ওপর চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটি গিলে খাচ্ছে রাক্ষসী যমুনা। যমুনার সঙ্গে যুদ্ধ করে জীবনযাপন করছেন নদী পাড়ের মানুষ। যমুনার অব্যাহত ভাঙনে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর এ চার উপজেলার চরাঞ্চলের মানচিত্র পাল্টে যাচ্ছে।

যমুনার ভাঙনকবলিতরা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছে, প্রমত্ত যমুনা বহুরূপী নদী। নদীতীরে বিকেলে যা দেখা গেছে- সকালে তা আর খুঁজে পাওয়া যায় না। রাতে ঘুমাতে গেলেও মাঝরাতে উঠে অনেকে ঘর সরিয়েছে। অনেকের নামাজ পড়ার জায়গাও নেই। বাড়িঘর, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান সবই গ্রাস করছে যমুনা।

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন প্রামাণিক, সদর উপজেলার কাকুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহসহ জনপ্রতিনিধিরা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেবন, যমুনায় পানি বাড়লেও ভাঙে আবার কমলেও ভাঙে। যমুনার স্রোত ঘূর্ণাবর্ত তাই ভাঙেও বেশি। তারা দীর্ঘদিন ধরে যমুনার বামতীরে সদর উপজেলার মাহমুদ নগর ইউনিয়নের গোলচত্বর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কানে তুলছেন না।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলের বিশাল এলাকা প্রতিবছরই যমুনার ভাঙনের শিকার হয়। এ ভাঙনরোধে তিন বছর আগে একটি স্থায়ী বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছরেও প্রকল্পটি অনুমোদন না হওয়ায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সিরাজুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে আরও বলেন, যমুনার ভাঙনরোধে স্থায়ী বাঁধের বিকল্প নেই। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও ভূঞাপুর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এমআই

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
একসঙ্গে বাসাভাড়া দুই মাদরাসাছাত্রীর, ছিল বিয়ের পরিকল্পনা
মসজিদে যাওয়ার পথে বজ্রপাতে ইমামের মৃত্যু
পাগলা মসজিদে রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার সঙ্গে মিলল আরও যা যা
প্রেমিকাকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে পাগলা মসজিদের দান বাক্সে চিঠি
X
Fresh