• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মে দিবসে ভাত কে দেবে?

জয়নুল আবেদীন, চট্টগ্রাম

  ০১ মে ২০১৭, ২০:০২

১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বুকের রক্ত ঢেলে দেন শ্রমিকরা। দিনটিকেই স্মরণ করছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৮০টি দেশ। তবে জীবিকার তাগিদে চট্টগ্রাম মহানগরীর শ্রমিকদের কাছে ম্লান হয়ে গেছে দিনটির সব গুরুত্ব।
মহানগরীর কাজির দেউড়ী মোড়ে সত্তরোর্ধ্ব কোরবান আলীকে দেখা গেলো রিকশা নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকতে।

মে দিবসে কেনো রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন জানতে চাইলে কোরবান আলী বলেন, বের না হয়ে উপায় আছে? দৈনিক ঘর খরচ তো আছেই, তার ওপর সাপ্তাহিক কিস্তির খড়গ।

তিনি বলেন, রিকশা কিনেছিলাম কিস্তিতে। সপ্তাহে ৬শ’ টাকা কিস্তি দিতে হয়। ঘর ভাড়াসহ তিন ছেলে মেয়ের সংসারে দৈনিক খরচ লাগে ৪শ’ টাকা। এখন বলেন মে দিবস পালন করলে আমার কি অবস্থা হবে? এই দিনে আমার পরিবারের মুখে ভাত তুলে দেবে কে?

এদিকে ভ্যানচালক ফিরোজকে প্রশ্ন করা হলো মে দিবসের সম্পর্কে তার জানা আছে কিনা? উত্তরে বলে, জানা আছে। তবে পেটের ক্ষুধা তো মে দিবস মানে না। টাকা আয় করতে না পারলে ঘরের মানুষ উপোষ থাকবে। মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী, দু’সন্তানের সংসার।

এ দিনে কেন কাজ করছেন জানতে চাইলে মহানগরীর দামপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনের শ্রমিক দুলাল মিঞা বলেন, কাজে আসবো না ভেবেছিলাম, কিন্তু কনট্রাকটরের পীড়াপীড়িতে আসতে হলো। যদি কাজে না আসতাম তাহলে এ কাজ থাকতো না। আমার জায়গায় অন্যজনকে নিতো। টাকার দরকার না হলেও অনেকটা বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে।

প্রতিদিন জামালখান এলাকার একটি আবাসিক এলাকার ২৩০ ঘরের আবর্জনা ফেলার দায়িত্ব নিয়োজিত জাহাঙ্গীর। তার অবসর নেই এ দিনেও। তিনি বললেন, আজ আবর্জনা নিয়ে না আসলে আগামীকাল তো আরো বেড়ে যাবে। আগামীকালের চাপ কমানোর জন্য কাজ করছি।

চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবীব আরটিভি অনলাইনকে জানান, সরকারি অফিসগুলোতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সন্তোষজনক বেতন-মজুরি পেলেও বেসরকারি খাতগুলোতে শ্রমিকের ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন আইএলও স্বীকৃত কোনো শর্ত পূরণ করা হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, শিল্প কলকারখানার শ্রমিক, গৃহকর্মীসহ ভাসমান শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাদের নিয়োগপত্র তো দেয়ায় হয় না এর ওপর ৮ ঘণ্টার জায়গায় কম মজুরিতে আরো বেশি সময় শ্রমিকদের কাজ করতে হয়। এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।

শ্রমিকের মৌলিক অধিকার আদায়ে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মোহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সব শর্ত এখনো পূরণ হয়নি বলেই সমাজে শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রাপ্য পাইয়ে দেয়ার মতো শ্রমিক নেতা নেই। বরং শ্রমিকদের ব্যবহার করে স্বার্থসিদ্ধি করেন নেতারা। দেশজুড়ে এই একই অবস্থা। এ ক্ষেত্রে শ্রমিকরাও কিছুটা দায়ী। শ্রমিকরা সংগঠিত নয়। তাদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন নয়।

সুজন সভাপতি বলেন, নিজেদের সক্ষমতা ও দুর্বলতার বিষয়ে সম্যক জ্ঞান নেই শ্রমিকদের। তাদেরকে ট্রেইনআপ করা গেলে হয়তো তারা অধিকার বঞ্চিত হতো না। তারা সচেতন নয় বলেই মে দিবসে কাজের সন্ধানে বেরিয়েছে।

মে দিবসের গুরুত্ব বুঝে আজকে একটা দিন শ্রমিকরা কাজ না করলে তা শ্রমিকদের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হতো বলেও উল্লেখ করেন এ অর্থনীতিবিদ।

অন্যদিকে ঠেলাগাড়ি চালক মো. জামাল জানান, আমরা দিন আনি দিন খাই। একদিন কাজ না করলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়। অনেকেই অনেক কথা বলেন। শ্রমিকদের ন্যায্য আদায়ের কথা বলে। শ্রমিকরা না খেয়ে মরে গেলেও তাদের দেখা পাওয়া যায় না। সবাই কথা বলতে ওস্তাদ। আমি বলি, আমি আজকে কাজে না গেলে কি তারা এসে আমাকে খাবার কেনার টাকা দেবে? যদি দেয় তাহলে আজ ঠেলাগাড়িতে মাল টানবো না।

কে/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh