• ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
logo

১০ বছরে সেবা ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ শতাধিক প্রাণী বনে ফিরেছে

স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার

  ২৩ জুন ২০২১, ২১:৫২
১০ বছরে সেবা ফাউন্ডেশন থেকে পাঁচ শতাধিক প্রাণী বনে ফিরেছে

যে প্রাণী থাকার কথা বনে জঙ্গলে! সেই সব বন্য প্রাণী এখন বেরিয়ে আসে লোকালয়ে। বনে খাদ্যসংকট আর ক্ষতিগ্রস্ত আবাসস্থলের কারণে লোকালয়ে এসে ধরা পড়ে মানুষের হাতে। হচ্ছে আহত। কখনো কখনো মারাও যাচ্ছে। সিলেট বিভাগের নানা প্রান্ত থেকে সেসব উদ্ধার করে আহত, অসুস্থ বা বিপন্ন প্রাণীর চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন। এখান থেকে গত ১০ বছরে এ রকম উদ্ধার ও ফাউন্ডেশনে জন্ম নেওয়া বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় পাঁচ শতাধিক বন্য প্রাণী বনে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনাকালিন সময়েই ৮০টি বন্য প্রাণী বনে অবমুক্ত করা হয়। পাশাপাশি বনে খাদ্যসংকট কমাতে বিভিন্ন ধরনের কয়েক হাজার ফলজ বৃক্ষ রোপণসহ পাহাড়ি ছড়ায় মাছের পোনা ও কাঁকড়া অবমুক্ত করে যাচ্ছে বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন।

জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলায় লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানসহ সংরক্ষিত বন, বিস্তীর্ণ পাহাড়-টিলা রয়েছে। এসব স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী বসবাস করে। এর মধ্যে বিরল, বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীও রয়েছে। কিন্তু দিনে দিনে বনের গাছপালা কমে আসা, বন্য প্রাণীদের আবাসস্থল তছনছ হওয়ায় অনেক প্রাণীই আবাসস্থল হারিয়েছে। টিকে থাকার পরিবেশ হয়েছে নষ্ট। দেখা দিয়েছে খাদ্যের সংকট। ফলে খাদ্য ও আশ্রয়ের সন্ধানে প্রায়ই বন থেকে বা ঝোপ-জঙ্গল থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী গ্রামীণ লোকালয়ে আসছে।

২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৪৫৬টি বন্য প্রাণী অবমুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মহামারি করোনাকালিন ছাড়া হয়েছে ৮০টি প্রাণী। ২০১১ সালে বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এখন পর্যন্ত এই ফাউন্ডেশন থেকে ৮০টি অজগর, ২৮টি লজ্জাবতী বানর, ৩৭টি গন্ধগোকুল, ৩১টি মেছো বিড়াল, ২১টি বানর, ১৫টি তক্ষক, ৫টি সোনালি বিড়াল, ৩২টি বন বিড়াল, ১টি হিমালয়ান পাম সিভেট, ২টি কালনাগিন সাপ, ১টি হনুমান, ১টি বনরুই, ৩টি গুইসাপ, ৩টি বন্য শূকর, ৫টি উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, ১টি লেজহীন চিকা, ১টি বোম্বে টিনকেট, ১টি ধনেশ পাখি, ৩টি কাছিম, ১৩টি প্যাঁচা, ১০টি সবুজ বোড়া সাপ, ৭টি শঙ্খিনী সাপ, ৬টি ফণীমনসা সাপ, ১৩৪টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ১টি শিয়াল, ১টি পদ্মগোখরো সাপ, ১টি হিমালয়ান ঢোড়া সাপ, ১টি দুধরাজ সাপ, ১টি দাঁড়াশ সাপ, ৩টি পিট ভাইপার সাপ, ১টি বাজপাখি, ২টি খইয়া গোখরো সাপ, ১টি সবুজ ফণীমনসা সাপ, ১টি কোবরা (কালা খরিস) সাপ, ১টি বিরল লালডোর সাপ এবং ১টি আইড ক্যাট স্নেক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, আহত বন্য প্রাণীকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করা হয়। এখানে জন্ম নেওয়া প্রাণীগুলো এককভাবে জীবনযাপনে সক্ষম হলেই বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বনে ছাড়ার পরও খাদ্য ও বাসস্থানের সংকটে অনেক প্রাণী আবার বনের বাইরে এসে ধরা পড়ে।

তিনি বলেন, একটা ভালো দিক, এখন বন্য প্রাণী সম্পর্কে সচেতনতা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই সচেতনতা বেশি। তারা ফাউন্ডেশনে ঘুরতে এসে প্রাণীদের সম্পর্কে জানে। কোথাও কোনও বন্য প্রাণী আটক হলে, আহত হলে কিংবা খোলা বাজারে বিক্রি হলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের জানায়। এতে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেন।

বন্য প্রাণী নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একধরনের ভীতি রয়েছে। কখনো ফাঁদ পেতে, কখনো দলবেঁধে এসব প্রাণী ধরা হচ্ছে। একটা সময়ে এই প্রাণীগুলো ধরার পর মেরে ফেলা হতো। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে এ পরিস্থিতি কিছুটা বদলাতে শুরু করেছে। এখন বন্য প্রাণী ধরা পড়লে হুট করে কেউ মেরে ফেলছে না। কোথাও এখন বন্য প্রাণী ধরা পড়লে, তা কেউ না কেউ বন বিভাগ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা, প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনকেও জানিয়ে দিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন খবর জানার সঙ্গে সঙ্গে নিজ উদ্যোগে প্রাণীটি উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। পরে সেই প্রাণী লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বা সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন দিনে বন বিভাগ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অবমুক্ত করা হচ্ছে। পাখি হলে হাইল হাওরে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘বুড়িগঙ্গায় জলজ প্রাণী বেঁচে থাকার সুযোগ নেই’
রমজানে প্রাণীদের জন্য জয়ার আর্জি
রহস্যজনক মৃত্যু পর্ন তারকা সোফিয়া লিওনের
উপকূলে বিপন্ন বহু প্রজাতির বন্যপ্রাণী, রক্ষায় নেই উদ্যোগ
X
Fresh