• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

চা শ্রমিক: ১২০ টাকার  মজুরীতে  চলে সাত সদস্যের পরিবার

আরটিভি নিউজ

  ২২ জুন ২০২১, ১৮:৩৮
চা শ্রমিক: ১২০ টাকার  মজুরীতে  চলে সাত সদস্যের পরিবার
চা বাগান, ফাইল ছবি

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগানের শ্রমিক বিশ্বনাথ রবিদাশ। মা-বাবা, কাকা, নিজের স্ত্রী আর দুই ছেলে-মেয়ে। সব মিলিয়ে পরিবারের সদস্য সংখ্যা সাত জন।

রবিদাশ কাজ করেন স্থানীয় একটি চা বাগানে। বিনিময়ে দৈনিক মজুরী পান ১২০ টাকা। সপ্তাহে ৬ দিন কাজ করতে হয় রবিদাশকে। সে হিসেবে সপ্তাহ শেষে বিল পান ৬২০ টাকা। তার একার এই আয়েই পুরো পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে হয় তাকে।

এত কম আয়ে কিভাবে চলে- এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মি. রবিদাশ বলেন, দৈনিক ১২০ টাকায় সংসার চালানো বেশ কঠিন।

বর্তমানে যে দর(দ্রব্যমূল্য), ৪০ টাকা কেজি চাল, তিন বেলার খাবার জোটানো খুবই কষ্ট।

আক্ষেপের সুরে মি. রবিদাশ বলেন, আমার মতো আরো অনেকেই আছে। বললে চোখের জল চলে আসে। অনেক কষ্টের মধ্যে বসবাস করছি আমরা।

তিনি জানান, ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা আর অন্য খরচ যোগাতে হলে চা বাগানের বাইরে অন্য কাজের খোঁজে থাকতে হয়। তিনি বলেন, কী করবো, বাগানের মধ্যেই জন্ম নিয়েছি, অনেক কষ্টে থাকতে হয়।

এই শ্রমিকদের ন্যুনতম দৈনিক মজুরী নির্ধারণ করে রবিবার একটি গেজেটে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নিম্নতম মজুরী বোর্ড।

এতে বলা হয়, বাগানের শ্রেণীবিভাগ ভেদে চা শ্রমিকদের দৈনিক বেতন হবে ১১৭ থেকে ১২০ টাকা করে, যার বিরোধিতা করছেন শ্রমিক নেতারা।

চা শ্রমিক নেতারা বলছেন, প্রতিবছর মজুরী বাড়ানোর নিয়ম থাকলেও খসড়া গেজেটে মজুরী তো বাড়েই-নি, উল্টো অনেক ক্ষেত্রে মজুরী কমেছে।

ব্রিটিশ ভারতের বাংলাদেশ অংশে প্রথম বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয় সিলেটের মালনীছড়া চা বাগানে ১৮৫৪ সালে।

বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, দেশে চা বাগান রয়েছে ১৬৭টি। আর এসব বাগানে শ্রমিক রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজারের মতো।

তাদেরই একজন জেসমিন আক্তার। মৌলভীবাজারের রামনগর থানার ইটা চা বাগানে কাজ করেন তিনি। স্বামীর নির্দিষ্ট কোন আয় নেই। তিন ছেলে-মেয়ে আর শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে পুরো পরিবারই নির্ভর করে তার একার আয়ের উপর।

জেসমিন আক্তার জানান, এতো কম আয়ে কখনো কখনো তিন বেলার আহার যোগাড় করতেই কষ্ট হয় তার।

কখনো খেতে পারি, কখনো না খেয়ে থাকতে হয়। এর মধ্যে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, সব মিলিয়ে খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়।

শ্রমিকদের পক্ষে মৌলভীবাজার জেলা চা শ্রমিক সংঘ দাবি তুলেছেন, ১২০ টাকার পরিবর্তে দৈনিক ৩০০ টাকা করে মজুরী প্রদানের। দুই মাসের বেতনের সমান বার্ষিক দুটি বোনাস দিতে হবে। বৈশাখের বোনাস হিসেবে দিতে হবে ১০ হাজার টাকা।

সংগঠনটির সভাপতি রাম ভজন কৈরি অভিযোগ করে বলেন, খসড়া গেজেটে শিক্ষানবিশ বলে একটি পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু চা শিল্পে যারা কাজ করেন তারা পারিবারিক ভাবেই এই পেশার সাথে যুক্ত থাকেন।

তাই ছোট বেলা থেকেই চা শিল্পের সব কাজের সাথে পরিচয়ই শুধু থাকে না বরং প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকরা এতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন। সে কারণে এই পেশায় শিক্ষানবিশ হওয়ার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, খসড়া গেজেটে মজুরী তো বাড়েইনি, উল্টো কমেছে।

মি. কৈরি অভিযোগ তোলেন, প্রতিবছর মজুরী বাড়ানোর নিয়ম থাকলেও খসড়া গেজেটে মজুরী তো বাড়েই-নি, উল্টো অনেক ক্ষেত্রে মজুরী কমেছে।

চা শ্রমিকদের নেতা মি. কৈরি অভিযোগ করেন, বর্তমান মজুরী বোর্ড যে সুপারিশ দিয়েছে তা শ্রমিকদের স্বার্থে নয় বরং মালিক পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণ করছে।

কম মজুরীর বিষয়ে চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদ-সিলেট শাখার চেয়ারম্যান জি এম শিবলি বলেন, শ্রমিকদের দৈনিক মজুরী কম হলেও তাদের অন্যান্য সুবিধা যেমন আবাসন, রেশন, চিকিৎসার মতো সুবিধা চা বাগানের মালিকরাই করে থাকেন যা টাকার অংকে পরিমাপ করা হয় না।

যার কারণে আপাত দৃষ্টিতে মজুরী কম মনে হয়।

মি. শিবলি বলেন, মজুরী ও সব সুযোগ সুবিধাসহ মাসে তাদের বেতন ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকার মতোই হয়।

এদিকে, শ্রমিক সংগঠনগুলো বোর্ডের বিরুদ্ধে মালিক পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা অস্বীকার করেছে মজুরী বোর্ড।

বোর্ড বলছেন, শ্রমিক ও মালিক পক্ষের সাথে এর আগে করা চুক্তি বিবেচনায় নিয়েই মজুরী নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

নিম্নতম মজুরী বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ বলেন, খসড়া যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে তা সংশোধনের জন্য ১৪ দিন সময় রয়েছে।

এই সময়ের মধ্যে যেকোন ধরণের অভিযোগ মজুরী বোর্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো যাবে।

এদিকে চা শ্রমিক সংঘের সভাপতি রাম ভজন কৈরি জানান, মজুরী বোর্ডের কাছে খুব শিগগিরই নিজেদের দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ লিখিত আকারে জানানো হবে।

সূত্র: বিবিসি

এমএন

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
সিলেটের চা বাগানে টি-টোয়েন্টি সিরিজের ট্রফি উন্মোচন
X
Fresh