একই পরিবারে তিন সন্তান প্রতিবন্ধী
একসময় বই -খাতা নিয়ে দৌড়ে পাঠশালায় যেতেন জোসনা আক্তার(৩৫) ইমরান দেওয়ান(২৫) ও ঝুমা আক্তার(২০)। দিনভর খেলাধুলায় মেতে থাকতেন পাড়ার সমবয়সী ছেলে মেয়েদের সঙ্গে । নানা কাজকর্মে দরিদ্র মা - বাবাকেও সহায়তা করতেন এই তিন ভাই - বোন । কিন্তু ভাগ্য তাদের কে আজ থামিয়ে দিয়েছে।
অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা তিনজনই প্রতিবন্ধী অবস্থায় জীবন যাপন করছেন । হারিয়ে ফেলেছেন হাঁটার শক্তিটুকু। প্রতিবন্ধী জোসনা,ইমরান ও ঝুমা গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর এলাকার দরিদ্র জিন্নত আলী দেওয়ানের সন্তান।
সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় , বিশ বছর আগে জিন্নত আলী দেওয়ান ঢাকা নবাবগঞ্জ থেকে জীবিকার তাগিদে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর গ্রামে আসেন। পরে দুই শতাংশ সরকারী জমিতে ছোট একটি টিন সেট ঘর করে সেখানে সন্তানদের নিয়ে বসবাস শুরু করে জিন্নত আলী। প্রথমে রাজ মিস্ত্রী ও পরে স্থানীয় একটি কারখানায় চাকুরী করতেন। জিন্নত আলীর শ্বাসকষ্ট রোগ থাকায় কারখানার কর্তৃপক্ষ তাকে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেন।
স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। সংসারের হাল ধরতে জিন্নত আলী ব্র্যাক এনজিও নামে এক প্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ টাকা তুলে বাড়ির পাশে একটি মুদি দোকান দেন। ওই ঋণ পরিশোধ করতে প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা কিস্তি দিয়ে কোন রকম খেয়ে পরে দিন কাটাচ্ছেন। ঘরের বারান্দায় বসে আছেন ইমরান। পরে মায়ের কাধে ভর করে বাইরে আসেন জোসনা ও ঝুমা। এ সময় তাঁদের মা দেলোয়ারা বেগম বলেন, “ পাঁচ-ছয় বছর আগেও এরা ভালো ছিল। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া মাত্রই তাদের প্রথমে কোমরে ব্যথা হয়। এর কয়েক দিন পর কোমরের নিচ থেকে পা পর্যন্ত অবশ হয়ে যায় । এর পর থেকে তারা আর হাঁটতে পারে না। তবে পরিবারের দাবি কেউ যদি প্রতিবন্ধী তিন সন্তানদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে কিছুটা হলেও হলেও আমাদের কষ্ট দূর হত।
প্রতিবন্ধী সন্তানদের বাবা জিন্নত আলী বলেন, আমার চার সন্তানের মধ্যে তিনজনই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ঘরের ভেতর পড়ে আছে। তাদের নিয়ে কী যে কষ্টে আছি, তা আপনাদের বোঝাতে পারব না। এই পরিস্থিতিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. নাজমুন নাহার বলেন , ' প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে,এটি বংশগত কোনো রোগ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী হাফিজুল আমীন বলেন, তাঁদের স্বাবলম্বী করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এমএন
মন্তব্য করুন