• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভুয়া প্রতিষ্ঠানের এমডি আগে ছিলেন মুদি দোকানদার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২১ জুন ২০২১, ১০:০৩
ভুয়া প্রতিষ্ঠানের এমডি আগে ছিলেন মুদি দোকানদার
প্রতারক মো. মনজিল

শিক্ষার দৌড় ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিন্তু তাতেই তিনি বনে গেছেন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। নিজের মুদির দোকানের জন্য কোন ব্যাংক ম্যানেজারের কাছ থেকে ঋণ নিতে না পারলেও একাধিক ব্যাংক ম্যানেজারকে আশা দিয়েছেন কোটি টাকা ঋণ দানের।

আর এই কোটি টাকার ঋণের জন্য জামানত নিয়েছেন লাখ টাকা করে। এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও সিলেটে একই কায়দায় হাতিয়ে নিয়েছেন প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। তার প্রতারণায় নিঃস্ব হয়েছেন শতাধিক মানুষ।

এই প্রতারকের নাম মো. মনজিল (৩৮)। রোববার (২০ জুন) গভীর রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে তার আরও ৪ সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, মনজিল এক মহা প্রতারক। তিনি মানুষকে কোটি ঋণ প্রদানের লোভ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া অনলাইনে চাকরি দেয়ার বিজ্ঞাপন দিয়েও জামানতের নাম করে টাকা হাতিয়ে দিয়েছেন। তিনি বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে এ প্রতারণা করেন। চট্টগ্রামের পর সিলেটেও একই কায়দায় প্রতারণা করেছেন। তার চক্রের সবাই গ্রেপ্তার হলেও তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রোববার (২০ জুন) রাতে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি জানান, মনজিল মূলত মুদি ব্যবসায়ী। লেখাপড়া করে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। মুদির দোকানের ব্যবসায় মন্দা গেলে চাকরি নেন ঢাকায়। সেখানে একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি নেন। সেই চাকরির সুবাদেই পরিচয় হয় এক আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সেই আদম ব্যবসায়ীর বুদ্ধিতেই খুলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। নাম দেন বি.এস.এম. বিজনেস এন্ড ইন্টারন্যাশনাল লজিস্টিকস কোম্পানি লিমিটেড। তিনিই হন এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শেখ মুজিব রোডের আগ্রাবাদ সেন্টার ৪র্থ তলায় করেন আলিশান অফিস। কারও যেন কোন সন্দেহ না হয় সেজন্য বোর্ড মেম্বার ও অর্গানোগ্রামও নির্ধারণ করেন। সেই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী সাইফুল ইসলাম (৩৬), চেয়ারম্যান, মো. মামুনুর রশিদ চৌধুরী (২৮), জিএম, নাহিদুল ইসলাম (৩০), এজিএম ও মোছা. সাগরিকা (২৮) কে অডিট অফিসার হিসেবে দেখানো হয়।

মাঠ পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণের জন্য নিয়োগ দেয়া হয় এরিয়া ম্যানেজার। তারাই মূলত বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঋণের নামে জামানত সংগ্রহ করে। ৫ লাখের জন্য ১০ হাজার টাকা, ১০ লাখের জন্য ১৫ হাজার টাকা, ১১ লাখ থেকে ৩০ লাখের জন্য ২৩ হাজার টাকা, ৩১ লাখ থেকে ৫০ লাখের জন্য ৪৩ হাজার টাকা এবং ৫১ লাখ থেকে ১ কোটির জন্য ৮২ হাজার টাকা করে সার্ভিস চার্জ নেয়া হয়। সঙ্গে আছে প্রোফাইল খরচও।

এভাবে তারা শতাধিক মানুষের কাছ থেকে মোট ৩২ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে ২০ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। চট্টগ্রামে তারা ০১/০৬/২০২০ থেকে ২১/০৭/২০২০ তারিখ পর্যন্ত কার্যক্রম চালায়। এরপর পালিয়ে সিলেট চলে যায়। সেখানেও এই কায়দায় প্রতারণা চলতে থাকে। তবে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের প্রতারণা ধরা পড়ে যায়। মামলাও হয় সবার বিরুদ্ধে। এই মামলায় চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হলেও অধরা থেকে যান মনজিল। অবশেষে গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ সোমবার (২১ জুন) আদালতে ৩ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে।

জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh