• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জলাবদ্ধতার পৌষ মাস, চট্টগ্রামবাসীর সর্বনাশ

শানে আলম সজল, চট্টগ্রাম

  ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৮:৫৮

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বৈশাখের প্রথম প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ এলাকা। গেলো বৃস্পতিবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। জলাবদ্ধতায় সয়লাব ছিল পুরো নগরী। অনেকে রসিকতা করে নগরীকে 'সুইমিংপুল' বলে মজা করেছেন। কোমর সমান পানিতে নগরবাসীর দুর্ভোগের চিত্রগুলো সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছিল।

গেলো ক'দিনে ভারি বর্ষণে পানির নিচে তলিয়ে যায় নগরের আগ্রাবাদ, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়া, চাক্তায়-খাতুনগঞ্জ, হালিশহর ছোটপুল, বড়পুল, এক্সেন রোড, বন্দর, হালিশহর ষোল শহরের মত এলাকা।

এ যেন থৈ থৈ জলের নগরী। ২০ মাস আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন আ জ ম নাছির। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন বিএনপি সমর্থিত মনজুরুল আলম। তিনিও সমালোচনার পাতায় কম নাম লিখেননি। কিন্তু নগরবাসীর চাই ক'দশক থেকে চলতে থাকা জলাবদ্ধতার নিরসন। কিন্তু সুফল কই? আশায় ফল মেলে না ।

নগর বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার আরটিভি অনলাইনকে বলেন, জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম শহরের দীর্ঘ দিনের পুঞ্জিভুত অপকর্মের ফসল। জলাবদ্ধতা নিরসন সিটি করপোরেশন একার পক্ষে সম্ভব না। সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে বন্দর, সেনা, নৌ, রেলওয়ে, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রোডস এন্ড হাইওয়েসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে। সম্মিলিত উদ্যোগ নিয়ে সরকারকে সিটি করপোরেশনে না হয় অন্য কোন সরকারি প্রতিষ্ঠানতে পুরো দায়িত্ব দিতে হবে পরিকল্পনা নিয়ে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে পুরো ক্ষমতায়ন ও অর্থ দেয়া হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে অবস্থিত নদী ও সাগরবর্তী এলাকায় জোয়ারে পানি ৫ ফিট উচ্চতায় উঠে যায় কিন্ত নগরের অনেক এলাকা আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র আড়াই ফিট উচু। উন্নত মানের কোনো বেড়িবাঁধও নেই। নগরবাসী বদঅভ্যাসজনিত কারণে নদী নালা - নর্দমাগুলো ব্যবহার করে ময়লার ভাগাড় হিসেবে। অবৈধ দখল এবং কালভার্টের নিচে পাইপলাইনের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নালা-নর্দমাগুলো। ৩ বছরের মধ্যে যদি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে সুয়ারেজ নালা নর্দমাগুলো পানি নিষ্কাশনের উপযোগী করে তোলা হয় তাহলে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া আসছে বছর ১০-১৫ নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে রেহায় পাবে।

সিটি করপোরেশনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নগরের খাল, নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলন বাবদ ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

চলতি বছরেও নগরের বিভিন্ন খাল ও নালা-নর্দমা থেকে মাটি উত্তোলনের কাজে শুরু করেছে সিটি করপোরেশন। যেখানে ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, জলাবদ্ধতার সমাধান আসলে একটা সময় সাপেক্ষ বিষয়। ব্যয় সাপেক্ষ। একটা দীর্ঘ স্থায়ী সমাধান করতে হবে। সে জন্য মেয়র হিসেবে আমি অনেক চেষ্টা করছি। পানি সম্পদমন্ত্রীর সহায়তা নিয়েছি। মন্ত্রণালয় একটি ডিপিপি অলরেডি চূড়ান্ত করেছে। ডিপিপিটা মন্ত্রনালয়ে আছে তারপর এটা প্লান্ট হিসেবে যাবে।

মেয়র নাছির বলেন, মন্ত্রী বলেছেন দু'তিন মাসের মধ্যে এটি একনেকে উপস্থাপন করা হবে। এই ডিপিপিটা তৈরি করতে ৭-৮ মাস সময় লেগেছিল। এটা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে নগরবাসীকে জলাবদ্ধতা থেকে একটা স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিত্রাণ দেয়া সম্ভব হবে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম শহরে কোন চৌয়ালের সিস্টেম ছিল না। সমন্নিত বা পরিকল্পিত ডেজিং ব্যবস্থাও নেই। কিছু ড্রেজিং ব্যবস্থা আছে যেগুলো অপরিকল্পিত ও অপূর্ণাঙ্গ। যার কারণে নগরীতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। এর সাথে যোগ হয়েছে স্যানিটেশন।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প হচ্ছে। এই যে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো এক জায়গার স্তুপ করে রাখে বালি ও কনস্ট্রাকশন মেটেরিয়াল সবগুলো নালায় যায়। নগরবাসীর কিছু অভ্যাস আছে যে নালাতে সব কিছু ফেলা। আমরা কিন্তু নিয়মিত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করছি। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা করার কারণে কিন্তু নগরী এ পর্যায়ে আছে। সুতরাং ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ যেটা শুরু করেছি, সেটা যদি বাস্তবায়ন করতে পারি। তবে নগরবাসীর যে নালা, নর্দমা, ড্রেনে ফেলার যে মানসিকতার সংস্কৃতি, তা অনেকটা লোপ পাবে বলে মনে করছেন তিনি।

এসজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামে বর্ণিল আয়োজনে বন্দর দিবস উদযাপন
দাফনের ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার মরদেহ উত্তোলন
সিডিএর নতুন চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ 
নারী কর্মীদের বোরকা ও নেকাব পরা নিষিদ্ধ করল চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল
X
Fresh