• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভিটে-মাটি নয়, একটু একটু করে স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে যমুনা নদী

সাজিরুল ইসলাম সঞ্চয়

  ০৬ জুন ২০২১, ২৩:৩৯
ভিটে-মাটি নয়, একটু একটু করে স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে যমুনা নদী
বৃদ্ধ হাসেম আলী

যমুনা নদীর করাল গ্রাসে ভিটে-মাটি নয়, একটু একটু করে হারিয়ে যাচ্ছে স্বপ্ন। প্রতিদিন নদীতে স্বপ্নগুলো টুকরো হয়ে হারিয়ে যাওয়া দেখতে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ হাসেম আলী।

রোববার (৬ জুন) সকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিলে নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে কথা হয় আট ছেলে ও দুই মেয়ের জনক হাসেম আলীর সঙ্গে।

তিনি জানান, এই জমিতেই ছিল আমার বসত ভিটা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তি ছেড়ে যমুনার চড় থেকে পাচিলে এসে পৌনে তিন বিঘা জমি কিনে তৈরি করা বসতবাড়ির ১০টি ঘরে স্ত্রী-সন্তান, নাতি-নাতনী নিয়ে বাস করতাম। ছিল গবাদিপশুও। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ আগে ভাঙন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঘর-বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

যমুনা নদীর ভাঙনে প্রতিদিনই একটু একটু করে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা। নদীতে বিলীন হয়ে কতটুকু আছে তা দেখতেই প্রতিদিন নদীর পাশে আসেন রাস্তার ঢালে আশ্রয় নেয়া হাসেম আলী।

শুধু হাসেম আলী নয় জেলার এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ থেকে শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার অরক্ষিত যমুনা নদীতীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে এখন হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন ভাঙনে সর্বস্ব হারানো মানুষ।

গেল গত বৃহস্পতিবার থেকে রোববার (৬ জুন) সকাল পর্যন্ত ৪ দিনে শুধু শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল ও হাটপাচিলে অন্তত ৫০টি বসতভিটাসহ এক শতাধিক বিঘা ফসলি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এই এলাকাগুলোর নদী ভাঙন-কবলিতরা বাড়ি-ঘর ভেঙে বাঁধের পার্শ্ববর্তী পাচিল স্পারবাধের ওপর বা রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় জমা করে রেখেছেন। সামর্থ্যবানেরা অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বা কেনা জমিতে ঘর উত্তোলন করছেন।

কিন্তু গেল ১৫ দিন ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনও কাজই শুরু হয়নি। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারগুলো মানবেতর জীবনযাপন করলেও মিলছে না কোনও ত্রাণ বা সহায়তা। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেখা না মেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভাঙন-কবলিতসহ স্থানীয়রা।

কৈজুরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম জানান, নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পাচিল ও হাটপাচিলের ভাঙন কবলিতরা মানবেতর জীবনযাপন করছে। ভাঙনের এমন ভয়াবহতায় আমরা মর্মাহত ও আতংকিত। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনুরোধ করা হয়েছে ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা ও ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য। আশা করছি দ্রুতই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্স এন) শফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙন রোধে জরুরি জিওব্যাগ ডাম্পিং-কাজের চিঠি গ্রহণের জন্য আমি এখন ঢাকায় অবস্থান করছি। অনুমোদন নিয়ে সিরাজগঞ্জ ফিরেই ভাঙনরোধে কাজ শুরু করবো।

নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, এই সপ্তাহের মধ্যেই এনায়েতপুর থেকে কৈজুরি পর্যন্ত সাড়ে ছয় কিলোমিটার নদীতীর রক্ষার সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন হবে। এই প্রকল্পটি অনুমোদন হলে শুষ্ক মৌসুমে স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা হবে।

এসএস/জিএম

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যমুনা নদী‌তে অষ্টমীর স্না‌নে পুণ্যার্থীদের ঢল
X
Fresh