ভাসানচর থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা
নিরাপত্তা বেস্টনি, স্বাস্থ্যসেবা ও আধুনিক জীবনযাপনের সুবিধা বিদ্যমান থাকার পরেও ভাসানচর থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। এমনটি হলে সরকারের গৃহীত পরিকল্পনা ও কোটি টাকার প্রকল্প ভেস্তে যাবে। পাশাপাশি সীমান্ত উপজেলা উখিয়া টেকনাফবাসীর সামগ্রিকভাবে কিছুটা দূরাবস্থার শেষ হবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা বেস্টনির মধ্যেও দালালদের মাধ্যমে ছোট ছোট নৌকাযোগে এসব রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। এমন খবরে উখিয়া টেকনাফবাসীর মাঝে পৌঁছালে তারা যে কোনোভাবে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরমুখী করার দাবি জানান।
জানা গেছে, ভাসানচরে কেবল রোহিঙ্গা যাওয়া শুরু করেছে। গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ১৯ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ১ লাখ রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্থানান্তর করা হবে। তবে যেতে না যেতেই পালাতে শুরু করেছে এসব রোহিঙ্গা। ভাসানচরে উন্নত জীবনযাপন থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গারা সংশ্লিষ্টদের অগোচরে পালিয়ে উখিয়া-টেকনাফের শিবিরে ফিরে আসায় এলাকার সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। এছাড়াও পালানোর সময় বেশ কয়েকবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের আটক করে।
-
আরও পড়ুন... পরিশ্রম করে ‘চেয়ার পাওয়ায়’ ডাকতে হবে স্যার
এরই প্রেক্ষিতে ৩০ মে ভোর রাতে দালালের মাধ্যমে ছোট ছোট নৌকায় পালিয়ে স্বন্দীপ থানার আওতাধীন মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার ১নং ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন নদীর কূল থেকে তাদের আটক করে স্থানীয়রা। আটক রোহিঙ্গারা হলেন- আয়াতুল করিম (৩০), আশ্রাফ উল্লা (৮), নজিম উল্ল্যাহ (৭), ইয়াসমিন আরা (২৯), সালেহা বেগম (১৪), তাছলিমা (১৬), উম্মে (১৭), মুশফিকা (১৬), মো. সাফায়েত (১৬), অলি উল্লা (১২), মো. আনাস (১০), রোজিনা আক্তার (১৫), শুকতারা (১৫) ও মো. ইমতিয়াজ (১৮)। পরে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উদ্ধার করে হেফাজতে নেয়।
জানা গেছে, এসব রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে শনিবার রাতে ভাসানচর রোহিঙ্গা শিবির থেকে নৌকাযোগে সন্দ্বীপ উপকূলে আসে।
সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বশির আহাম্মদ খান বলেন, ভাসানচর থেকে পালানোর সময় মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের নদীর কূল থেকে স্থানীয়রা তাদেরকে আটক করে। পরে থানা পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করে থানায় আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে কারাগারে প্রেরণ করা হচ্ছে। ভাসানচর থেকে পালানোর সময় এখন পর্যন্ত ২৯ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
উনছিপ্রাং শিবিরে ৪ জন চলে অসার কারণ হিসেবে সেখানকার প্রধান দায়িত্বরত ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি) রাশেদুল হাসান জানান, মূলত তারা পরিবারের টানে ক্যাম্পে ফিরে আসে। ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের ১ বছর আগে ৩০৬ জনের একটি রোহিঙ্গা দল সাগরপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায়। সেখানে নৌবাহিনী আটকের পর তাদের ভাসানচরে রাখা হয়। অথচ তাদের পুরো পরিবার এই শিবিরে। তাই তারা পরিবারের কাছে চলে আসতে পারে বলেও তিনি ধারণা করেছেন।
এদিকে উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে পালিয়ে আসা ১০ রোহিঙ্গাকে আটক করেছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন ১৪ এর একদল পুলিশ। শনিবার বিকেলে কুতুপালং মধুরছরা এলাকা থেকে তাদের আটক করে ট্রানজিট ক্যাম্পে পাঠিয়েছে এপিবিএন।
এপিবিএন ১৪ এর কমান্ডার (পুলিশ সুপার) নাঈমুল হক জানান, উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধুরছরায় অবস্থিত এপিবিএন এর সদস্যরা জানতে পারে নোয়াখালীর ভাসানচর থেকে দুই রোহিঙ্গা পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনের ঘরে অবস্থান করছে।
পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, গত ৮ মে নোয়াখালীর এক দালালের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা চুক্তিতে ভাসানচর থেকে ট্রলারে করে নোয়াখালীর একটি জায়গায় এসে আশ্রয় নেয়। পরে সেখান থেকে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোপনে পালিয়ে এসে অবস্থান করছিল। ভাসানচরে যাওয়ার আগে তারা কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের ৩ এর ৯ নম্বর ব্লকে অবস্থান করতো।
পুলিশ সুপার নাঈমুল হক জানান, শনিবার বিকেলে স্থানীয় মাঝিদের সহায়তায় আর্মড পুলিশ সদস্যরা শিবিরের অন্যান্য রোহিঙ্গাদের ঘর থেকে এনায়েত উল্লাহ ও কেফায়েত উল্লাহকে আটক করে। পরে তাদের পরিবারের অন্য সদস্য মোট ১০ জনকে আটক করা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে তাদেরকে ক্যাম্প ইনচার্জ এর কাছে স্থানানন্তর করা হয়। গত ৩ মার্চ আটক এই রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে গিয়েছিল।
পুলিশ সুপার নাঈমুল হক আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আটক রোহিঙ্গারা জানিয়েছে ভাসান চরে গিয়ে তাদের সেখানে ভালো না লাগায় দালালের মাধ্যমে এখানে পালিয়ে এসেছে।
-
আরও পড়ুন... ক্ষমতা হারাতে চলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী
এ ব্যাপার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত জানান, ‘কিছু রোহিঙ্গা চলে আসছে বলে শুনেছি। তারা কি জন্য চলে আসছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাছাড়া এদের মধ্যে কেউ যদি স্বেচ্ছায় ভাসানচরে যেতে চায় তাদের পুনরায় সেখানে পাঠানো হবে। আমারা কাউকে জোর করে ভাসানচরে পাঠাইনি, সবাই সেচ্ছায় গিয়েছেন।’
পি
মন্তব্য করুন