• ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

গাইবান্ধায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, ওসিকে কারণ দর্শাও নোটিশ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৮:৪২
গাইবান্ধায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার, ওসিকে কারণ দর্শাও নোটিশ
গাইবান্ধায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাইবান্ধায় অপহৃত ব্যবসায়ী হাসান আলীকে(৪৫) উদ্ধারের পর দাদন ব্যবসায়ী আওয়ামী লীগ নেতার হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়েছে। কর্মকর্তারা হচ্ছেন গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক(তদন্ত) মজিবুর রহমান এবং উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন। এনিয়ে গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম এই আদেশ দেন। এ ছাড়া এই ঘটনায় কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মো. মাহফুজার রহমানকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ সেহরিতে পানি আনার সময় ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ

বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সুপার বলেন, তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ব্যবসায়ী হাসান আলী নিহতের ঘটনায় ওই দুই কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলা করেছেন বলে উল্লেখ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার পরপরই ওই দুই কর্মকর্তাকে সদর থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

এদিকে নিহত হাসান আলীকে দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে ঘটনার দিন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। কমিটির আহ্বায়ক গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) রাহাত গাওহারী, সদস্য গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর) আবুল খায়ের ও পুলিশ পরিদর্শক আবদুল লতিফ মিয়া। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কমিটি গতকাল মঙ্গলবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে দায়ী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সুপার।

আরও পড়ুনঃ মামুনুল হক গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা, গ্রেপ্তার ১০

গাইবান্ধা জেলা শহরের স্টেশন রোডে আফজাল সুজ নামের নিহত হাসান আলীর জুতার দোকান রয়েছে। গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানা (৪২) একজন দাদন ব্যবসায়ী। ব্যবসা চলাকালে মাসুদ রানার কাছে দেড় লাখ টাকা দাদন নেন ব্যবসায়ী হাসান আলী। এই টাকা সুদাসলে বর্তমানে ১৯ লাখে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করেন মাসুদ রানা। সম্প্রতি মাসুদ রানা সুদের টাকার জন্য হাসান আলীকে চাপ দেন। এক পর্যায়ে গত ৫ মার্চ সকালে লালমনিরহাটের একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে হাসানকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে আসেন মাসুদ রানা। তিনি তাকে গাইবান্ধা শহরের খানকা শরীফ সংলগ্ন নারায়ণপুর এলাকায় নিজ বাসায় একমাস ৬দিন আটকে রাখেন।

এরপর টাকা নিয়ে হাসানের সঙ্গে মাসুদ রানার তর্কবিতর্ক হয়। টাকার জন্য তিনি হাসানকে মানসিক ও শারীরক নির্যাতন এবং নানা ধরনের হুমকি দেন। ওইদিন সন্ধ্যায় (৫ মার্চ) নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম স্বামীকে উদ্ধারের জন্য গাইবান্ধা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। পরে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলীকে সদর থানায় নিয়ে আসেন সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবুর রহমান ও উপ-পরিদর্শক মোশারফ হোসেন। দাদন ব্যবসায়ী মাসুদ রানার উপস্থিতিতে থানায় সালিশের নামে হাসান আলীর কাছ থেকে সাদা কাগজে ও ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয় তারা। এছাড়া হাসান আলীর স্ত্রীকে টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। একইদিন রাতে পুলিশ হাসান আলীকে মাসুদ রানার জিম্মায় দেয়। এরপর দলীয় ক্ষমতার দাপটে মাসুদ রানা একমাস আটকে রেখে হাসানকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। ১০ এপ্রিল সকালে মাসুদ রানার বাড়ি থেকে হাসান আলীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃত্যুর আগে হাসান আলী মোবাইল ফোনে তার স্ত্রীর কাছে বেশ কয়েকটি ক্ষুদে বার্তা পাঠায়। সেই বার্তায় অপহরণ ও নির্যাতনের কথাসহ তার মৃত্যুর জন্য মাসুদ রানাসহ শহরের স্টেশন রোডের জুতা ব্যবসায়ী রুমেল হক ও খলিলুর রহমান ওরফে বাবু মিয়ার নাম উল্লেখ করেন।

ঘটনার দিন অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা মাসুদ রানাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন তাকে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

এনিয়ে নিহতের স্ত্রী বিথী বেগম সদর থানায় মাসুদ রানা, রুমেল হক ও খলিলুর রহমানকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

নিহত হাসান আলীর স্ত্রী বিথী বেগম অভিযোগ করেন, সালিশ বৈঠকে আমার কাছে পুরো টাকা ফেরত ও স্টাম্পে সই চান মাসুদ রানা। এতে আমি অস্বীকৃতি জানালে মীমাংসা হয় না। তখন পুলিশ আমার স্বামীকে মাসুদ রানার হাতে তুলে দেন। তারপর থেকে আমার স্বামী মাসুদ রানার বাসায় ছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, টাকা নিয়ে আমার স্বামীর সঙ্গে মাসুদ রানার তর্কবিতর্ক হয়। টাকার জন্য তিনি আমার স্বামীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন এবং নানা ধরনের হুমকি দেন। এসব নির্যাতনের কথা মোবাইল ফোনে জানতে পেরে আমি থানায় অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমার স্বামীকে উদ্ধার করেনি। আমার কাছেও স্বামীকে ফেরত দেয়নি। উল্টো তাকে মাসুদ রানার কাছে দেওয়া হয়। নির্যাতনের কারণে আমার স্বামী মারা গেছে। তারপর আমার স্বামীকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নারী হাজতিকে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জন বদলি
নারী কয়েদির সঙ্গে কারারক্ষীর অনৈতিক সম্পর্ক, অতঃপর...
গোবিন্দগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী নিহত
পাথরঘাটা থানার ওসি প্রত্যাহার 
X
Fresh