বান্ধবীর মোবাইল চুরির অপবাদে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ
ফরিদপুর মধুখালী পৌর শহরের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাসরত এক তরুণীকে (১৯) মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে কয়েক দফায় দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার দুইদিন পর অসুস্থ অবস্থায় ওই তরুণীকে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় ধর্ষকরা।
মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে ওই তরুণীকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ যে ভাবে মামুনুলের মাদ্রাসায় গ্রেপ্তার হেফাজত নেতা ইলিয়াস
পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী ওই তরুণী মধুখালী পৌর শহরের আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাসরত আরেক তরুণীর বান্ধবী। তার বাড়ি পাশের গ্রামে। ভুক্তভোগী ওই তরুণীর বিয়ে হয়েছে উপজেলার মাকড়াইল গ্রামে। তার ৩ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। কয়েকদিন আগে তিনি তার বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বাড়িতে আসার পরই রোজিনা নামের ওই বান্ধবী তাদের বাড়িতে যান। রোববার (১১ এপ্রিল) রোজিনা ও তার মাসহ কয়েকজন ওই তরুণীর বাড়িতে যান। সেখানে আড্ডা বা বিভিন্ন গল্প শেষে ফিরে আসেন।
কিছুক্ষণ পর রোজিনা ওই বাড়িতে আবার গিয়ে তার মোবাইল ফেলে যাওয়ার কথা বলে মোবাইল দাবি করেন। কিন্তু ভুক্তভোগী ওই তরুণী সেখানে কোনো মোবাইল পায়নি জানালে দুই জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর পরে রোজিনা ওই বাড়ি থেকে চলে আসেন।
আরও পড়ুনঃ সর্বাত্মক লকডাউন শুরু, মানতে হবে যেসব বিধিনিষেধ
পরে বিকেলে রোজিনা ও তার মা পারুল বেশ কয়েকজন লোক সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী ওই নারীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান। এর দুইদিন পর মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে তাকে অচেতন অবস্থায় তাদের বাড়িতে ফেলে রেখে আসেন। এ ঘটনার পর থেকে ভুক্তভোগী ওই তরুণী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে রোজিনা ও তার মা পারুল আমার সবকিছু শেষ করে দিয়েছে। রোববার (১১ এপ্রিল) বিকেলে তারা আমাকে তুলে নিয়ে বালিয়াকান্দি উপজেলার জামালপুর এলাকার একটি বাড়িতে রাখে। পরে রাতে খাবারের সঙ্গে আমাকে কিছু খাওয়ানো হয়। আমি কিছুটা অচেতন হয়ে পড়ি। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করে। পরদিন সকালে আমি রোজিনাকে বিষয়টি বললে ও আমার দিকে তেড়ে আসে। আমার কাছে মোবাইলও নেই যে আমি কাউকে কিছু জানাব।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী বলেন, সোমবার (১২ এপ্রিল) সেখান থেকে আমাকে নিয়ে আসা হয় মধুখালী চিনিকল মসজিদ সংলগ্ন একটি বাড়িতে। রাতে সেখানেও আমাকে কিছু খাওয়ানো হয়। তখন আমি অচেতন হয়ে পড়ি। সেখানেও ২ জন ব্যক্তি আমাকে ধর্ষণ করে। এ সময় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন আমাকে ওরা স্যালাইন খাওয়ায়। তবে আমার অবস্থা খারাপ হতে দেখে মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে আসে।
তিনি আরও বলেন, যারা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে তাদের নাম আমি জানি না। কিন্তু দেখলে চিনতে পারব। যে বাড়িতে রাখা হয়েছিল সেটাও আমি চিনবো। একজন লোক একটু বয়স্ক, মুখে দাড়ি আছে। আমার সঙ্গে যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।
ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসি। তারপরেই এ রকম ঘটনা ঘটল। রোজিনা ও তার মা পারুল এর আগেও অনেক মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে। এ রকম ঘটনা অনেক আছে। অনেকেই লজ্জায় মুখ খোলেনি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেব।
এ ঘটনার বিষয়ে মধুখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রথীন্দ্রনাথ তরফদার বলেন, ঘটনাটি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রোজিনা ও তার মা পারুল আক্তারকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ভুক্তভোগী তরুণীকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনি খুব অসুস্থ। সুস্থতার পর বিস্তারিত শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জিএম/পি
মন্তব্য করুন