বাবার সঙ্গে দুই ছেলের নিষ্ঠুরতা
মাস দুয়েক আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনা ডান পা ভেঙে যায় বৃদ্ধ ইয়াকুব মালিতার। টানা ২ মাস চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন তিনি। রাতে দুই ছেলে জাহিরুল ও সাদিমান জমিজমা নিজেদের নামে জমি লিখে দিতে স্ট্যাম্পে সাক্ষরের জন্য চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে ঘরের মধ্যে আটকে ঘণ্টাব্যাপী কাঠ দিয়ে পিটিয়ে জখম করে। এতে একটি হাত ভেঙে যায় ইয়াকুব মালিতার।
এমন এই নিষ্ঠুর ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের নবিননগর গ্রামের পূর্বপাড়ায়। আহত ইয়াকুব মালিতা (৬০) ওই এলাকার মৃত সাবেদার মালিতার ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, ইয়াকুব মালিতার চার স্ত্রী। চতুর্থ স্ত্রী ও তার ছেলেকে নিয়ে বসবাস করে আসছে। গত মাস দুয়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায় তার। এতে দীর্ঘ ২ মাস চিকিৎসা শেষে গতকাল বাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই ছেলে স্ট্যাম্প নিয়ে জমিজমা ও বসতবাড়িটি লিখে দিতে বলে। এতে ইয়াকুব মালিতা এখনি সম্পত্তি ছেলেদের দিতে অস্বীকৃতি জানালে তর্কবিতর্কের সৃষ্টি হয়। এতে দুই ছেলে জাহিরুল ও সাদিমান একটি ঘরের মধ্যে আটকিয়ে বাবা ইয়াকুব মালিতাকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে। ঘণ্টাব্যাপী চলে এই নির্যাতন। পরে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে তাকে।
স্থানীয়রা আরও বলেন, নিজেদের জন্মদাতা বাবাকে এভাবে পাশবিক নির্যাতন করতে পারে আমরা কখনো কেউ ভাবতে পারিনি। এটি আসলেই দুঃখজনক ঘটনা। আমরা দুই ছেলের শাস্তির দাবি জানাই।
ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ইয়াকুব মালিতা বলেন, নিজেকে ওই দুই ছেলের বাবা বলে পরিচয় দিতেও ঘৃণা করছে আমার। যাদেরকে কষ্ট করে মানুষ করেছি আজ তারাই সম্পত্তি লিখে না দেয়ার নির্মম নির্যাতন করেছে।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আমার একটি পা ভেঙে যায়। আজ আমার দুই ছেলে প্রচণ্ড মারধর করে হাত পা বেধে। আমার ডান হাতটি ভেঙে দেয় তারা। দুই মাস চিকিৎসা শেষে রোববার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরি। এরপর দুই ছেলে স্ট্যাম্প নিয়ে এসে জমিজমা ও বসতবাড়ি লিখে দিতে হবে জানিয়ে সাক্ষর করতে বলে। আমি অসম্মতি জানালে একটি ঘরের মধ্যে নিয়ে রশি দিয়ে হাত পা বেধে বেধড়ক মারপিট করে। আমি দুই ছেলের শাস্তি চাই।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহানা আহমেদ বলেন, ইয়াকুব মালিতার অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন আছে। এছাড়াও ডান হাত ভেঙে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ভর্তি করা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
এসএস
মন্তব্য করুন