• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন প্রাণহীন

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৬ এপ্রিল ২০২১, ২০:১২
হেফাজতের তাণ্ডবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া এখন প্রাণহীন

চারদিকে কেবলই ধ্বংসস্তূপ আর পোড়া গন্ধ। আগুনে পোড়ার পর গাড়ি ও বিভিন্ন অফিস ভবন যেন মূর্তির মতো এখন দাঁড়িয়ে আছে। হেফাজতের তিনদিনের হরতাল-আন্দোলনে প্রাণহীনভাবে এমনই রূপ নিয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে গেল ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে নেতাকর্মীদের পুলিশ, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যকার সংঘর্ষ বাঁধে। এ ঘটনার পর সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে হাটহাজারী, ঢাকা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ব্যাপক বিক্ষোভ-ভাঙচুর ও সহিংসতায় জড়ায় হেফাজতের নেতাকর্মী ও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা। ২৬ মার্চ বিকাল ৩টায় ভাদুঘরে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে শহরজুড়ে শুরু হয় তাদের তাণ্ডব। শহরের কাচারীপুকুর পাড়ে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভেঙে দেয়া হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনের নিয়ন্ত্রণ-কক্ষসহ সবকটি কক্ষে গানপাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে মালামাল পুড়িয়ে দেয়া হয়। স্টেশনটির কোনও কার্যক্রম নেই এখন। কোনও ট্রেন যাত্রাবিরতী করে না এখানে। হেফাজত-কর্মীদের দেয়া আগুন পুড়ে ছাই হয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ’র নামে প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতাঙ্গণ। সঙ্গীতাঙ্গণের মিলনায়তনের সরোদমঞ্চ পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি পুড়ে যায় মিউজিয়ামে রক্ষিত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবন, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, পৌর ভবন, আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তন, জেলা পরিষদ কার্যালয় ও মার্কেটে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হেফাজত-কর্মীরা। এছাড়া ব্যাংক এশিয়ার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবেও ভাঙচুর করা হয়।

হামলায় খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানা ভবনের সকল জিনিসপত্র পুড়ে যাওয়ায় থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হরতালের দিনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের পর হেফাজত-কর্মীদের সঙ্গে প্যান্ট-শার্ট পরা কিশোর-তরুণরাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। একপর্যায়ে তারা থানায় আগুন দেয়। পুলিশের একটি এপিসি ভাঙচুরের পর আগুনে পুড়িয়ে দেয়। আগুনে পৌরসভা ভবনের দ্বিতীয় তলার সবকটি কক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কয়েকটি কক্ষে থাকা প্রয়োজনীয় নথিপত্র এবং আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যে জিনিসপত্রগুলো রক্ষা পেয়েছে তা এখন ভেতর থেকে বের করছেন পৌরসভার কর্মচারীরা। কবে নাগাদ কার্যক্রম শুরু হবে সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

হরতাল সমর্থনে হেফাজতকর্মীরা জেলা পরিষদ কার্যালয়েও আগুন দেয়। আগুনে জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সকল চেয়ার, এসি ও পাখা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি গাড়িটিও আগুন পুড়ে গেছে। ভবনে থাকা সকল আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে হামলা হয় কয়েক দফা। এসময় প্রেসক্লাব সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিকে রাম দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। এছাড়াও হামলা করা হয়েছে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগার, জেলা আনসার-ভিডিপি কার্যালয়, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স, ব্যাংক এশিয়ার শাখায়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর কার্যালয়, মা ও শিশু-কল্যাণ কেন্দ্র, আনন্দময়ী কালীবাড়ি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. বি. এম. মশিউজ্জামান বলেন, আমার কক্ষসহ অন্যান্য কক্ষে আগুন দেয়া হয়েছে। সব পুড়ে গেছে। রেকর্ড রুমে আগুন দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি পুড়ে গেছে। এতে করে সাধারণ মানুষেরই বেশি ক্ষতি হয়েছে।

খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শখাওয়াত হোসেন বলেন, পুরো থানায় ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করেছে হেফাজতকর্মীরা। অস্ত্রাগারেও হামলা চালিয়েছে তারা। এপিসিসহ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার বলেন, হেফাজতকে ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত, মাদক ব্যবসায়ীরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে। আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাণ্ডব মোকাবিলায় ব্যর্থতার দায় চিহ্নিত করে, ধারণকৃত ফুটেজ দেখে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনা স্বাধীনতা বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তির সুপরিকল্পিত চক্রান্ত।

আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গণের সাধারণ সম্পাদক মনজুরুল আলম বলেন, বিশ্ববিখ্যাত সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খা’র নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটিতে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে তার নিন্দা জানানোর ভাষা জানা নেই। হামলাকারীদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি আমরা।

এদিকে এসব হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ১৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১৬টি, আশুগঞ্জে ২টি এবং সরাইলে ১টি মামলা হয়। এসব মামলায় আসামি ২১ হাজার।

এসআর/ এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা, সৎ মায়ের যাবজ্জীবন
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
প্রেম করে বিয়ের ২ মাসের মাথায় প্রবাসীর স্ত্রীর আত্মহত্যা 
সড়কে ঝরল কর্মসংস্থান অফিসের সহকারী পরিচালকের প্রাণ
X
Fresh