ছাত্রলীগ নেতার সহযোগিতায় এখন সুস্থ মানসিক ভারসাম্যহীন মিনা
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই হাতের বাম পাশে দেখা মেলে একটি ঝুপড়ি ঘরের। সেই ঘরেই বসবাস করেন মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী। যাকে ওই এলাকার সবাই মিনা পাগলি নামেই জানে। ২০১৮ সাল থেকে সারাদিন ভিক্ষা করে গেটের পাশেই ঘুমাতেন তিনি। হঠাৎ দুর্ঘটনায় পা ভেঙে যায় তার। এরপর থেকে উঠে দাঁড়াতে পারতেন না মিনা। দীর্ঘ ১ বছর অসুস্থতায় আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন পার করায় সারা শরীরে পানি জমে যায় তার। এর আগেও হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল ২-৩ বার। তবে একটু সুস্থ হতেই সেখান থেকেও পালিয়ে আসে সে।
এবার অনেকটা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মিনাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা মানিক শীল। অসুস্থ থাকার সময় থেকে এখন পর্যন্ত তিন বেলা খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যোগান দিয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ওই নেতা।
মানিকের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অফিসার ডা. হারুন-অর-রশিদ রাসেল এর সহযোগিতায় নিয়মিত চেকআপে শরীরের পানি কমতে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা শুরু করেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী। হঠাৎ মিনার শখ জাগে একটি ঘরের, আবদার করে মানিকের কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সহযোগিতায় একটি চৌকি জোগাড় করে ঝুপড়ি ঘর তুলে থাকার ব্যবস্থা করে দেন মানিক। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন এবং ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। অসুস্থ থাকাকালীন অপরিষ্কার থাকায় কেউ এগিয়ে যাননি পাগলির কাছে। তবে এখন অনেকেই বাড়িয়ে দিয়েছেন সাহায্যের হাত।
মানসিক ভারসাম্যহীন মিনা শুধু এতটুকুই বলতে পারে, তার বাড়ি নোয়াখালী, দুই ভাই তাকে বিক্রি করে দিয়েছিল নিষিদ্ধপল্লীতে।
মানিক শীল তার এমন মানবিক উদ্যোগের বিষয়ে বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবৎ মানবিক কাজে লিপ্ত আছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করা একজন ছাত্রলীগকর্মীও আমি। জাতির পিতার আদর্শে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একে অপরকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়াও আমার দায়িত্ব।
তিনি জানান, আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী চেষ্টা করেছি মিনা আপাকে সহযোগিতা করার। ভারসাম্যহীন হলেও সে মানুষ, তার বাঁচার অধিকার আছে। এ কাজে আমাকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড়ভাই সৈকত ভাই, আলামিন, রাফিউল, আকিব, হৃদয়, হামিদুল, শাফিসহ আরো অনেকে।
এ বিষয়ে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম সাইফুল্লাহ জানান, ‘এটি বিশেষ একটি মানবিক গুণাবলী। এ ধরনের কাজে আমাদের সকলেরই এগিয়ে আসা উচিৎ। মানিক শীলের পাশাপাশি আমরাও ব্যক্তিগতভাবে মিনা পাগলিকে সহযোগিতা করবো।’
পি
মন্তব্য করুন