• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

লৌহজং নদ উদ্ধার নিয়ে শঙ্কা, প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা

টাঙ্গাইল (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০৪ মার্চ ২০২১, ১৪:২৬
টাঙ্গাইল×নদ×দখলমুক্ত×পাশাপাশি×কমিশনার×ভূমি×উপজেলা×প্রশাসক×
ছবি সংগৃহীত

টাঙ্গাইলে বেদখল হয়ে যাওয়া লৌহজং নদ উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রাখা এবং নদকে ঘিরে নেওয়া নানা উন্নয়ন কার্যক্রম শঙ্কার মুখে পড়েছে।

নদের তীরের একটি পরিবার জমির বৈধ মালিকানা দাবি করে জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, মেয়রসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে ক্ষতিপূরণ চেয়ে টাঙ্গাইল যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে পৃথক দুটি মামলা করায় এই আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা আইনি মোকাবেলার পাশাপাশি বিধান মেনেই নদটি দখলমুক্ত রাখার অভিযান অব্যাহত রাখবেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের নির্দেশে লৌহজং নদটিকে অবৈধ দখলদার মুক্ত করার জন্য সহকারী কমিশনারের (ভূমি) মাধ্যমে নোটিশ জারি করেন।

নোটিশের তথ্য মতে নদ তীরের দশ মিটার পর্যন্ত সীমার মধ্যে কোনও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না।

নোটিশ প্রদানের ১২দিন পর ২৫ ফেব্রুয়ারি লৌহজং নদের তীরবর্তী একটি জমিতে নির্মিত সাততলা ভবনের অংশ বিশেষ ভেঙে দেওয়া হয়।

এরপর জমির বৈধ মালিকানা এবং জমির ওপর নির্মিত ভবনটি ভেঙে দেওয়ায় বিপুল অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে দাবি করে গেলো বছরের ১৫ ডিসেম্বর পাঁচজন বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে সাত কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেন।

মামলার বাদীরা হলেন টাঙ্গাইল পৌরসভার স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার মো. হাতেম আলী দেওয়ানের ছেলে জমশের আলী, আ. কাইয়ুম বাবলুর স্ত্রী রোকেয়া বেগম রিনা, মাহবুব ইসলাম মিলনের স্ত্রী সোনিয়া ইসলাম রুমি, মো. জমশের আলীর মেয়ে সুমি আক্তার ও ছেলে রফিকুল ইসলাম।

মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ১৪ জনকে। তারা হলেন জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র, স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার মৃত খোরশেদ আলীর ছেলে মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল বাছেদের স্ত্রী মোছা. নাজমা আক্তার, তায়াফ্ফাল হকের স্ত্রী আয়েশা খাতুন, দৈনিক লোককথা পত্রিকার সম্পাদক এবং লৌহজং নদ ও পরিবেশ রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন সিদ্দিকী, স্টেডিয়ামপাড়া এলাকার আব্দুল হামিদের স্ত্রী নাজমা হামিদ, ছাত্তার মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ আক্তার, মৃত কেরামত আলীর ছেলে মজিবর রহমান ও মতিয়ার রহমানের স্ত্রী সাহিদা দিল আফরোজকে।

মামলার বাদী জমশের আলী জমিটির বৈধ মালিক দাবি করে বলেন, ‘১৯৮৮ সালে ৬৪ দাগের সাড়ে ১৯ শতাংশ জমিটি আমি সাবকবলা মূলে আমার স্ত্রীর নামে ক্রয় করি। এর আগে ১৯৭৩ সালে একই দাগের ১১৬ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসন ক্রয় করেছে বলে দাবি করলেও আদালতের রায়ে সেখান থেকে মাত্র সাড়ে ১৪ শতাংশ জমির বৈধতা পায়। অথচ আমার জমিটি নদীর জায়গা মনে করে সাততলা ভবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবনের অবশিষ্ট অংশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ভবনটি না ভাঙতে ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট একটি আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু আদেশ অমান্য করে আমার ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। এতে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গেলো বছরের ১৫ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে একটি ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করেছি।’

এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ৩০ মার্চ। একইসঙ্গে আমার জমির বৈধতা দাবি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেছি।

নদী আইনের যে ধারায় আমার স্থাপনা ভাঙা হয়েছে সেই আইন এই নদীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

সরেজমিন নদের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইল পৌর এলাকার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সময়ের খরস্রোতা নদটি দখলে সরু খালে পরিণত হয়েছে। শুধুমাত্র শহরের অংশে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রায় দুই কিলোমিটার জুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ করে বেদখল করে আছেন। আর এতে পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হয়ে নদটি নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।

মৃতপ্রায় নদটিকে উদ্ধারের জন্য ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করে।

তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ভূমি অফিস যৌথভাবে নদীর সীমানা নির্ধারণ কার্যক্রম শুরু করে।

একইসঙ্গে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও এই উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পরামর্শ, সভা, সেমিনার, প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, আলোকচিত্র প্রদর্শনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

প্রায় দুই বছর ধরে চলে এই কার্যক্রম। ২০১৬ সালের ২৯ নভেম্বর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠে লৌহজং নদের তীর। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় নদটির দখল ও দূষণমুক্ত অভিযান।

সদর উপজেলার ঢালান শিবপুর এলাকার ধলেশ্বরী নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে মির্জাপুর উপজেলার বংশাই নদীতে মিলিত হওয়ার পূর্বে লৌহজং নদটি দীর্ঘ প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে।

নদটি উদ্ধারে সকলের প্রত্যাশা থাকলেও কাউকে বলপূর্বক ক্ষতিগ্রস্ত না করার আহ্বান জানিয়েছেন সচেতন মহল।

নদী, খাল-বিল, জলাশয়, বন ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রতন সিদ্দিকী আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে টাঙ্গাইলের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে লৌহজং নদ উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর নদী তীরের একটি ভবনকে অবৈধ বলে চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন থেকে ভবন মালিককে নোটিশ করা হয় স্থাপনা সরিয়ে নিতে। কিন্তু ভবন মালিক তা না করায় প্রশাসন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে দেন। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিবেশবাদীরা সরব থাকায় আমার বিরুদ্ধেও ক্ষতিপূরণ মামলা করা হয়েছে।’

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা মো. খায়রুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘নদী আইনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় আছে। যদি সিএস রেকর্ড ব্যক্তি মালিকানা থাকে তবুও নদীর ৩০ ফিটের মধ্যে কোনও স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। এরই আলোকে নদী তীরের অবৈধ স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে যে মামলা হয়েছে তা মোকাবেলা করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘আমরা যথাযথ নিয়ম ও বিধি মেনেই লৌহজং নদের সীমানা নির্ধারণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা কোনও ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্ররোচিত হইনি। আমাদের বিরুদ্ধে যে মামলাটি করা হয়েছে তা মোকাবেলা করার জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। আদালত যে ফয়সালা দেবেন আমরা তা মেনে নেব।’

টাঙ্গাইল পৌরসভার নব-নির্বাচিত মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘আমি সবেমাত্র দায়িত্ব নিয়েছি। লৌহজং নদ উদ্ধার বিষয়ে আমরা সবাই জানি। তবে মামলার বিষয়টি আমি অবগত নই। মামলার বিষয়ে আইনগতভাবে যা করণীয় আমরা তাই করবো।’

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি আর বলেন, ‘মামলার জবাব আমরা আইনগতভাবেই দেব। যেকোনো দখল, দূষণের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। দখল, দূষণ নিয়ে যারাই অপতৎপরতা চালাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিতে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অ্যাসিল্যান্ডসহ সকল কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যেকোনো দুর্যোগে পুলিশ জনগণের পাশে রয়েছে: ডিএমপি কমিশনার
উপজেলা পরিষদেও হচ্ছে ডামি নির্বাচন : রিজভী
জিআই স্বীকৃতি পেল টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্য 
টাঙ্গাইলে ব্যবসায়ীর ওপর হামলা-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংকে ধরতে মরিয়া পুলিশ
X
Fresh