• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শূন্য ইউনিট বিদ্যুতের বিল ১২০০ টাকা! 

কুড়িগ্রাম উত্তর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ০১ মার্চ ২০২১, ২৩:৪১
শূন্য ইউনিট বিদ্যুতের বিল ১২০০ টাকা! 
ফাইল ছবি

মিটারে বিদ্যুতের সংযোগ নাই। মিটারে রিডিং শূন্য ইউনিট। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও গ্রাহকের হাতে শূন্য ইউনিট বিদ্যুতের ১২শ’ টাকা বিল ধরিয়েছে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিস। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের গলাকাটা বিল নিয়ে বিপাকে পরেছেন উপজেলার প্রায় দেড় হাজার সেচ গ্রাহক। তাদেরকে পরিষদ করতে হচ্ছে ১৩৩ গুণ বিদ্যুৎ বিল। এসব সংশোধন করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের।

জানা গেছে, উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের পশ্চিম ছাট গোপালপুর গ্রামের খাদেমুল হক তার শান্ত অ্যান্ড ব্রাদার্স চাউল কলের জন্য একটি শিল্প সংযোগের আবেদন করেন। এরই প্রেক্ষিতে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি সংযোগ চালু করতে যায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। সংযোগ চালুর সময় একটি ট্রান্সফরমারে সমস্যা দেখা যায়। ওই সময় উপস্থিত ডিজিএম কাওসার আলী এক সপ্তাহের মধ্যে ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। এসময় ত্রুটিযুক্ত ট্রান্সফরমারটি খুলে নিয়ে যায় পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা। এরপর প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হলেও ওই গ্রাহক তার চাউল কল চালু করতে পারেননি এবং এক ইউনিট বিদ্যুতও ব্যবহার করতে পারেননি। তবে পল্লী বিদ্যুৎ অফিস তার নামে ১ হাজার ২০৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল প্রেরণ করে।

পল্লী বিদ্যুৎ ভূরুঙ্গামারী অফিসের দেয়া খাদেমুল হকের বিলের কপিতে দেখা যায়, পূর্ববর্তী রিডিং এর স্থানে শূন্য এবং বর্তমান রিডিং এর স্থানে শূন্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যবহৃত ইউনিটের ঘরেও শূন্য লেখা হয়েছে। বিলটিতে নিট বিল লেখা হয়েছে ১ হাজার ৫০ টাকা, ভ্যাট ৫৩ টাকা এবং মিটার ভারা বাবদ লেখা হয়েছে ১০০ টাকা।

খাদেমুল হক জানান, ‘এক ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করি নাই, কোনও মেশিন চলে নাই। অথচ বিদ্যুৎ অফিস আমার নামে ১ হাজার ২০৩ টাকার বিদ্যুৎ বিল পাঠিয়েছে। বিলের কপি নিয়ে ডিজিএমের নিকট গেলে তিনি বলেন এটা মিনিমাম বিল তাই পরিশোধ করতে হবে।

ওই ইউনিয়নের দক্ষিণ ছাট গোপালপুরে কৃষক সাইফুর রহমান বলেন, জানুয়ারি মাসের বিল সিটে তার নিজের সেচ যন্ত্রের অনুকূলে প্রায় ৬ হাজার ইউনিট অতিরিক্ত যোগ করে ২২ হাজার ৯৩৫ টাকার বিল করা হয়েছে যা ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে ১৩৩ গুণ বেশি।

পাথরডুবি ইউনিয়নের মইদাম গ্রামের গ্রাহক মহির উদ্দিন জানান, আমার বিদ্যুৎ জানুয়ারি মাসের বিলের কাগজে দেখি ১ হাজার ৭১৭ টাকা বিল দেয়া হয়েছে। অথচ এত টাকার বিল ব্যবহার করিনি।

আন্ধারীঝাড়ের খামার বেলদহ গ্রামের গ্রাহক শাহ আলম বলেন, আমাকে জানুয়ারি মাসের বিদ্যুত বিল দেয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৯৫৯ টাকা। আমরা সাধারণ মানুষ এত টাকার কিভাবে পরিষদ করব ভেবে পাচ্ছি না। বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়াটাই অপরাধ হয়েছে আমাদের।

ভূরুঙ্গামারী সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার গ্রামের গ্রাহক আব্দুর রউফ বলেন, বিদ্যুৎ বিলে ব্যবহৃত ইউনিট শূন্য রিডিং দেখিয়ে বিল দেয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৭৯৫ টাকা। পল্লী বিদ্যুতের এমন ভুতুড়ে বিল সাধারণ গ্রাহকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।

আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সরকার কৃষকদের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ দিয়েছে। কিন্তু এই বিদ্যুতই আমাদের সাধারণ কৃষকদের জন্য গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরেজমিনে মিটার রিডিং না দেখেই অফিসে বসেই পল্লী বিদ্যুৎ এমন অতিরিক্ত ভুয়া বিল দিয়ে আসছে। এতে করে চাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

গ্রাহক আমির হোসেন বলেন, বিল সংশোধনের জন্য সব কাজকর্ম ফেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। নিয়মিতভাবে পল্লী বিদ্যুৎ হতে আকাশ চুম্বী বিদ্যুত বিল দেয়া হচ্ছে। এসব বিলের অতিরিক্ত টাকা অসাদু কর্মকর্তারা তাদের পকেটস্থ করছেন। ভুতুড়ে বিল তৈরি করা পল্লী বিদ্যুৎ এর স্বভাবে পরিণত হয়েছে।

ভূরুঙ্গামারী পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম কাওসার আলী জানান, ‘সংযোগ চালু থাকলে ব্যবহার না হলেও মিনিমাম বিল ওই পরিমাণ আসবে এবং সেটা বৈধ বিল হবে। তবে ট্রান্সমিটার নষ্ট কিংবা সংযোগ না থাকলে সেটা আলাদা কথা। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ভুলভ্রান্তি হতে পারে। এছাড়া সেচের বিল নিয়ে যেসব গ্রাহকদের ত্রুটি হয়েছে সেগুলো সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম স্বদেশ কুমার জানান, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দেবার বিষয়ে সচরাচর অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। মিটার একটি যন্ত্র সেখানেও ত্রুটি হতে পারে। এছাড়াও অনেক সময় চোখের দেখারও ভুল থেকে এমনটি হতে পারে। যে দু-একটা এসেছে সেগুলো আমরা ঠিক করে দিয়েছি।

এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh