• ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাতিয়াতে আলুর বাম্পার ফলন

হাতিয়া প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৫:৪৮
নোয়াখালী×চাষি×মজুমদার×ক্ষোত×প্রচণ্ড×রোদ×রৌদ্র×তোলা×
ছবি সংগৃহীত

বেড়ীর বাইরে অগোচানো গ্রামীণ সড়ক, সড়কে সারি সারি মালবাহী টমটম গাড়ি, গাড়িতে বস্তাভর্তি আলুবোঝাই দিচ্ছে ব্যাপারিরা, মাঠে কৃষক কৃষাণির স্বপরিবারে আলু তোলার দৃশ্য, মাঠ জোড়ে চোখের দৃষ্টি শক্তির মধ্যে অসংখ্য কৃষক কৃষাণি পরিবারকে দেখা যায় একই কাজ করতে, সবাই জমিতে আলতো নিড়ানি দিয়ে উপরে উঠে আসা আলুগুলো ক্ষেতের এক পাশে জড়ো করছে, কেউ তা ব্যাপারীদের ক্ষেতেই মেপে দিচ্ছে, এই কাজে কৃষক কৃষাণিদের সহযোগিতা করছে তাদের ছোট শিশুরাও, সবার মুখে আনন্দের হাসি আলুর ফলন ভালো হওয়ায়।

নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের বেড়ীর বাহিরে আলু চাষিদের চিত্র এটি ।

বড়দেইল গ্রামের আলু চাষি হাফিজ উদ্দিন (৫৭)। স্ত্রীসহ স্কুল পড়ুয়া দুই শিশু কন্যাকে নিয়ে আলু তোলার কাজ করছে ক্ষেতে। ক্ষেতের এক পাশে আলুর বিশাল স্তুপ দেখে বুঝা যায় ভালো ফলন হয়েছে। কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলে হাফিজ জানায় গত পাঁচ বছর ধরে আলো চাষ করছেন। এই বছর ১০ কড়া জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন। প্রায় অর্ধেক জমিতে আলু তোলা শেষ এতে আনুমানিক ৪০ মণ হবে বলে আশা করছে।

হাফিজের ক্ষেতের পাশে অন্য একটি ক্ষেতে আলু তোলার কাজ করছে রিতা মজুমদার (৩৫)। প্রচণ্ড রোদ্রের মধ্যে তিনিসহ পাঁচজন আলু তোলার কাজ করছেন।

কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, এই বছর ২৪ শতক জমিতে তিনি আলু চাষ করেছেন।

পরিবারের সদস্য সংখ্যা তিনজন হওয়ায় তিনি দুই জন মহিলা শ্রামিক নিয়োগ দিয়েছেন আলু তোলার জন্য। দিন শেষে সেই শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ১০ কেজি করে আলু দিয়ে দিতে হবে তাকে। এই বছর আলুতে বাম্পার ফলন হওয়ায় প্রচণ্ড তাফদাহের মধ্যেও কাজ করতে ক্লান্তি লাগছে না তার। আলুর মূল্য কেমন পাচ্ছেন প্রশ্ন করলে রিতা জানান, সকাল থেকে ক্ষেতে কয়েকজন ব্যাপারী এসেছে। তারা ক্ষেত থেকে নিয়ে যাবে এজন্য মণে পাঁচশ টাকা বলেছে কিন্তু তিনি রাজি হয়নি।

তিনি কিছুদিন বাড়িতে রেখে মূল্য বৃদ্ধি পেলে বিক্রি করার চিন্তা করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে আলু ক্ষেতে দেখা হয় উপজেলা সদর ওচখালী থেকে যাওয়া আলু ব্যাপারী বেছু কারবারীর সঙ্গে। বেছু কারবারী জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি বড়দেইল গ্রাম থেকে আলু ক্রয় করে হাতিয়ার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি করছিলেন।

এখন মৌসুম হওয়ায় দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে তার বড়দেইলের এই আলু ক্ষেতে। গত কয়েক দিন থেকে তিনি প্রতিদিন দুইশত থেকে তিনশত মণ করে আলু ক্রয় করছেন।

অনেক চাষির সঙ্গে আলু ক্ষেতে থাকা অবস্থায় তার কন্ট্রাক হয়ে যায়। আবার অনেকের আলু তোলার পর দেখে শুনে কিনতে হচ্ছে।

তার মতো হাতিয়ার বিভিন্ন বাজার থেকে অনেক ব্যাপারী এসে এখান থেকে আলু কিনে নিয়ে যান।

এদিকে বড়দেইলেরে বড় কয়েকজন আলু চাষির মধ্যে নুরনবী (৫৫) একজন।

আলাপকালে তিনি জানান, ফলন ভালো হলেও বর্তমানে আলুর মূল্য কম। প্রতি কেজি আলুর বর্তমান মূল্য ১৫ টাকা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ন্যায় হাতিয়াতে আলু কোল্ডস্টোরে রেখে বিক্রি করতে পারলে চাষিরা অনেক লাভবান হতো। এছাড়া তিনি কৃষি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আলু চাষে সহযোগিতা না করার অভিযোগও করেন।

এ ব্যাপারে বুড়িরচর ইউনিযনের ৬ নম্বর ওয়ার্ড বড়দেইল গ্রামের ইউপি সদস্য নুরুল আমিন জানান, কৃষকরা বেড়ীর বাহিরে লোনা জায়গায় নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আলু চাষ করছে। সাধারণত বেড়ীর বাইরে যেসব জমিতে লোনা পানি প্লাবিত হয় তাতে আলু চাষ ভালো হওয়ার কথা নয়। কিন্তু এখানে বাম্পার ফলন হচ্ছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পেরৈসভার হাতিয়া উপজেলায় এই বছর আলু চাষ করা হয়েছে একশত ৮০ হেক্টর জমিতে। যাতে উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে তিন হাজার ৫শত মেট্রিকটন। এর মধ্যে বুড়িরচর, চরকিং ও চরঈশ্বর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়েছে।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, হাতিয়াতে রবীশষ্য উৎপাদনে অনেক এগিয়ে। এর মধ্যে আলু ,বাদাম, খোসারি ডাল অন্যতম। আমারা বিভিন্নভাবে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এসব কাজে উদ্বুদ্ধ করেছি। বর্তমানে আলুর মৌসুম চলতেছে। এবার হাতিয়াতে আলু চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
চাঁদের আলোয় ধান কাটছেন চাষিরা
মেহেরপুরে তীব্র তাপপ্রবাহ, ব্যাহত হচ্ছে ফসল ঘরে তোলার কাজ 
এমপি একরামুলের শাস্তি দাবি জেলা আ.লীগের
নোয়াখালীতে রেজাল্ট শিট আনতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু
X
Fresh