• ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
logo

নরসিংদীতে ঐতিহ্যবাহী বাউল মেলা শুরু

নরসিংদী  প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১১:৩০
বাউল×মানবতা×সাতশত×পৈত্রিক×কল্যাণ×মেলা×দর্শনার্থী×মাস্ক×
ছবি সংগৃহীত

মনমোহিনী রাধে জয়, রাধে জয় টেনে টেনে গাইছেন এক বাউল। সঙ্গে সতীর্থরা সুর মেলাচ্ছেন। ঢোল, খোল, করতাল আর একতারার সুরে মাথা দোলাচ্ছেন অনেকে।

পাশেই মেঘনার জল চকচক করছে চাঁদের আলোতে।

টিম টিম করে জ্বলছে একটি প্রদীপ। চিত্রটি নরসিংদী সদরের কাউরিয়া পাড়া এলাকায় বাউল ঠাকুরের আখড়ার।

আজ শনিবার সকালে যজ্ঞ দিয়ে শেষ হবে মেঘনার তীরে সাতশত বছরের অধিক পুরানো ঐতিহ্যবাহী এই বাউল মেলা।

গেলো বুধবার রাতে প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে শুরু হওয়া এই আয়োজনের তিন দিনব্যাপী মেলার শুরু হয় বৃহস্পতিবার থেকে।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আনুমানিক ৭০০ বছর আগে নরসিংদীতে এক বাউল ঠাকুর ছিলেন। তিনি নিজেকে শুধু বাউল বলেই পরিচয় দিতেন। এজন্য বাউল ঠাকুরের প্রকৃত নাম জানেন না এখানকার কেউই। সেই বাউল ঠাকুরের স্মরণে তার আখড়া ধামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এই বাউল মেলা। তবে কে প্রথম এখানে বাউল মেলার আয়োজন করেন তার প্রকৃত তথ্য জানা নেই কারও।

অনুসন্ধান করে জানা যা যায়, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এই পর্যন্ত মেলার আয়োজন করছেন স্বর্গীয় মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবার। বর্তমানে এই মেলায় আয়োজকদের মধ্যে রয়েছেন মনিন্দ্র চন্দ্র বাউলের পরিবারের সদস্য সাধন চন্দ্র বাউল, মৃদুল বাউল মিন্টু, শীর্ষেন্দু বাউল পিন্টু, মলয় বাউল রিন্টু এবং প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল।

বাউলের আখড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভীড় জমিয়েছেন পুণ্যার্থীরা। বেশিরভাগ সনাতন ধর্মালম্বী হলেও অন্যান্য ধর্মের মানুষজনও চোখে পড়ার মতো। তাদের সকলেরই মন্তব্য, মানব ধর্মের জয় । মানবের মাঝেই ইশ্বর বাস করেন। মানবের কল্যাণে কাজ করলে স্বস্তি মিলে। কথা হয় মৌলভীবাজার থেকে আসা পূণ্যার্থী শ্রী সাধন চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বলে, প্রতিবছরই এখানে আসা হয়। জীব উদ্ধারের পথ দেখিয়েছেন আমাদের বাউল ঠাকুর। ঠাকুরের দেখানো মানব কল্যাণের এই পথ অনুসরণ করতেই এখানে আসা।

মাধবদী থেকে এসেছেন হারাধন মল্লিক। তিনি বলেন, আমার ঠাকুরমা, বাবা সবাই এই বাউল ঠাকুরের আখড়ায় আসতেন।

আমিও ছোটকাল থেকেই এখানে আসি। এখন আমারও শেষ বয়স, আমার হাত ধরে আমাদের পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যরা আসে। মানসিক শান্তি এবং জগতের সকল জীবের মঙ্গল কামনা করতেই এখানে আসা।

আখড়ায় গান গাইছিল অর্জুন বাউল। তিনি বলেন, আমাদের গাওয়া গানগুলো সাধারণ বাউল সঙ্গীত না। এগুলো শত শত বছর ধরে চলে আসা মানবতার গান। মানবের কল্যাণের নিমিত্তেই আমাদের এসব পরিবেশনা। প্রতি বছরের মতো এবারও মেলায় প্রায় দেড় শতাধিক বাউল এসেছি আমরা।

অন্যদিকে, এই মেলাকে কেন্দ্র করে নদী পাড়ের এক কোনে বসেছে চড়কি, নাগরদোলাসহ সাপের খেলার আয়োজন।

পাশেই দুই সারিতে শ’খানেক বাচ্চাদের খেলনার দোকান। মাটির পুতুল, হাড়ি, কলসসহ বিভিন্ন তৈজসপত্র বিক্রি হচ্ছে পুরোদমে। সেইসঙ্গে রয়েছে জিলেপিসহ বিভিন্ন খাবারের সমারোহ।

মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন হাজীপুর এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ কুমার সাহা। ছেলে আদিত্য সাহার জন্য কিনছেন মাটির খেলনা। পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন বেত ও মাটির বিভিন্ন সামগ্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, মেলাটা বহু পুরোনো। প্রতিবছরই পরিবার পরিজন নিয়ে আসা হয়। বাঙালি এবং বাংলাদেশের মেলা, দুইটারই সংমিশ্রন পাওয়া যায় এখানে আসলে।

কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সুভাস দাসের সঙ্গে। তিনি বলছেন, আসলে মেলাটা এমনই হওয়া উচিত। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে ঘুরাঘুরি করছে। বাচ্চারা নাগরদোলায় দোলছে, অন্যদিকে আশ্রমে আরাধনা চলছে।সব মিলিয়ে বিষয়টা অসাধারণ।

মেলায় ঘুরতে এসেছে স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্তধারা নাট্য সম্প্রদায়ের একদল কর্মী। আলাপচারিতায় হাসান মাহমুদ সনেট নামে এক সদস্য বলেন, শুধু সনাতন নয়। সকল ধর্মের মানুষের কাছেই এই মেলার গ্রহণযোগ্যতা আছে। মানবের কল্যাণ এবং মানবের প্রতি প্রেমের কথা এখানকার বাউল সাধক বলে গেছেন। নরসিংদীর মানুষ যথেষ্ট সংস্কৃতি প্রিয়, যার ফলে শত শত বছর ধরে এই ঐতিহ্য এখানকার মানুষ খুব যত্নের সঙ্গে আগলে রেখেছে।

আখড়া বাড়ি এবং বাউল মেলার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রাণেশ কুমার ঝন্টু বাউল।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসনামল থেকে পৈত্রিক সূত্রে এই মেলার আয়োজন করে আসছি আমরা। আনুমানিক সাতশত বছরেরও অধিক সময় আগে কোনও এক বাউল সাধক এখানে এসে আখড়া স্থাপন করে মানবধর্ম ও মানবের কল্যাণের জয়গান গেয়েছেন। সেই থেকে এখানে এই আয়োজন। ২৪ তারিখ রাতে বৈঠক ও প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়ছে। তবে তিন দিনব্যাপী মেলা শুরু বৃহস্পতিবার থেকে। চলবে শনিবার পর্যন্ত।

করোনার কারনে এবার আয়োজনে একটু পরিবর্তন করা হয়েছে। মেলায় সকল দর্শনার্থীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে মাস্ক বিতরণ করা হচ্ছে। শনিবার শ্রী শ্রী বাউল ঠাকুরের মহা যজ্ঞানুষ্ঠানের মাধ্যমে এবারের মতো মেলা শেষ হবে।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের রেমিট্যান্স উন্নয়নের একটি মূল শক্তি : সমাজকল্যাণমন্ত্রী
হিলিতে প্রাণিসম্পদ মেলা অনুষ্ঠিত
মেলার চাঁদা নিয়ে বিরোধ, মাদরাসাছাত্রকে ছুরিকাঘাতে হত্যা
মার্চে সড়কে ঝরল ৫৬৫ প্রাণ, আহত ১২২৮
X
Fresh