প্রতারক স্বামীর কাণ্ড
যশোরের কিসমত নওয়াপাড়ার এক প্রতারক অন্যের জমি-বাড়ি দেখিয়ে বিয়ে করে স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে মারপিট করে তাড়িয়ে দিয়েছে স্ত্রীকে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশ তদন্তে নামলে স্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে, ওই চক্রটি পুলিশের সামনেই নিজেদের একাধিক হত্যা মামলার আসামি বলে হুংকার ছেড়ে হত্যার হুমকি দিয়েছে ভুক্তভোগীর ভগ্নীপতিকে।
এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন থানার এসআই সেকেন্দার আবু জাফর।
ভুক্তভোগী ও থানা সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কিসমত নওয়াপাড়ার হৃদয় হোসেন শান্ত, তার বাবা বাদশা আলম, মামা মানিক হোসেন, মুক্ত হেসেন, মা লাবনী বেগম, উপশহর ই ব্লকের গোলাম মোস্তফার সহায়তায় প্রতারণামূলক বিয়ের পরিকল্পনা করে। চক্রটি নিজেদের অবস্থান বস্তিতে হলেও অন্যের জমি বাড়ি দেখিয়ে বিয়ে করে ভেকুটিয়া দক্ষিণ পাড়ার আবুল কাশেমের মেয়ে কুলসুম বিবিকে। এরপর উপশহর পার্ক এলাকার বস্তিতে স্ত্রী কুলসুমকে ওঠায়। এরপর ওই বাড়িতে রেখে নানাবিধ অত্যাচার নির্যাতন করে। দাবি করে মোটা অংকের যৌতুক। এ ঘটনায় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কুলসুম বাড়িতে পালিয়ে এসে তালাক দেন। এরপর শান্ত নতুন প্রতারণার আশ্রয় নেয়। যৌতুক আদায় করতে না পেরে সে নয়া ফন্দি আটে। ভুল হয়েছে, আর নির্যাতন করবে না বলে ফুঁসলিয়ে গত বছরের ২৯ নভেম্বর কুলসুমকে আবার বিয়ে করে। এরপর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি হাশিমপুর পূর্বপাড়ার বন্ধু অপর প্রতারক কবীরের সহায়তায় ওই গ্রামের রবিউল ইসলামের বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা শুরু করে।
স্বামী স্ত্রী হিসেবে ভাড়া থাকার সময় আবার যৌতুক দাবি করে নির্যাতন চালায়। এরপর কুলসুমের বাড়ি থেকে আনা স্বর্ণালংকার খুলে দিতে বলে। এ নিয়ে হত্যার হুমকিও দেয়। এক পর্যায়ে ২৫ জানুয়ারি সব স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে মারপিট করে তাকে ফেলে পালিয়ে যায় শান্ত। ওই স্বর্ণালংকারের মূল্য দেড় লাখ টাকা।
এদিকে, প্রতারক শান্তর বন্ধু কবীর ৩ দিন পরে এসে কুলসুমকে বাসা ছেড়ে দিতে বলে। এ ঘটনায় ও প্রতারণায় কবীরও জড়িত। কুলসুমের অসহায়ত্ব দেখে বাড়ি মালিক বাবা আবুল কাশেমকে ফোন করে মেয়েকে তুলে দেন। বাবার বাড়ি গিয়ে পুলিশের শরণাপন্ন হন কুলকুম বিবি। থানার এসআই সেকেন্দার আবু জাফর ওই অভিযোগ তদন্ত করছেন। তদন্তে পুলিশ কিসমত নওয়াপাড়ায় গেলে সঙ্গে থাকা কুলসুমের ভগ্নীপতিকে শান্তর মামা মানিক পুলিশের সামনেই হুমকি দেয়। মানিক জানায় সে অনেক হত্যা মামলার আসামি। পুলিশ কিছুই করতে পারবে না।
কান্না বিজড়িত কণ্ঠে কুলসুমের বাবা আবুল কাশেম জানান, একদম নাটকের মত তাকে প্রতারণায় ফেলা হয়েছে। শান্তর মামা প্রতারক মানিক ঘটক সেজে অন্যের জমি বাড়ি দেখিয়ে তার মেয়েকে ভাগ্নের বউ করে নিয়ে যায়। মূলত তাদের পুঁজি কানা কড়িও নেই। শান্ত, বাদশা আলম, মানিক, মুক্ত সবাই প্রতারক। আর এদের মধ্যে শান্ত ও মানিক সরাসরি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি তার মেয়ের উপর চলা নির্যাতনের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সেকেন্দার আবু জাফর জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। প্রতারক শান্ত ও তার মামাসহ চক্রকে আটক করা হবে। চিহ্নিত প্রতারক চক্রটি পুলিশের সামনে বাদী পক্ষের লোকজনকে হুমকি দিয়েছে এমন প্রমাণ মিলেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এসএস
মন্তব্য করুন