ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে মারধর করা হচ্ছিল পুরুষকে, শোনা যাচ্ছিলো নারীর কণ্ঠ! (ভিডিও)

নোয়াখালীর হাতিয়ায় অনৈতিক কাজের অপবাদে গৃহবধূসহ দুইজনকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করে। তবে পুলিশের দাবি, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায় একজন পুরুষকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হচ্ছে কোনও নারীকে নয়।

এদিকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাওয়া নির্যাতনের শিকার পুরুষ পল্লী চিকিৎসক মহী উদ্দিন বাদী হয়ে ১১ জনকে আসামি করে গদতাল রোববার রাতে হাতিয়া থানায় একটি মামলা করেন।

মহি উদ্দিন (৪০) হাতিয়ার দুই নম্বর চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের মো. আবুল খায়েরের ছেলে।

আরও পড়ুন : ফের নোয়াখালীতে ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ (ভিডিও)

এই মামলায় পাঁচজনকে আটক করেছে বলে সোমবার দুপুরে নোয়াখালী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। আটক পাঁচজন হলো জিয়া বাহিনী প্রকাশ জিহাদ, ফারুক হোসেন, আলমগীর মাঝি, আবু তাহের ও নবীর উদ্দিন। এদের সবার বাড়ি হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নে।

হাতিয়া উপজেলার চানন্দি ইউনিয়নের আদর্শগ্রামে নিজ ঘরে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। পরে ব্যর্থ হয়ে ওই গৃহবধূকে তার সন্তানদের সামনে বেদম মারধর করে স্থানীয় জিহাদ, ফারুক, এনায়েত, ভুট্টু মাঝি ও ফারুক। এমন অভিযোগ এনে ওই পাঁচজনকে আসামি করে গেলো পাঁচ জানুয়ারি জেলার নারী-শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল- ২ এ ধর্ষণ চেষ্টার একটি মামলা করে ওই গৃহবধূ। তবে মামলায় ঘটনাস্থল গৃহবধূর ঘর দেখানো হলেও গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ভুক্তভোগী নারী জানান, তাকে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের বাড়ির সামনে নির্যাতন করা হয়।

আরও পড়ুন : মা গিয়ে দেখেন জলিলের খাটের উপর শুয়ে আছে মেয়ে

এদিকে এ ঘটনার মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায়। ভিডিওটিতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি একজন লোককে নির্যাতন করে টেনে হেঁচড়ে একটি কক্ষে ঢুকিয়ে ফেলে এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। অপর একজন লাঠি দিয়ে ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করছে। এ সময় নারীর চিৎকারের কণ্ঠ শোনা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি নারীর বলে লেখা হয়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসলে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নে ছুটে যান নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওটিতে দেখা যায় একজন পুরুষকে নির্যাতন করছে কয়েকজন ছেলে।তবে ভিডিওতে একজন নারীর চিৎকারের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী থেকে অন্তত ৬০ কিলোমিটার দূরে ও হাতিয়ার উপজেলা সদর থেকে নদী পার হয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দুরে দুই নম্বর চানন্দী ইউনিয়নের এই আদর্শ গ্রাম। ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে নারীকে নির্যাতনের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এর যোগসূত্র জানতে ঘটনাস্থলে যায় গণমাধ্যমকর্মীরা।

আরও পড়ুন : প্রচার শেষে বাড়ি ফেরার পথে কাউন্সিলর প্রার্থীকে পালাক্রমে ধর্ষণ

কথা হয় নির্যাতিতা নারীর, ভিডিওতে দেখা যাওয়া ওই পুরুষ এবং স্থানীয়দের সঙ্গে। নানা রকমের বক্তব্য আসলেও ভিডিওর সঙ্গে একটা যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় অনুসন্ধানে।

স্থানীয়দের মতে, ওই গৃহবধূ এবং স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের মধ্যে একটি ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে।তারই জের ধরে গেলো ১ জানুয়ারি তাদের দুজনকে এক সঙ্গে পেয়ে মারধর করে স্থানীয় কিছু লোক। পরে দুইজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয়া হয়। কথা হয় দুই নম্বর চানন্দী ইউনিয়নের আদর্শ গ্রামের নুরুল ইসলাম হাজী নামে এক বয়স্ক লোকের সঙ্গে তিনি জানান, এই মহিলার সঙ্গে পল্লী চিকিৎসক মহি উদ্দিনের দীর্ঘদিন থেকে অনৈতিক সম্পর্ক চলে আসছে। এর আগেও তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সামাজিক শালিশ বৈঠক হয়।

আরও পড়ুন : ফাঁকা বাড়িতে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণচেষ্টা, অতঃপর…

গৃহবধূ ও পল্লী চিকিৎসককে মারধরের খবর পেয়ে পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে গৃহবধূকে চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠান। পরে ওই গৃহবধূ চিকিৎসা শেষে পাঁচ জানুয়ারি আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন হাতিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারকে।

জেবি