ভাসানচরে চার রোহিঙ্গা শিশুর জন্ম
ভাসানচরে প্রথম ধাপে আসা ১৬৪২ রোহিঙ্গাদের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম হয় ১০ ডিসেম্বর। ভাসানচরটি আমাদের কাছে স্বপ্নে পাওয়া এক স্বর্গরাজ্যের মতো। তাই তার দাদী মোমেনা বেগম আদর করে তার নাম দিয়েছে ভাসান আলী। কথাগুলো বলেন ভাসানচরে সর্ব প্রথম জন্ম নেওয়া শিশুর মা রাবেয়া বেগম (২৫)।
ভাসান আলী ভাসানচরের ৭নং ক্লাস্টারের ৬ নম্বর বাসার মো. কাশেম ও রাবেয়া দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। গত ১০ ডিসেম্বর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার জন্ম হয়। পয়লা জানুয়ারি তার বয়স ২২ দিন।
এর পরেই পর্যায়ক্রমে জন্ম নেয় আরো তিন শিশু। গত ১৪ ডিসেম্বর জন্ম নেয় দ্বিতীয় শিশু নাম রাখা হয় মনছুর। মনছুর ভাসানচরের ৮নং ক্লাস্টারের ৯নম্বর বাসার নবী হোসেন ও মিনুয়ারা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান।
গত ২০ ডিসেম্বর ভাসানচরে নির্মিত ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল-১ এ জন্ম নেয় তৃতীয় শিশু নাম দেওয়া হয় ভাসান নূর। ভাসান নূর ৯নং ক্লাস্টারের ১৫ নম্বর বাসার মো. আমিন ও সমুদা খাতুন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান। ভাসান নূরের বাবা মো. আমিন জানান, ভাসানচরের নামানুসারে তার ছেলের নাম দিয়েছে ভাসান নূর।
ভাসানচরের ১০ নং ক্লাস্টারের ১৩ নম্বর বাসায় ২২ ডিসেম্বর নিজ ঘরে জন্ম নেয় চতুর্থ শিশু। নাম দেওয়া হয় বিবি মরিয়ম। মরিয়ম ভাসানচরে প্রথম ধাপে আসা করিম উল্যা ও মিনোয়ারা বেগম রহিঙ্গা দম্পতির তৃতীয় সন্তান।
এদিকে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, অধিক মূল্যের এক্সরে মিশিন, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা, বিদেশ থেকে ক্রয় করা ইসিজি মিশিন, পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ৩২ প্রকারের ওষুধ সরবারহ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে ২০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি স্বয়ং সম্পূর্ণ হাসপাতাল।
হাসপাতাল দুটির দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে ভাসানচরের হাসপাতালের অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করছি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে দুটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বা যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে তাতে জটিল অপারেশন সফলতার সাথে করা যাবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারী ও সিজারের খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
এদিকে, গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২জন, দ্বিতীয় দফায় ২৯ ডিসেম্বর ১৮০৪ জন রোহিঙ্গা সদস্য ভাসানচর এসেছে। এর আগে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে সমুদ্র উপকূলে আটক আরও ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে সেখানে নিয়ে রাখা হয়। এ নিয়ে মোট ৩ হাজার ৭৫২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচর অবস্থান করছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে ৩ হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় সাড়ে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
পি
মন্তব্য করুন