‘কুতুপালং থেকে ভাসানচর অনেক ভালো’
আজ শনিবার সকালে মাথাব্যথা নিয়ে ভাসানচরের হাসপাতাল-১ এ চিকিৎসা নিতে আসেন মো. আনাস (৫৬) নামে একজন।
তিনি বসবাস করেন রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত ১৩ নং ক্লাস্টারের সাত নম্বর হাউজে। চিকিৎসা নিতে আসা আনাস হাসপাতালের উন্নত পরিবেশ দেখে অনেক খুশি।
আলাপকালে আনাস আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘কুতুপালং থেকে ভাসানচরের পরিবেশ অনেক ভালো। এখানে খোলামেলা পরিবেশ তাদের অনেক ভালো লাগে।’
অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার, অধিক মূল্যের এক্সরে মিশিন, ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সুবিধা, বিদেশ থেকে ক্রয় করা ইসিজি মেশিন, পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার, প্রয়োজনীয় লোকবল ও ৩২ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলো ২০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল। যা স্থাপন করা হয়েছে নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে গড়ে তোলা আবাসস্থল ভাসানচরে।
রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত হাসপাতাল-১ এর দায়িত্বে থাকা ওয়ার্ডবয় মিরাজ উদ্দিন জানান, গতকাল শুক্রবার দুইটার সময় ভাসানচর অবস্থান করার পর থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোহিঙ্গা তাদের স্বাভাবিক জ্বর ও সর্দি নিয়ে এই দুটি হাসপাতাল-১ এর জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
আনাসের মতো তিন নম্বর ক্লাস্টারের ১০ নম্বর হাউজে বসবাস করা জানিয়া (১৯), ২০ নম্বর ক্লাস্টারের ১০ নম্বর হাউজের মো. আলম (৪৫) ও ১৪ নম্বর ক্লাস্টারের ৭ নম্বর হাউজের জাহানারা (২৪) আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত রোগে নতুন এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।
হাসপাতাল দুটির দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডাক্তার মাহতাব উদ্দিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত রয়েছি। বর্তমানে ভাসানচরের হাসপাতালের অস্থায়ী দায়িত্ব পালন করছি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে দুটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে বা যেসব যন্ত্রপাতি বসানো হয়েছে তাতে জটিল অপারেশন সফলতার সঙ্গে করা যাবে। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি ও সিজারের খুব ভালো ব্যবস্থা রয়েছে এখানে।
২০ শয্যার এই দুটি হাসপাতালে সরকারি একজন, এনজিও এর দুইজনসহ তিনজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারী ছয়জনসহ বিভিন্ন পদে ১৪ জন দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান ভাসানচরের হাসপাতালের দায়িত্বরত অফিস সহকারী আকরাম হোসেন।
এছাড়াও রয়েছে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক যাতে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হবে প্রাথমিক চিকিৎসা। এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে তারা পাবে ৩০ প্রকারে ওষুধ।
এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার নাজিম উদ্দিন জানান, ভাসানচরে এই দুটি হাসপাতালের কার্যক্রম গতকাল শুক্রবার থেকে চালু করা হয়েছে। এখানে সরকারি ও এনজিওদের মেডিকেল অফিসারগন দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া যে চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে তাতে অছিরেই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
গতকাল শুক্রবার সকালে নৌ-বাহিনীর তিনটি জাহাজে চট্টগ্রাম থেকে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গার একটি দল ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়ে দুপুরে এসে পৌঁছায় তারা। প্রথম ধাপে নারী-পুরুষ, শিশুসহ ১৬৪২ জন রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে শিশু রয়েছে ৮১০ জন, পুরুষ ৩৬৮ জন, নারী ৪৬৪ জন।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ভাসানচরে আসা সকল রোহিঙ্গাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। তারপর ওয়ার হাউজে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা রোহিঙ্গাদের ব্রিফিং করেন। ব্রিফিং শেষে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রস্তুত রাখা ৭, ৮, ৯, ১০, ১৪ ও ২০ নম্বর ক্লাস্টারে তাদেরকে রাখা হয়।
জেবি/পি
মন্তব্য করুন