চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা ক্ষেতে আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ
যতদূর চোখ যায় শুধুই ভুট্টার সবুজ ক্ষেত। প্রতিবারের মতো এবারও চুয়াডাঙ্গায় উল্লেখযোগ্য ভুট্টার আবাদ করেছেন কৃষকরা। তবে গেল বছরগুলোর তুলনায় এবার ব্যাপক হারে বিধ্বংসী পোকা ফল আর্মিওয়ার্মের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুট্টা চাষিরা।
পোকার আক্রমণ থেকে কষ্টের ফসলকে রক্ষা করতে কৃষি বিভাগের কাছে ছুটছেন কৃষকরা। বিশেষজ্ঞরা এ আক্রমণকে ব্যাপক বলে আখ্যা দিলেও স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে সহনীয় ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার চার উপজেলায় ৪১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন কৃষকরা।
২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম চুয়াডাঙ্গা জেলার কয়েকটি এলাকায় ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে এই পোকা এসেছে বলে মনে করেছে কৃষি বিভাগ।
এ বছর আক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। এদিকে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ ঠেকাতে একটু আগেভাগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র (সিমিট)।
বিধ্বংসী পোকার আক্রমণ রোধ ও ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে গত বছরের মতো এবারও মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চুয়াডাঙ্গার একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে ওই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক পার্থ প্রতিম সাহা।
৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণে দুটি ব্যাচে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৫ জন নারী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন। মূলত আক্রান্ত এলাকার কৃষকদের সচেতন করতেই ওই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্রের কনসালটেন্ট প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ ড. সৈয়দ নুরুল আলম জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বরে প্রথম চুয়াডাঙ্গা জেলার কয়েকটি এলাকায় ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের নজরে আসলে গত বছর প্রথম চুয়াডাঙ্গায় স্থানীয় কৃষক ও বিভাগীয় কৃষি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র সিমিট। এবারও গেল ২২ নভেম্বর নারী কৃষি কর্মকর্তাদের ৪ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান লাভের পাশাপাশি সদর উপজেলার হাজরাহাটির মাঠে গিয়ে সরাসরি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন প্রশিক্ষণার্থীরা।
বুধবার (২ ডিসেম্বর) শেষ হবে প্রশিক্ষণের কার্যক্রম। প্রশিক্ষণার্থীরা শ্রেণীকক্ষে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান লাভের পাশাপাশি সদর উপজেলার হাজরাহাটির মাঠে গিয়ে সরাসরি ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।
মাঠে প্রশিক্ষণ নেয়ার সময় কথা হয় মেহেরপুর সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চায়না পারভিন ও কুমিল্লার দাউদকান্দির উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুমনা আক্তার স্মৃতির সাথে। তারা জানান, ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না। প্রশিক্ষণে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পেয়েছেন তারা।প্রশিক্ষণের পর নিজ নিজ এলাকার কৃষকদের ওই পোকার বংশবিস্তার ও দমন সম্পর্কে ধারণা দেবেন কৃষি কর্মকর্তারা। ভুট্টার উৎপাদন বাড়াতে প্রশিক্ষণটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আলী হাসান জানান,গত কয়েক বছর থেকে ভুট্টা ক্ষেতে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। বিগত কয়েক বছর থেকে ভুট্টা আবাদে দেশের শীর্ষে অবস্থান করছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। এবারও ভুট্টা আবাদে দেশের শীর্ষ অবস্থানে থাকবে এই জেলা।
তিনি আরও জানান, শীতে তাপমাত্রা কমে গেলে ফল আর্মিওয়ার্ম পোকার আক্রমণ তুলনামূলক হারে কমে যাবে। চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র ও কৃষি বিভাগ যৌথভাবে ফল আর্মিওয়ার্ম দমনে কাজ করে যাচ্ছে।
জিএম/জিএ
মন্তব্য করুন